Advertisement
E-Paper

পারো থেকে রানি, আবহমান প্রজন্মের খাতে বলিউডের চোখে বাঙালি ঠিক কেমন?

বলিউড ও বাঙালি। দুইয়ের সম্পর্ক আত্মিক না হলেও তার অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না। যুগের পর যুগ ধরে বাঙালি নারী ও সংস্কৃতিকে বড় পর্দায় তুলে ধরেছে বলিউড। সময়ের সঙ্গে কতটা বিবর্তিত হয়েছে সেই দৃষ্টিভঙ্গি?

Evolution of Bengali female protagonists through years in Bollywood

(বাঁ দিকে) ‘দেবদাস’ ছবিতে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবিতে আলিয়া ভট্ট (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৩ ১৭:১১
Share
Save

বিনোদনের জগতে বাঙালির সব থেকে বড় দম্ভের জায়গা তার স্বকীয়তা। সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে যে পরম্পরার বৃত্তে পা রেখেছিল বাঙালি, তার ধারা বজায় থাকুক বা না থাকুক— আজও বাঙালির ড্রয়িং রুমের আড্ডার মূল নির্যাস সিনেদুনিয়ায় তার ঐতিহ্য। বাঙালির মননে বলিউড সে দিক থেকে কুলীন ব্রাহ্মণ নয়। তা না হোক, তাতে কি আর হুজুগ আটকে থাকে! বলিউডের প্রতি বাঙালির ঝোঁক ষোলোআনা, তবে বাঙালি যেন এখনও বলিউডের কাছে হাতের নাগাল না পাওয়া চাঁদ। বাঙালিকে নিয়ে বলিউডের ‘ফ্যান্টাসি’ও তাই নেহাত কম নয়। বলিউডের চোখে বাঙালি, বিশেষত বাঙালি নারী অপরূপ সুন্দরী। বাঙালি কন্যে মানেই লালপাড় সাদা শাড়ি, কাজলকালো চোখ, কপালে মানানসই একটি টিপ। কলকাতা মানেই হলুদ-কালো ট্যাক্সি, হাওড়া ব্রিজ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বলিউডের চোখে বাংলা ও বাঙালির এই অবতারই প্রায় চিরসবুজ। প্রজন্মের সঙ্গে কিছুটা হলেও বিবর্তন ঘটেছে সেই দৃষ্টিভঙ্গির। যদিও বলিউডের কাছে বাঙালি নারী ও শাড়ি প্রায় সমার্থক, বাংলার বাইরে অন্য রাজ্যে বসবাসকারী বাঙালি চরিত্রকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে সেই ‘টেমপ্লেট’-এও ইদানীং কালে বেশ কিছু রদবদল করেছেন ছবি নির্মাতারা। ২০ বছর আগে বাঙালিকে যে ভাবে সাজিয়েছিল বলিউড, আজকের বলিউড ছবিতে বাঙালির বেশভূষা তার থেকে বেশ আলাদা। ‘দেবদাস’-এর পার্বতী থেকে শুরু করে ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবির রানি— বলিউডে বাঙালি নারীর এই বিবর্তন ঠিক কেমন?

দেবদাস (২০০২):

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে সেলুলয়েডে একাধিক বার তৈরি হয়েছে ‘দেবদাস’। তবে সেই সব ছবির মধ্যে সঞ্জয় লীলা ভন্সালী পরিচালিত ‘দেবদাস’ বিশেষ ভাবে মনে রাখার মতো। ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে আদ্যোপান্ত এক বাঙালি গল্পকে অবাঙালি শৈলীতে সাজিয়েছিলেন ভন্সালী। সেখানে পার্বতী (ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন) ও চন্দ্রমুখীর (মাধুরী দীক্ষিত নেনে) সাজেই বাঙালি কমনীয়তার থেকে বেশি ফুটে উঠেছিল অবাঙালি চাকচিক্য। ছবিতে লাল-পাড় সাদা শাড়ি, দুর্গা পুজো ছিল বটে। তবে বাঙালি বাড়ির দুর্গাপুজোয় যে আত্মীয়তা থাকে, তার চিত্রায়ণ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি ‘দেবদাস’-এ। দেবদাসের সাজে যদিও বিলেতফেরত বাঙালির ছাপ ছিল স্পষ্ট। পার্বতী ও চন্দ্রমুখীকে দেখে জমাট জরদৌসি কারুকাজ করা শাড়ি ও ভারী কুন্দনের গয়নার জনপ্রিয়তা বেড়ে গিয়েছিল বাঙালির মধ্যে। ‘দেবদাস’-এর মাধ্যমে বাঙালি আবেগকে ধরতে চেয়েছিলেন ভন্সালী। তবে শেষ পর্যন্ত, বাংলা ও বাঙালির ‘অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন’ ছাড়া কোনও কিছুই পরিবেশন করতে পারেননি পরিচালক।

ভিকি ডোনর (২০১২):

সুজিত সরকার পরিচালিত ছবি। দিল্লিবাসী বাঙালি নায়িকা ও পঞ্জাবি নায়কের প্রেমের ছবি। বলিউডের অন্যতম প্রথম ছবি, যেখানে শাড়ি ছাড়াও বাঙালির পরিচয় সফল ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পরিচালক। ইয়ামি গৌতম অভিনীত অসীমা রয় সারা ক্ষণ শাড়ি পরে থাকে না। মাছ ভাজা তার ভীষণ প্রিয়, তবে চা ছাড়াও বিয়ারের বোতলের চুমুক দেয় সে। শাড়ি, দুর্গাপুজো, রবীন্দ্রনাথের বাইরেও যে বাঙালির অস্তিত্ব আছে, তার ঝলক প্রথম বার দেখেছিল বলিউড। হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল বাঙালিও! কুর্তি-জিন্স পরা বাঙালিকে যে ত্যাজ্য করবে না বলিউড, বাঙালি দর্শককে সেই আশ্বাস দেওয়ার ক্ষেত্রে সফল হয়েছিলেন পরিচালক সুজিত সরকার।

পিকু (২০১৫):

‘ভিকি ডোনর’-এর কয়েক বছর পরে অমিতাভ বচ্চন, ইরফান ও দীপিকা পাড়ুকোনকে নিয়ে একটি ছবি বানিয়েছিলেন সুজিত সরকার। ছবির নাম ‘পিকু’। ছবিতে পিকু এক বাঙালি মেয়ে, দিল্লিবাসী, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন, প্রেমে তেমন পিছুটান নেই। তবে বাবা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের (অমিতাভ বচ্চন) খেয়াল রাখায় কোনও খামতি নেই তার। বাবা ও মেয়ের সম্পর্কের বিভিন্ন আঙ্গিক তুলে ধরেছিলেন সুজিত সরকার। এই ছবিতে পিকু আদ্যোপান্ত বাঙালি, তবে সে দিল্লিবাসীও। সামাজিক অনুষ্ঠানে কালো পাড়ের শাড়ি, গাঢ় কাজলে সাজে সে। কিন্তু অফিসের জন্য কুর্তি, জিন্স আর স্টোলই যথেষ্ট তার। কলকাতা এসে লঞ্চঘাটের জেটিতে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার ধারের দোকান থেকে কেনা রোল খায় সে। জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে তার ফেলে আসে স্কুলবেলা। পুরনো এক বাড়ির হারিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে নস্টালজিয়া ঘিরে ধরে তাকে। কচুরি-তরকারি-জিলিপি খাওয়া নিয়ে বাবাকে বকাবকি করতেও ছাড়ে না পিকু। বাঙালির নিত্যদিনের জীবনযাপনের পটচিত্রকে পর্দায় তুলে ধরেছিলেন সুজিত। সেখানে না ছিল সাজসজ্জার আতিশয্য, না ছিল ‘টোকেনিজ়ম’-এর ভারে নুয়ে পড়া বাঙালির ‘ভ্যানিটি’।

রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি (২০২৩):

২০১৬ সালে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর পরে সাত বছরের বিরতি। বছর সাতেক পরে চলতি বছরে ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসাবে প্রত্যাবর্তন কর্ণ জোহরের। ছবিতে মুখ্য নারী চরিত্র রানি চট্টোপাধ্যায় (আলিয়া ভট্ট), দিল্লিবাসী বাঙালি সাংবাদিক সে। ‘রকি অউর রানি...’-র বাঙালি কন্যাকে শাড়ি ছাড়া দেখাই যায় না প্রায়। কপালে টিপ, নাকে নাকছাবি, পরিপাটি খোঁপায় বাঁধা চুল, চোখের গাঢ় কাজলের টান আর কানে রূপোর দুল। গতে বাঁধা বঙ্গতনয়ার নিখুঁত প্রতিচ্ছবি সে। যদিও ছবিতে যত ডিজ়াইনার শিফন শাড়ি পরেছেন আলিয়া, বাঙালির মধ্যে শিফন শাড়ির চল এত বেশি নয়। অবশ্য সেই চল হতে আর কত ক্ষণ! প্রত্যাশিত ভাবেই নিজের ছবিতে বাঙালি নারীকে গ্ল্যামারের মোড়কে মুড়ে দেখিয়েছেন কর্ণ জোহর। নিত্যদিনের জীবনে সেই সাজের ধারেকাছে পৌঁছনো সহজ কাজ কাজ তো নয়ই, বরং এক জন সাংবাদিকের কাছে বেশ দুষ্কর।

গত দুই দশকে বাঙালির ‘লুক’ নিয়ে হরেক রকমের পরীক্ষানিরীক্ষা করেছে বলিউড। তাতে যেমন ‘পরিণীতা’-র বিদ্যা বালন আছেন, তেমনই আছেন ‘বুলবুল’-এর তৃপ্তি দিম্রি। বাঙালির সাজে চোখ টেনেছেন ‘লুটেরা’-র সোনাক্ষী সিন্‌হা থেকে ‘বরফি’-র ইলিয়ানা ডিক্রুজ়। তবে এই সব ছবির পথচলা বলিউডের মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। ‘মেনস্ট্রিম’ বলিউডে এখনও বাঙালি নারী বলতে শাড়ি আর সাজের ‘ম্যানিকুইন’ই। অদূর ভবিষ্যতে কি ভাঙবে সেই মরচে পড়ে যাওয়া একঘেয়ে ছক? আশায় বুক বেঁধে আমবাঙালি নারী!

Devdas Aishwarya Rai Bachchan Sanjay Leela Bhansali Rocky Aur Rani Kii Prem Kahaani Alia Bhatt Karan Johar Deepika Padukone Piku Shoojit Sircar

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।