অভিনয়ের জন্য এই ছবি তারিফ পাবে।
ঠিক সময়ে সব ঠিক হয়ে যায়। ঘরে ফিরতেই হয় সব কিছুর পরে। জীবনের পাতায়-ডালে নতুন রোদ্দুর লাগে। একটা দমকা হাওয়া আসে কোথা থেকে। চিনিয়ে দিয়ে যায় আমাকে আমার কাছে, নতুন করে।
অর্জুন দত্ত পরিচালিত ‘গুলদস্তা’-র চরিত্রেরা কে কী ভাবে আবার নিজেকে চিনল, তা ক্রমশ প্রকাশ্য। তবে অভিনয়ের জন্য এই ছবি তারিফ পাবে। বিশেষত, প্রধান তিন চরিত্রকে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (ডলি), অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় (শ্রীরূপা) এবং দেবযানী চট্টোপাধ্যায় (রেণু) ফুটিয়ে তুলেছেন অতি যত্নে। শ্রীরূপার অসুখী দাম্পত্য জীবন তারই মতো রক্তহীন, ফ্যাকাসে। স্বামী অর্ণব (ঈশান মজুমদার) যে সহকর্মী রিয়ার সঙ্গে ‘অন্য ব্যবস্থা’ করে নিয়েছে, তা সে জানে। রেণুকে তার স্বামী ধ্রুব (অভিজিৎ গুহ) ভালবাসে। কিন্তু মানসিক সমস্যায় ভোগা শাশুড়ি আর মাদকাসক্ত ছেলেকে (অনুভব কাঞ্জিলাল) নিয়ে সে নাজেহাল। দু’রকমের যন্ত্রণাবিদ্ধ এই দুই নারীর জীবনে এসে পড়ে ডলি। অবিরল, অমলিন তার হাসি। নিজের জীবন মেলে ধরে ডলি বলে, স্বামী-ছেলে-বৌমা নিয়ে ‘ভরা সংসার’ তার। তবু নিজের তাগিদেই দিনভর সে ঘুরে বেড়ায় পথে-পথে।
গল্প এগোয়, জীবন পাল্টায়। তবে এই ছবিতে সবই যেন একটু বেশি দ্রুত পাল্টায়। নিজেকে ভালবেসে খোলস থেকে বেরিয়ে আসা, জীবনবোধ জেগে ওঠা, নতুন চরিত্রের আবির্ভাবে প্রেমের বা বন্ধুতার বাঁক-বদল, ভুল ভাঙা, সত্য উন্মোচন— ‘গুলদস্তা’-র গল্পে এ সবের অনেকটাই প্রত্যাশিত মনে হয়। কিন্তু এই ‘গল্প হলেও সত্যি’ বদলগুলোর জন্যও তো প্রস্তুতির একটা সময় লাগে। অন্যথায় দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগে, পুরনো ‘ভুল’ ঝেড়ে ফেলে কয়েকটা জাম্পকাটেই কি নতুন জীবনে থিতু হওয়া যায়? সন্দেহগ্রস্ত মন কি এত চটজলদি বিনয়ভূষণ হয়ে পড়ে? বিক্রয়-প্রতিনিধিরা অপরাধ নেবেন না, কিন্তু সচরাচর কি কোনও ক্রেতার সঙ্গে শোয়ার ঘরে গিয়ে বিয়ের গয়না দেখার মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁদের? রেণুর শাশুড়ির চরিত্রে ছন্দা করঞ্জি চট্টোপাধ্যায় খুবই ভাল, কিন্তু গোটা ছবিতে তিনি বারবার বলে ওঠেন, ‘‘এই রাস্তা নয়, ওই রাস্তাটা দিয়ে যা।’’ এ যদি জীবন পাল্টাতে ‘বিবেকের’ বার্তাও হয়, তবু শাশুড়ির এই সংলাপের কোনও ব্যাখ্যা বা পূর্ব ইতিহাস নেই গল্পে।
গুলদস্তা
পরিচালনা: অর্জুন দত্ত
অভিনয়: স্বস্তিকা, অর্পিতা, দেবযানী
৫.৫/১০
অর্জুনের প্রথম ছবি ‘অব্যক্ত’ প্রশংসা পেয়েছিল। ‘গুলদস্তা’ নিয়ে এই আক্ষেপটুকু রইল। তবে রূপসজ্জা শিল্পীদের কুর্নিশ। একটু বৈচিত্র থাকতে পারত আবহসঙ্গীতে। তবু মনে থেকে যায় ক্যামেরার চোখে ড্রয়িংরুমে কাচের-জলের সাজানো দুনিয়ায় তিন মাছের জীবনের ঘুরে-ফিরে আসা, রেণুর সঙ্গে ছেলে টুকাইয়ের মুহূর্তগুলো, চোখ ফেটে আসা জল লুকিয়ে ডলির গান আর হৃদয় নিংড়ে শ্রীরূপার বলে ওঠা, ‘‘আমি ঠান্ডা নই। দুঃখ হয়, কিন্তু বলতে পারি না।’’
আর রয়ে যায় আশা— ‘‘এ কঠিন সময়েও বসন্ত আসে।’’ হয়তো আলোর গতিতে নয়, তবু ঠিক সময়ে সব ঠিক হয়েই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy