প্রতীক সেন। —ফাইল চিত্র।
কপালে চন্দনের সাজ। পুরোদস্তুর বর তিনি। প্রতীক সেন। পছন্দ করেন ট্রোলড হতে। কবিতা লেখা থেকে বিয়ে আর প্রেম নিয়ে তিনি অকপট আনন্দবাজার ডিজিটালের সামনে।
প্রশ্ন:আপনার বিয়ের কার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল!
প্রতীক: (হেসে) আমার ফ্যানেরাই তৈরি করেছে।তবে ওই কার্ড মোহর আর শঙ্খের বিয়ের। আমার না।
প্রশ্ন:মানুষ তো শঙ্খ ছাড়া আর কাউকে চেনে না?
প্রতীক: আমি প্রতীক যে শঙ্খের চরিত্র করছে।
প্রশ্ন: কিন্তু সূত্র বলছে, ইন্দোর থেকে ইন্দোনেশিয়া— সবাই প্রতীক আর সোনামণির বিয়ে নিয়ে জানতে চাইছে...
প্রতীক: দেখুন একসঙ্গে ধারাবাহিকের জুটি হলে এটা হয়। আগেও তৃণা সাহার সঙ্গে যখন কাজ করেছি লোকে ওর সঙ্গে বাস্তবে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছে। এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাই না। তখন আমার প্রিয় ‘ইকনমিক টাইমস্’ পড়ি।
আরও পড়ুন: সেলিব্রেশন হবে সৌরভের জন্মদিনে, আজ বিয়ের জন্মদিনে শুধু আমরা দু’জন: জুন মাল্য
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে এমনও শোনা গিয়েছে সোনামণির, ডিভোর্স হচ্ছে আপনার জন্য।
প্রতীক: বললাম যে এগুলো ট্রোলিং। সোনামণিকে জড়িয়ে ট্রোলের শিকার হয়েছি। তবে সবাই কমবেশি ট্রোলিংয়ের শিকার। তবে সত্যি কথা বলতে আমার ট্রোলড হতে, অন্যের ট্রোলিং দেখতে মজাই লাগে। মানুষ শৈল্পিক বিকৃতির রাস্তায় নেমে ট্রোল করছে। ভাল তো। যারা বিখ্যাত তারাই ট্রোলড হয়। রিঅ্যাক্ট কেন করব বলুন তো?এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি?
প্রশ্ন: বলুন না...
প্রতীক: লীনা গঙ্গোপাধ্যায় শঙ্খের চরিত্র যখন ব্রিফ করলেন তখন বলেছিলেন শঙ্খ ইন্ট্রোভার্ট। ভেতরটাকে সামনে আনে না।
প্রশ্ন: মানে আপনার মতো?
প্রতীক: কিছুটা।
প্রশ্ন: আপনি তো পার্টি করেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ নন। আপনি নাকি খুব অহঙ্কারী?
প্রতীক: পার্টিতে যাওয়ার চেয়ে সারাদিন নিজের ঘরে কবিতা লিখতে, সিরিজ দেখতে ভাল লাগে। আর সোশ্যাল মিডিয়া? আমার মাকে অবধি মেসেঞ্জারে সবাই লেখে আমি কেন আমার ফ্যানেদের প্রশ্নের উত্তর দিই না?একটু চিন্তা করলেই দেখবেন অনেক স্টারের মিলিয়ন ভিউ। দারুণ ব্যাপার। কিন্তু তাঁদের যখন ছবি আসে তখন ওই মিলিয়নের হাফ-ও সিনেমা হলে গেলে সব বাংলা ছবি সুপারহিট। আমি যা আছি তাই থাকি। এই ভাল।তাই বলে যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া করেন তাঁরা খারাপ বলছি না। যে যাঁর মতো করে বাঁচেন।
‘মোহর’ ধারাবাহিকের একটি দৃশ্যে প্রতীক সেন।
প্রশ্ন: আপনি কি বিয়ে না করেই বাঁচবেন?
প্রতীক: আমার কাউকে যে ভাল লাগেনি এ কথা যদি বলি তাহলে মিথ্যে বলা হবে। তবে দেখেছি, আমি কাউকে ভালবাসি বললে সে ধরেই নেয় আমার প্রেমিকা আছে! ফলে আমার প্রেমটাই হয় না! অনেক মহিলা এ-ও বলেছেন, আমি হ্যান্ডসাম তাই মেয়েদের প্রপোজ করি, আমার প্রেমিকা আছে। ভাবুন কী অবস্থা আমার।
প্রশ্ন: আপনার কবিতা লেখার কী অবস্থা?
প্রতীক: ২০০৭-এ প্রথম কবিতা লিখি। মা আমার প্রথম শ্রোতা।মনে আছে, পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি করতে গিয়ে উনি বুঝিয়েছিলেন ছন্দ ছাড়া কবিতা লিখতে। তখন নিজেকে ভাঙি...কেউ জানে না এটা। এখন শেয়ার করলাম। আপনা থেকেই লেখা আসে আমার।শঙ্খের মতোই আমি! যেটা করি ভেতর থেকে। চরিত্রটা নিয়ে যখন ভাবছি, মনে হল শঙ্খ কথায় কথায় বসবে কেন? শঙ্খ পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়াক। প্রথম দিকে পরিচালক বলেছিলেন আমায়, ‘‘এ কি প্রতীক!তুমি কি সারাক্ষণ পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়াবে?’’পরে এই স্টাইলটাই ম্যানারিজম হিসেবে দেখা হতে শুরু করে। আমি ট্রোলডও হয়েছি এই কারণে। লোকে বলছে,‘এই, শঙ্খ আসছে, পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়াবে দেখ...’তখন বুঝেছি আমি ঠিক রাস্তায় চলছি। লোকে ওই বিষয়টাকে নজর করেছে। আরে, একটা লোকের তো ম্যানারিজম থাকে। যে বিষয় মানুষের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সেটাকে আমরা ‘ভাল’বলছি।
প্রশ্ন: ছবি করবেন না?
প্রতীক: হ্যাঁ, আগে তো ছবি করতাম। স্বপন সাহার ছবি আমায় পাঁচ বার ফিরিয়ে দিতে হয়। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি করার কথা ছিল। এখন অবশ্য স্বস্তিকাদি স্বপন সাহার ছবি করবেন না। তাই বলে স্বপন সাহা ছবি বানাতে পারেন না তা নয়। সৃজিতদাই বলেন, তিনি স্বপন সাহার মতো ছবি বানাতে পারবেন না। আর স্বপন সাহা তাঁর মতো ছবি বানাতে পারবেন না। যে যাঁর জায়গায়।এমনি এমনি সব হয়ে যায় না।আমাকেও স্ট্রাগল করতে হয়েছে কিন্তু!
প্রশ্ন: যেমন?
প্রতীক: আমি যখন স্নেহাশিসদার ‘খোকাবাবু’ধারাবাহিক করি, লোকে ফোন করে বলেছিল,‘সাড়ে দশটার স্লট? ওটা তো আইসিউ স্লট! যে সিরিয়াল যায় সেটা পড়ে যায়।’স্নেহাশিসদা বললেন,‘‘তুমি তোমার কাজ কর।১০.৯ হল সেই ধারাবাহিক ওই স্লটে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে ‘অতিথি’করলাম। আরও ছবি করার ইচ্ছে আছে।
আরও পড়ুন: বিগ বসের ঘরে না গেলে ডিভোর্স হয়ে যেত এই দম্পতির
প্রশ্ন: মহিলা ভক্তদের সামলাচ্ছেন কী করে?
প্রতীক: পারছি না তো সামলাতে! এত ফেক প্রোফাইল তৈরি হয়েছে আমার নামে, সেখান থেকে বিভিন্ন মহিলাকে নানারকম প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। সাইবার ক্রাইমে যেতে হবে আমাকেও। তবে মানুষ আজ যা করে, ছ’-সাতটাইমোশন ঘিরেই কাজ করে।ভালবাসা, স্নেহ, ঈর্ষা, বিরহ, শ্রদ্ধা—এগুলো দিয়েই কিন্তু ছবি হচ্ছে। ধারাবাহিক হচ্ছে। সে ‘গ্র্যাভেটি’হোক বা ‘টাইটানিক’।
প্রশ্ন: কত বার প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছেন?
প্রতীক: বহু। এখন আমার মাকেও বলে সবাই। একবার ইন্দোনেশিয়া থেকে ফোন এল। তুললাম। বলল, ‘‘আপনি প্রতীক সেন। আপনাকে সারা রবিবার দেখি!’’মানে ইন্দোনেশিয়ার কিছু বাঙালি প্রতি রবিবার জমায়েত হয়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা ছবির মতো করে ‘মোহর’দেখে। আমি তো অবাক! ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রধান ‘গডফাদার’ছাড়া কোনও সিরিজ জীবনে দেখেননি। ফোনে ওঁর স্ত্রী জানালেন উনি ‘মোহর’দেখেন। ভাল লাগে!আফটর অল অভিনেতা আমি। আকাঙ্ক্ষা তো থাকবেই।
প্রশ্ন: সম্প্রতি বাংলা ছবি কী দেখলেন?
প্রতীক: রাজদার ‘পরিণীতা’। শুভশ্রী যে কাজটা করেছে খুব বেশি করে প্রশংসা করতে চাই। ঋত্বিক চক্রবর্তী তো অসাধারণ। রাজদার পোর্ট ফোলিওতেও এই ছবি থেকে যাবে।ছবির মুডটাই আলাদা।
প্রশ্ন: আপনি নাকি ভীষণ মুডি?
প্রতীক: একদম তাই। এই যে অসুস্থ হলাম মুড অনুযায়ী খাওয়ার জন্য। লীনাদি-শৈবালদা ধমকেছে খুব। ধারাবাহিকের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। আমি যেমন ছুটি থাকলে ঘর থেকে বেরোই না। কারও সঙ্গে কথা বলি না। কোন সহধর্মিণী এ সব মেনে নেবে?
প্রশ্ন: সোনামণিও মানবে না বলছেন?
প্রতীক: বললাম না। এগুলো সব গুজব। আমাদের পর্দায় বিয়ে হচ্ছে, বাস্তবে কিন্তু নয়! বিয়ে হলে ডেস্টিনেশন ম্যারেজ হবে, আপনাকে নেমন্তন্ন করব। কথা দিলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy