Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Anurag Kashyap

দেশভক্তির আবেগ বিক্রি করা সোজা

কলকাতায় এসে আনন্দ প্লাসের সামনে ‘মন কী বাত’ ভাগ করে নিলেন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ।

অনুরাগ।

অনুরাগ।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

তিনি সারাক্ষণ টুইটারে অ্যাক্টিভ। এনআরসি এবং সিএএ বিরোধিতায় যে ক’জন সেলেব্রিটি সরব হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ অন্যতম। দমদম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শহরে এসেছিলেন পরিচালক। হোটেলের রুমে বিরিয়ানির গন্ধ তখন ম-ম করছে...

প্র: আপনি কি খাদ্যরসিক?

উ: অ্যাই অ্যাম আ বিগ ফুডি। দেখুন না (খাবারের প্যাকেটের দিকে ইঙ্গিত করে), আপনাদের এখানকার রয়্যালের ফেমাস বিরিয়ানি এসে গিয়েছে। আমার বন্ধুরা সন্দেশ, রসগোল্লা নিয়ে এসেছেন।

প্র: এর আগের বার এই অনুষ্ঠানে কঙ্গনা রানাউত এসেছিলেন। এ বার আপনি। এক বছরে পরিস্থিতি এতটাই বদলে গিয়েছে...

উ: ওহ তাই! আমি জানতাম না। কী আর করা যাবে। কঙ্গনা ইজ় বিয়িং কঙ্গনা (হাসি)! আপনাদের এখানে অনেক প্রতিবাদ হচ্ছে, না?

প্র: হ্যাঁ। পার্ক সার্কাসে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদী জমায়েত চলছে। মিছিল তো হচ্ছেই।

উ: এটা ভাল যে, মানুষ আর চুপ করে থাকছে না। সরাসরি কথা বলছে, রাস্তায় নামছে। আমিও তো মুম্বইবাগে গিয়েছিলাম।

প্র: টুইটারে আপনি ভীষণ অ্যাক্টিভ। কিন্তু এক সময়ে হুমকি (তাঁর মেয়েকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল) পেয়ে টুইটার ছেড়েছিলেন। ভয়ের কারণ তো এখনও রয়েছে?

উ: পরিবারের উপরে জিনিসটা চলে এলে চিন্তা হয়। আমি টুইটার ছেড়েছিলাম পরিবারের কথা ভেবেই। কিন্তু কী আর করা যাবে। যা পরিস্থিতি, তাতে চুপ থাকা সম্ভব নয়। ভয়ের কারণ এখনও রয়েছে। কিন্তু সব কিছু এড়িয়ে যাওয়া যায় না। চোখ-কান-মাথা বন্ধ করে তো বসে থাকতে পারি না। জবরদস্তি মেরুকরণের চেষ্টা চলছে।

প্র: মেরুকরণের রাজনীতি তো বলিউডেও চলছে। কিছু ব্যক্তি প্রতিবাদ করছেন, বাকিরা চুপ।

উ: সাইলেন্স মানেই যে প্রতিবাদ করছেন না, তা নয়। চুপ করে থাকাটা সমস্যা নয়। তাঁদের চুপ থাকার একাধিক কারণ থাকতে পারে। প্রতিবাদ করা বা না করাটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এর মানে এই নয় যে, তাঁদের কোনও পয়েন্ট অব ভিউ নেই। সাইলেন্স অলসো স্পিকস। মুখ খুললে তাঁদের অনভিপ্রেত কিছু সহ্য করতে হতে পারে।

প্র: অসহিষ্ণুতা বিতর্কের পরে শাহরুখ খানকে যেমন সহ্য করতে হয়েছিল?

উ: হ্যাঁ। তখন তো সকলে রে রে করে উঠেছিল!

প্র: কিন্তু চুপ করে থাকার কারণে আপনি তো খানিকটা ব্যঙ্গ করেই অমিতাভ বচ্চনকে টুইট করেছিলেন।

উ: (কাঁধ ঝাঁকিয়ে জবাব এড়িয়ে গেলেন। হয়তো ঠোঁটের কোণে খানিক ব্যঙ্গও ছিল। সামনের টিভিতে দিল্লি ইলেকশনের খবর চলছে...) আমার ভাল লাগে আপনাদের টেলিগ্রাফের ফ্রন্ট পেজের হেডিং। সোজা, সপাট। ই-পেপার খুলে দেখি। মেরা দিন বন যাতা হ্যায়। আচ্ছা, বাংলায় কি বিজেপি খুব স্ট্রং?

প্র: আগের চেয়ে অনেকটাই আসন বাড়িয়েছে।

উ: ওরা আনএডুকেটেড লোকজনকে টার্গেট করে। দে র‌্যাডিকালাইজ় পিপল। এই দিল্লি নির্বাচনের আগেই কত রকম কাণ্ড ঘটাচ্ছে। জানে হারবে, তাই এ সব করছে।

প্র: ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদের পরিকল্পনা আছে?

উ: না। এই মুহূর্তে সকলে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে। এর চেয়ে জোরালো তো আর কিছু হতে পারে না। আর এই বিষয় নিয়ে ছবি বানালে সেটা প্রোপাগান্ডা মনে হতে পারে। পক্ষে বা বিপক্ষে, যা-ই হোক না কেন।

প্র: প্রোপাগান্ডা ছবি তো বলিউডে তৈরি হচ্ছে। জনপ্রিয়ও হচ্ছে।

উ: ওগুলো চিরকাল তৈরি হয়েছে আর হবেও। দেশভক্তির আবেগ বিক্রি হয় তো। আর এটা বিক্রি করাও সোজা।

প্র: একটা সময়ে আজ়াদি আর দেশভক্তি সমার্থক ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৭২ বছর পরে দুটো শব্দের মানে বদলে গিয়েছে কি?

উ: আমার কাছে বদলায়নি। এই মোদী সরকার সেটা বদলানোর চেষ্টা করছে। এগুলো করে লোকজনকে লড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

প্র: এই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

উ: ভালর চেয়ে মন্দই বেশি মনে হচ্ছে। যাবতীয় গোলমালের মূলে এই ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ। এখানে জনমত ম্যানিপুলেট করা হচ্ছে। নিজস্ব আইটি সেল তৈরি করে ফেলেছে সব দলগুলো। কত ডেটা লিক হয়ে যাচ্ছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্য দিয়ে। একটি তথ্যচিত্রে খুব স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে, মানুষ কী ভালবাসে, কী পছন্দ করে না... এ সব তথ্য কী ভাবে অন্যের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে।

প্র: দীপিকা পাড়ুকোনের জেএনইউ যাওয়ার প্রভাব কি ‘ছপাক’-এর বক্স অফিসে পড়ল?

উ: আমার তা মনে হয় না। আমি ‘ছপাক’ দেখেছি। খুব ভাল ছবি। অনেকের কাছে অস্বস্তিকর হতে পারে দীপিকার বিকৃত মুখ। তবে টুইটারের #বয়কটদীপিকা হুজুগের প্রভাব এতে পড়েছে বলে বিশ্বাস করি না। ক’টা লোক আছে টুইটারে? গোটা দেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ বড়জোর। যে কারণে দীপিকার ছবিটা চলেনি, ঠিক তার উল্টো কারণে কিন্তু কঙ্গনার ‘পঙ্গা’ চলা উচিত ছিল। সেটা তো হয়নি। ছবি নিজের জোরে চলে।

প্র: ‘তানাজি’ ভাল ব্যবসা করেছে। সেখানে আবার হিন্দুত্বের জয়গান।

উ: ‘তানাজি’ চলার বড় কারণ ছবিটা স্পেক্ট্যাকুলার। এগুলো বড় পর্দায় দেখতে ভালই লাগে।

প্র: ‘সেক্রেড গেমস থ্রি’র পরিকল্পনা নেই?

উ: এর জবাব বিক্রমাদিত্য (মোতওয়ানে) দিতে পারবে। ও-ই তো শো রানার।

প্র: সেকেন্ড সিজ়ন কিন্তু ততটা জনপ্রিয় হয়নি...

উ: হ্যাঁ। অনেকের খুব অস্বস্তি হয়েছিল। তবে আমি খুব খুশি। সেকেন্ড সিজ়নের গল্প যে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে, তখন ভাবিনি (হাসি)।

অন্য বিষয়গুলি:

Anurag Kashyap Tanhaji Sacred Games
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE