গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়িকা তিনি। শাকিব খানের প্রাক্তন, না কি বর্তমান স্ত্রী— সেই নিয়ে বিস্তর জল্পনা রয়েছে। কলকাতায় যাতায়াত বেড়েছে। সিনেমার সংখ্যা কমলেও, অপু বিশ্বাস গত এক বছরে নিজের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। বিজ্ঞাপন থেকে ফোটোশুট, সবেতেই আরও বেশি বেশি করে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। যদিও গত কয়েক মাসে বেশ কিছু বিতর্কেও জড়িয়েছেন তিনি। কেন্দ্রে রয়েছেন অন্য এক নায়িকা বুবলি। বেশ কিছু দিন আগেই বুবলি প্রসঙ্গে অপু নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে জানান, তিনি বুবলিকে ঘৃণা করেন। তার পরই বুবলি প্রসঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী তাপসের স্ত্রী ফারজানা মু্ন্নির সঙ্গে তাঁর কথোপকথন নেটাপড়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এ দিকে শাকিবের দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে যখন নিজের ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন, সেই সময় শাকিবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নাকি উন্নতির দিকে। তা হলে কি দিন দিন সাহসী হয়ে উঠছেন অপু? রাখঢাক নয়, সোজা কথা সোজাসুজি বলতে পারছেন তিনি? শাকিবের সঙ্গে সম্পর্ক এখন কোন খাতে? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের মুখে অপু বিশ্বাস।
প্রশ্ন: পুজো কেমন কাটল এ বছর?
অপু: আসলে পুজো প্রতি বছর ভাল কাটে। ওই চারটে দিন ফোনও ধরি না অনেক সময়। খুব আনন্দ করি। এখন ছেলে বড় হচ্ছে, ঢাকের আওয়াজ ওর ভারী পছন্দ।
প্রশ্ন: অপু বিশ্বাসের কলকাতায় যাতায়াত কি দিন দিন বাড়ছে?
অপু: (হাসি) হ্যাঁ, কাজের সূত্রে আসা-যাওয়া হচ্ছে। এ বার কিছু ব্র্যান্ডের কাজে এসেছি।
প্রশ্ন: এখানে তো একাধিক বাংলাদেশের শিল্পী কাজ করছেন। আসা-যাওয়ার মাঝে কলকাতার প্রযোজনা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আপনার কতটা আলাপ-পরিচয় হল?
অপু: বেশ কিছু প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু এখনই কিছু বলতে পারছি না। কারণ, কাজে গোপনীয়তা রাখলে তবেই সেটা পরে ভাল ভাবে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা যায়।
প্রশ্ন: কলকাতা এলে বাড়ির লোকদের জন্য কী নিয়ে যান?
অপু: আসলে আমি এখানে এলেই ছেলে বইয়ের নাম বলে দেয়, সেগুলো নিয়ে যাই। তা ছাড়া ও কিছু চাওয়ার আগে দিয়ে দিই। তবে যে হেতু জয়ের জন্ম কলকাতায়, তাই এখানে এলে ওর কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ এখান থেকে নিয়ে যাই। সারা ক্ষণ খুঁতখুতানি কাজ করে। মনে হয়, এখানকার ওষুধই হয়তো ওঁর জন্য উপযোগী।
প্রশ্ন: আপনি তো বরাবরই গুছিয়ে কথা বলেন। তবে আজকাল কি একটু মাথাগরম করে ফেলছেন?
অপু: কোন বিষয়টা নিয়ে বলছেন?
প্রশ্ন: সম্প্রতি আপনি বুবলিকে নিয়ে একটি মন্তব্য করেন জানান, আপনি তাঁকে ঘৃণা করেন। হঠাৎ এমন সরাসরি আক্রমণ করলেন?
অপু: (জোর হাসি) আমি আসলে এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমি এক জন তারকা এবং পাবলিক ফিগার। এক জন হিন্দু বাড়ির মেয়ে। আমার মা এখন আর নেই। তবে, কিছু জিনিস শিখিয়ে গিয়েছেন আমাকে। সেটা আমি মেনে চলি। কিছু সীমারেখা থাকে। সেটাকে অতিক্রম করা উচিত নয়। আর যে মানুষকে নিয়ে কথা উঠল। কলকাতায় আমার কাজের জায়গা। সেখানে বসে এ সব নিয়ে মন্তব্য করলে অলক্ষ্মী হতে পারে। তাই কোনও মন্তব্য করব না।
প্রশ্ন: এ ক’বছরে আপনার ও শাকিবের সমীকরণ বিভিন্ন সময় বদলেছে। সম্প্রতি একসঙ্গে আমেরিকা ঘুরে এলেন তো...।
অপু: আমি চাই না, আমার সন্তান কোনও ভাঙা পরিবারে বেড়ে উঠুক। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে ভীষণ সচেতন। যে কোনও সন্তানের কাছে পরিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা হিসাবে সন্তানকে একটা সুনিশ্চিত জীবন দেওয়া আমাদের কর্তব্য। আমার মনে হয়, পরিবারের অশান্তিগুলো আমাদের মধ্যেই থাকা উচিত। সন্তানকে যাতে কোনও অশান্তি ছুঁতে না পারে। এই জিনিসটা জয় কখনও বুঝতেই পারে না। কারণ আমি, আমার শ্বশুর-শাশুড়ি, শাকিব সকলেই ভীষণ সচেতন। আমার ছেলের কাছে বিষয়টা— আমার মা কাজ করে, আমার বাবা কাজ করে। ব্যস্ত বলে দূরত্ব রয়েছে। কিন্তু ‘ব্রোকেন’ শব্দটার সঙ্গে ও পরিচিত নয়।
প্রশ্ন: আপনার তাগিদই কি বেশি?
অপু: না, শুধু আমি নয়। জয়ের বাবাও চান না। এ দিক থেকে জয় খুব ভাগ্যবান। শাকিবের মতো বাবা পেয়েছে। আমার একার ইচ্ছায় তো কোনও কিছু সম্ভব নয়। ওঁর বাবা নিজের সন্তানের প্রতি খুব স্বচ্ছ। তাই আমার ছেলের কখনও মনে হয় না যে, ‘ব্রোকেন ফ্যামিলি’।
প্রশ্ন: সম্পর্কে না থেকেও সন্তানের যৌথ অভিভাবকত্ব টলিউডে-বলিউডে আকছার হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কি আপনি ও শাকিব খানই দিশা দেখালেন?
অপু: বাংলাদেশে এই অপু বিশ্বাসই প্রথম, যে বুঝিয়ে দিয়েছে নায়িকাদের সন্তান হওয়ার পরও ভাল কেরিয়ার হওয়া সম্ভব। একটা সময় বাংলাদেশে নায়িকাদের এমন ধারণা ছিল, মা হয়েছি বলব না, আমার সন্তান আছে বলব না, আমি বিবাহিত বলব না। কিন্তু আমার মনে হয়, সত্যিটা লুকিয়ে রাখা যায় না। অপু বিশ্বাস সেই চলতি ধারণা ভেঙেছে। মা হয়েছি, সকলকে জানিয়েছি। সন্তান হওয়ার পর অনেক ধরনের শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে চিন্তা থাকে। আমি অবশ্য নিজেকে বদলেছি। মাতৃত্বকে উদ্যাপন করেছি।
প্রশ্ন: কখনও দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভেবেছেন?
অপু: না, কখনও ভাবিনি। দ্বিতীয় বিয়ের দরকারটা কি? বাংলাদেশে আমার এমন একটা জায়গা রয়েছে, যেখানে সকলে ভাবেন অপু যা-ই করবেন তার মধ্যে একটা বার্তা থাকবে। সেই দিক থেকে দর্শকের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। একটা মেয়ে, যার সন্তান আছে সে কেন দ্বিতীয় বিয়ে করবে? দ্বিতীয় বিয়েতে সে হয়তো স্বামী পাবে, তাঁর সামাজিক পরিচিতি পাবে। কিন্তু সন্তানটা? সে কি এক জন সৎবাবা পাবে! সন্তানের প্রতি ওই বাবা যে সমান ভালবাসা দেবে, তা তো নয়। তাই আমি মনে করি, দ্বিতীয় বিয়েই করব না! তা হলে সন্তান তাঁর নিজের বাবাকেই পাবে, অন্য কাউকে বাবা বলতে হবে না। তাই যে কোনও এক জনকে আত্মত্যাগ করতেই হয়, তাতে ভুল কিছু নেই। মা হিসাবে আত্মত্যাগ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: কিন্তু শাকিব যে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন?
অপু: কী বললেন, দ্বিতীয় বিয়ে? (জোর হাসি)। এ বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেব না।
প্রশ্ন: তা হলে সন্তানের কারণে আত্মত্যাগটা আপনিই করলেন?
অপু: আমি একা কেন করব? আর যা-ই করেছি নিজের ইচ্ছায় করেছি। সব কিছুই যে উত্তর দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে তেমনটা নয়। কিছু জিনিসের উত্তর সময় দেয়।
প্রশ্ন: এই যে শাকিব ও আপনি এতটা সময় বাইরে কাটিয়ে এলেন, জীবনে নতুন কোনও পরিবর্তন এল?
অপু: আমি না ভীষণ বাস্তববাদী মানুষ। আমি না একদম আলাদা। সদা পজ়িটিভ। আমি অত আবেগ, অনুভূতি নিয়ে মাথাই ঘামাই না। স্বল্প সময় মানুষের বেঁচে থাকা। সেখানে কাজের বিকল্প নেই।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে অবসাদ এমন একটা শব্দ যা এক এক মানুষের জীবনে এক এক রকম অর্থ বহন করে। আপনি কখনও অবসাদগ্রস্ত হয়েছেন?
অপু: কেন আমার অবসাদ হবে! আমার সকাল শুরু হয় কাজের মধ্যে, রাত শেষ করি কাজে। মাঝে যতটুকু সময় পাই সন্তানকে নিয়ে কেটে যায়। আমি মনে করি, যদি কাউকে ভালবাসি, আমাদের যদি সমস্যা হয়, একে অপরের সঙ্গে থাকতে না পারি, সম্পর্কটা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আমি তো মরে যাব না। আমার জন্য তো দুনিয়াটা খোলা। আমি আমার মতো করে ভাল থাকব। অবসাদের জায়গা নেই।
প্রশ্ন: এতটা পজ়িটিভ থাকেন কী ভাবে?
অপু: নিজের বাস্তবটা জানতে হবে। কারণ, সিনেমা মানুষকে আনন্দ দেয়। সিনেমা বাস্তব নয়। আবেগ একটা ভাসমান বস্তু যার স্থায়িত্ব খুব কম।
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছিল বাংলাদেশের নির্বাচনে আপনি দাঁড়াবেন। হঠাৎ মত বদল কেন?
অপু: আমি গত বছর সংরক্ষিত মহিলা আসন নিয়েছিলাম বগুড়া থেকে। কারণ, আমি সেখানকার মেয়ে। আমি মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগ করি, এটাই আমার বিশ্বাস। তবে এ বছরের মতো সুযোগ নেই আর।
প্রশ্ন: তা হলে আগামী দিনে রাজনীতিতে আসবেন?
অপু: আসলে আমি যখন যে কাজটা করি, মন দিয়ে করি। অন্য কাউকে আমার জায়গায় ঢুকতে দিই না। ২০০৭-এ আমি শুরু করি। ২০০৯ থেকে ২০১৫ অবধি কোনও নায়িকাকে ঢুকতে দিইনি। ১২ মাসে ২৪টা শুটিং করেছি। আমি যখন যেটা করি, সেখানে আমি অন্য কাউকে খুব বেশি কিছু করতে দিই না। এটা আমার যোগ্যতা। ওই সময়ে বাংলাদেশে আর কোনও নায়িকাকে দেখা যায়নি যে, আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে। তার পর আমি মা হই। সেই সময় অনেক ওজন বেড়ে যায়। গত দু’বছর ধরে ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ, ওপেনিং, ফোটোশুট নানা ধরনের কাজ করছি। সেই জায়গায় এখন আর কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না। অনেকে অবশ্য অসাধু উপায়ে আমার সমালোচনা করে। তাতে আমি পাত্তা দিই না।
প্রশ্ন: ওপেনিংয়ের কাজকে নাকি বাংলাদেশে ‘ফিতা কাটা’ বলে হেয় করা হয়?
অপু: হ্যাঁ, অনেকে এটা বলেন। তবে আমি এই ‘ফিতা কাটা’র বিনিময়ে ভাল একটা পারিশ্রমিক পাই। এটা আমার কাজ। সেটা করি। আর সমালোচকদের ধন্যবাদ জানাব। তাঁরা যত সমালোচনা করবেন, ততই আমার কাজ দর্শকের কাছে পৌঁছবে। সমালোচকরা না থাকলে আমার কাজের জায়গাটাই এত বিস্তৃত হত না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে নায়িকারা বেশ চর্চিত হয়েছেন। কখনও ভাইরাল ভিডিয়োর কারণে, কখনও বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে। গোপনীয়তার আগল একেবারেই কি নেই সেখানে?
অপু: আসলে যাঁদের নাম উঠে এসেছে, তাঁদের মধ্যে হয়তো লোভ কাজ করেছে। তাঁরা নিজেদের কাজের দিকটায় খুব বেশি গুরুত্ব দেননি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে একটা পরিবর্তন এসেছে যে ‘আমাকে পেতে হবে’। সেটাই হয়তো একটা বড় কারণ।
প্রশ্ন: পরীমণির সঙ্গে আপনার প্রায় পারিবারিক সম্পর্ক। রাজের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দিদি হয়ে কোনও উপদেশ দিয়েছেন?
অপু: আমি ও শাকিব কেউই চাই না সংসার ভাঙতে। কিন্তু পরীর ক্ষেত্রে ও যতটা সাপোর্ট দেয়, রাজকেও ততটা এগিয়ে আসতে হবে, তাই না? যদিও এটা একেবারেই ওদের ব্যক্তিগত জীবন। বড় বোন হিসাবে বলি, ও খুব ভাল মনের মানুষ, স্মার্ট মেয়ে ও বাস্তববাদী এবং সহজ-সরল।
প্রশ্ন: শাকিব এখন পর পর অন্য দেশের অভিনেত্রীদের সঙ্গে ছবি করছেন। বিতর্ক থেকে দূরে থাকতেই কি বাংলাদেশের অভিনেত্রীর সঙ্গে দূরত্ব?
অপু: এই চিন্তা নিয়ে কেউ কাজ করে না। ও যে সিনেমাগুলো করছে, সেখানে অন্য দেশের নায়িকার চাহিদা রয়েছে। তাই এখন সেটাই করছে।
প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে কি কখনও আবার এক ছবিতে দেখা যাবে?
অপু: এখনই বলতে পারছি না। সময়ের উপর ছেড়ে দিলাম।
প্রশ্ন: আপনাদের বাস্তব জীবনের সমীকরণ কোন দিকে এগোচ্ছে? মাস কয়েক আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, সময় এলে জানাবেন। সময় কি এগিয়ে আসছে?
অপু: সময় এলে কারও জন্য বসে থাকবে না। দেখুন না কী হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy