Even Dharmendra became a victim of Groupism in Bollywood, never received best actor award dgtl
Dharmendra
কখনও পাননি সেরা অভিনেতার পুরস্কার, বলিউডে দুই বড় নায়কের দলবাজির শিকার হন ধর্মেন্দ্র
যত বড় অভিনেতাই হোন না কেন, যতই প্রতিভা থাকুক না কেন, বলিউডের নক্ষত্রমণ্ডলীতে শামিল হতে গেলে দলবাজিই যে শেষ কথা, তা আর গোপন নেই।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২০ ১৭:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
সুশান্ত সিংহ রাজপুত ঠিক কী কারণে আত্মঘাতী হয়েছেন, সে প্রশ্ন হয়ত আজীবন অধরাই থেকে যাবে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে মায়ানগরীর অন্ধকার দিকটা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে সকলের কাছে। যত বড় অভিনেতাই হোন না কেন, যতই প্রতিভা থাকুক না কেন, বলিউডের নক্ষত্রমণ্ডলীতে শামিল হতে গেলে দলবাজিই যে শেষ কথা, তা আর গোপন নেই। তবে সুশান্ত সিংহ রাজপুতই প্রথম নন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই বলিউডে এই দলবাজি চলে আসছে। এমনকি এর থেকে হি-ম্যান ধর্মেন্দ্রও নিস্তার পাননি। সম্প্রতি এমনই দাবি করেছেন শত্রুঘ্ন সিনহা।
০২১৭
ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের ট্যালেন্ট হান্টে বিজয়ী হওয়ার পর মায়ানগরীর দরজা খুলে যায় ধর্মেন্দ্রর সামনে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিযোগিতার পরই একটি ছবিতে নায়ক হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও, সেই ছবির কাজ শুরু হয়নি। তাই শেষ মেশ ১৯৬০ সালে অর্জুন হিঙ্গোরানির ‘দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ ছবির মাধ্যমে বিনোদন জগতে পা রাখেন ধর্মেন্দ্র।
০৩১৭
বলিউডে প্রথম যদি কেউ ‘গ্রিক গড’-এর তকমা পেয়ে থাকেন, তিনি হলেন ধর্মেন্দ্র। সুদর্শন চেহারার জন্য শুরুর দিকে রোম্যান্টিক ছবিতেই তাঁকে নিতেন পরিচালকরা। একে একে ‘সুরত অউর সিরত’, ‘বন্দিনী’, ‘অনপঢ়’, ‘পূজা কে ফুল’-এর মতো ছবিতে দেখা যায় তাঁকে।
০৪১৭
কিন্তু শুধুমাত্র রোম্যান্টিক চরিত্রে নিজেকে বেঁধে রাখতে চাননি ধর্মেন্দ্র। যে কারণে ১৯৬৮ সালে স্পাই-থ্রিলার ‘আঁখে’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ছবিটি সুপারহিট হয়। মীনাকুমারী, নূতন, মালা সিংহ, সায়রা বানুর মতো নায়িকাদের সঙ্গে ধর্মেন্দ্র জুটি পছন্দ করেন দর্শক।
০৫১৭
একের পর এক ছবি হিট হতে শুরু করায়, আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ধর্মেন্দ্রকে। কিন্তু সেই সময়ই ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন রাজেশ খন্না। ১৯৬৬ সালে ‘আখরি রাত’ ছবির মাধ্যমে ডেবিউ করেন রাজেশ খন্না। তার পরের বছর মুক্তি পায় ‘রাজ’। দু’টি ছবিই সফল হয়। ‘আখরি রাত’ সেরা বিদেশি ছবি হিসেবে মনোনীত হয় অস্কারের জন্যও। এর পর ‘ডোলি’, ‘আরাধনা’-র হাত ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান রাজেশ খন্না। শোনা যায়, একের পর এক হিট ছবি উপহার দেওয়ায় তাঁর বাড়ির বাইরে লাইন দিতে শুরু করেন পরিচালকরা।
০৬১৭
তাতে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজেশ খন্নার প্রভাবও বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, সেই সময় সব বড় পরিচালকই তাঁর সঙ্গে কাজ করতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। তাতে নিজের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেন রাজেশ খন্নাও।
০৭১৭
শোনা যায়, সেই সময় প্রযোজক-পরিচালক এবং অনুগামী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে নিজের একটি আলাদা দল তৈরি করেন তিনি, যাতে কোনও ভাল চরিত্র অন্য কারও কাছে না যায়। কোনও ভাবে যদি কোনও ভাল চরিত্র অন্য কারও কাছে চলেও যেত, তা হলে সেই অভিনেতার সম্পর্কে নানা কথা রটিয়ে, কাজ ভাঙিয়ে আনারও অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
০৮১৭
রাজেশ খন্নার এই প্রতিপত্তির মধ্যে কোনওরকমে যে দুই অভিনেতা টিকেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম হলেন ধর্মেন্দ্র এবং মনোজকুমার। মনোজকুমার বেছে বেছে কাজ করতেন। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনাতেও হাত পাকাতে শুরু করেন তিনি। ধর্মেন্দ্র অবশ্য শুধু অভিনয়েই মন দেন। তবে দলবাজিতে আপত্তি ছিল তাঁর। তাই কারও পদলেহন করার চেয়ে নিজের যোগ্যতায় কাজ পাওয়ায় মন দেন তিনি।
০৯১৭
১৯৬৬ থেকে ’৬৯ সাল পর্যন্ত ‘অনুপমা’, ‘আয়ে দিন বাহারকে’, ‘মঝলি দিদি’, ‘শিকার’, ‘মেরে হমদম মেরে দোস্ত’-এর মতো একঝাঁক ছবিতে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র। তবে সব ছবিতেই প্রায় একই রকমের চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। তাই ১৯৬৯ সালে ‘সত্যকাম’ ছবিটি যখন তাঁর হাতে এসে পৌঁছয়, আর ঝুঁকি নেননি তিনি। পাছে ছবিটি হাতছাড়া হয়ে যায়, তার জন্য নিজেই প্রযোজনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।
১০১৭
সমাজতান্ত্রিক এবং স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তাধারার তৎকালীন ভারতীয় সমাজ সেইসময় দ্বিখণ্ডিত। ছবিতে আদর্শবাদী সত্যপ্রিয় আচার্যর চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। তার ফলও হাতেনাতে পেয়েছিলেন তিনি। ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু ওই একই বছর মুক্তি পায় রাজেশ খন্নার ‘আরাধনা’। তাতে ধর্মেন্দ্রর কৃতিত্ব চাপা পড়ে যায়। শুধু তাই নয়, জাতীয় পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ারের মঞ্চ, দু’জায়গাতেই তাঁকে অবজ্ঞা করা হয়।
১১১৭
১৯৭৫ সালে ‘শোলে’ মুক্তি পাওয়ার আগে পর্যন্ত ‘জীবন মৃত্যু’, ‘শরাফত’, ‘গুড্ডি’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’, ‘দোস্ত’, ‘চুপকে চুপকে’— একের পর এক হিট ছবি উপহার দেন ধর্মেন্দ্র। ‘শোলে’ ছবিতে তাঁর অভিনয় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। কিন্তু তত দিনে তাঁর উপর ছায়া ফেলতে শুরু করেছেন অমিতাভ বচ্চন।
১২১৭
১৯৭৩ সালে ‘জঞ্জির’ ছবির মাধ্যমে ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ অমিতাভকে পায় বলিউড। অথচ শুরুতে এই ছবিটি করার কথা ছিল ধর্মেন্দ্রর। কিন্তু চিত্রনাট্যকার সেলিম-জাভেদ জেদ ধরায় শেষ পর্যন্ত অমিতাভকেই ছবিতে নিতে বাধ্য হন প্রযোজক প্রকাশ মেহরা।
১৩১৭
শোনা যায়, ‘শোলে’র পর ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের ক্যাম্প গড়ে ফেলেন অমিতাভ। কিন্তু শোলে ছবিতে ‘জয়’-এর চরিত্রের জন্য ধর্মেন্দ্রই যে অমিতাভের নাম সুপারিশ করেছিলেন, সেই সময় তা সামনে আসতে দেননি অমিতাভ। কয়েক বছর আগে অবশ্য সে কথা স্বীকার করে নেন অমিতাভ।
১৪১৭
কিন্তু যাঁকে বন্ধু ভেবেছিলেন, তাঁর কাছ থেকে পাওয়া আঘাত ভোলেননি ধর্মেন্দ্র। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘এত বছর পর অমিতাভ মানছেন, আমিই ওঁর হয়ে সুপরিশ করেছিলাম। লোকে ভাববেন, বাহ্ কী মহান অমিতাভ। কই সেই সময় তো এ নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি!’’
১৫১৭
‘শোলে’র মতো মেগাহিট ছবি উপহার দেওয়া সত্ত্বেও একাধিক ছবিতে দ্বিতীয় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়েছে ধর্মেন্দ্রকে। র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে সর্বদা অমিতাভের পরে রাখা হয়েছে তাঁকে। ১৯৮৭ সালে ‘হুকুমত’, ‘লোহা,’ ‘আগ হি আগ’, ‘ওয়াতন কে রাখওয়ালে’, ‘খতরোঁ কে খিলাড়ি’-র মতো সাত-সাতটি হিট ছবি উপহার দেন ধর্মেন্দ্র। কিন্তু তাঁর সাফল্যকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি ইন্ডাস্ট্রি। দীর্ঘ পাঁচ দশকের কেরিয়ারে এক বারও সেরা অভিনেতার পুরস্কার পাননি তিনি। ২০১২ সালে পদ্মভূষণ পাওয়া ছাড়া সে ভাবে স্বীকৃতও পাননি ধর্মেন্দ্র।
১৬১৭
তবে ধর্মেন্দ্র একা নন, দলবাজিতে যোগ দেননি বলে ইন্ডাস্ট্রি তাঁকেও প্রাপ্য সম্মান দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শত্রুঘ্ন সিনহাও। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যে সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘‘সত্তরের দশকের ঢের আগে থেকেই বলিউডে দলবাজি চলে আসছে। বহু প্রতিভাবান অভিনেতাকে এর মূল্য চোকাতে হয়েছে। রাজেশ খন্না দলবাজি করতেন। দলবাজি করতেন শাম্মি কপূরও। বড় দাদা বলে যাঁকে মানি, সেই ধর্মেন্দ্র এবং আমি কখনও কোনও দলে যোগ দিইনি।’’
১৭১৭
গোবিন্দর মতো অভিনেতাকেও ইন্ডাস্ট্রি প্রাপ্য সম্মান দেয়নি বলে অভিযোগ করেন শত্রুঘ্ন। কপূর পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও দলবাজির জেরে একসময় তিনিও কোণঠাসা হয়ে পড়েন বলে নিজের আত্মজীবনীতে অভিযোগ করেন প্রয়াত ঋষি কপূরও। তিনি জানান, একের পর এক হিট ছবি দিলেও, একামাত্র অমিতাভই গুরুত্ব পেতেন ইন্ডাস্ট্রিতে। একসঙ্গে ছবি করলে, ভাল চরিত্রটি অমিতাভের জন্য আগে থেকে বেছে রেখে দিতেন পরিচালক-প্রযোজকরা। তাঁকে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দেওয়া হতো। শশী কপূর, বিনোদ খন্নার মতো অভিনেতাদেরও একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বলে জানান তিনি।