শঙ্কর
প্র: এর আগেও আপনি ‘সা রে গা মা পা’র বিচারক হয়েছেন। এই মঞ্চের প্রতি আপনার আকর্ষণের কারণ কী?
উ: রিয়্যালিটি মিউজ়িক শোয়ের ট্রেন্ড শুরুই হয়েছে ‘সা রে গা মা পা’র হাত ধরে। আমি তিন বার এই শোয়ের বিচারক হয়েছি। কিন্তু এই মঞ্চের সঙ্গে আমার সম্পর্ক একেবারে শুরুর দিন থেকে। তখন সোনু (নিগম) সঞ্চালক ছিল। শোয়ের জন্য গান কম্পোজ় করেছিলাম। এই মঞ্চ থেকে অনেক নতুন প্রতিভা উঠে এসেছে।
প্র: ছোটদের রিয়্যালিটি শোয়েরও বিচারক হয়েছেন। কখনও মনে হয়েছে, বাচ্চাদের উপরে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করা হচ্ছে?
উ: সে ক্ষেত্রে আমি ওই শোয়ের সঙ্গে যুক্তই হব না। কিছু দিন আগে অন্য একটি চ্যানেলে ছোটদের শোয়ের বিচারক ছিলাম। সেখানেও প্রথম হওয়া, জিততেই হবে... এ সব ছিল না। রিয়্যালিটি শো হল, প্রতিভা তুলে ধরার একটা মাধ্যম। ওরা এখানে নিজেদের যোগ্যতা পরখ করতে পারে। প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া মানে, কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়া নয়। অনেক সময়ে বাবা-মায়েরা সন্তানের উপরে চাপ তৈরি করেন— পড়াশোনা, খেলাধুলো সব ক্ষেত্রেই। কারণ, তাঁরা নিজেদের স্বপ্ন বাচ্চাদের উপরে চাপিয়ে দেন। ছোটদের নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দিতে হবে। ওদের উৎসাহ দিন, প্রত্যাশাপূরণের যন্ত্র বানাবেন না।
প্র: অতিমারি মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রির কতটা ক্ষতি করল?
উ: অসম্ভব বেশি। বিভিন্ন ফান্ড রেজ়িং অনুষ্ঠানের জন্য সকলে সঙ্গীতশিল্পীদের দ্বারস্থ হন। ক্যানসার সচেতনতা, বন্যার ত্রাণ... আমরা শিল্পীরা কম টাকায় সেই সব অনুষ্ঠান করেছি। এখন মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রি বিপন্ন, কিন্তু পাশে কেউ নেই। সহযোগী শিল্পী, লোকশিল্পীরা ভীষণ অসহায়। আমরা সাহায্যের চেষ্টা করছি, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেটা খুব কম।
প্র: আপনি নিজেও তো করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন?
উ: হ্যাঁ, আমার সেকেন্ড ডোজ়ের ১৫ দিন পরে কোভিড হল। তবে শরীর বেশি খারাপ হয়নি। ব্যক্তিগত ভাবে লকডাউন পর্ব খুব ভাল কাটিয়েছি। নিজের সৃষ্টির জন্য অনেকটা সময় পেলাম। পরিবারকে সময় দিতে পারলাম।
প্র: শ্রোতাদের অভিযোগ, এখনকার গান আর দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
উ: খুব একটা ভুল অভিযোগ নয়। সিনেমার পাশাপাশি সঙ্গীতের দুনিয়াতেও পরিবর্তন এসেছে। তবে কম হলেও, ভাল গান তৈরি হচ্ছে। আসলে একটা স্পর্শকাতর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যিনি সঙ্গীত সৃষ্টি করেন, আর যিনি সিদ্ধান্ত নেন— তাঁরা আলাদা ব্যক্তি। মিউজ়িক কোম্পানি এখন সব নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের হাতেই টাকা-ক্ষমতা। সিনেমার গানের ক্ষেত্রে সুরকারেরা এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সঙ্গীত পরিচালককে অনেক সময়েই ফরমায়েশি কাজ করতে হয়। ‘বাজারে এটা চলবে, এটাই বানাও’— কোন গান মানুষ শুনবেন, সেটাও কোম্পানিই ঠিক করে। ভাল মিউজ়িক প্রোমোট না করলে, তা জনগণের কাছে পৌঁছবে কী করে? তবে সুরকারকে স্বাধীনতা দেয়, এমন সংস্থাও আছে।
প্র: সঙ্গীতের দুনিয়ায় শঙ্কর-এহসান-লয় বড় নাম। কী ভাবে এতদিন ধরে ঐক্য বজায় রেখে আপনারা কাজ করছেন?
উ: আমরা তিনজনেই সঙ্গীতের আদর্শে উদ্বুদ্ধ। কিন্তু একে অপরের চেয়ে আলাদা। সেটাই আমাদের বেঁধে রেখেছে। আমাদের ভাবনাচিন্তা এক রকমের হলে, হয়তো টিম চালাতে পারতাম না। বৈচিত্রই আসত না। টিমের অন্যদের মতামতকে আমরা শ্রদ্ধা করি।
প্র: কলকাতা নিয়ে বিশেষ কোনও স্মৃতি আছে?
উ: কলকাতা হল সঙ্গীত, সংস্কৃতি, খাবারের পীঠস্থান। রিয়্যালিটি শোয়ের তিনজনের মধ্যে একজন অন্তত বাঙালি হবেই। আমার তো মনে হয়, কলকাতার রাস্তায় যে কোনও লোককে গান শোনাতে বললে, সে সুরেই গাইবে। আপনারা যে সরষের তেলটা খান, মনে হয় ওটার মধ্যেই কিছু একটা আছে (হাসি)!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy