রাহুল-শ্রীলেখা-টোটা-তনুশ্রী
অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অবসাদের কথা সামনে আসতেই টলিউডের অনেক সেলেবই মুখ খুলেছেন নিজেদের অবসাদ নিয়ে। তাঁরা শিকার হয়েছেন পক্ষপাতদুষ্ট ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতিরও।
টলিউডের নেপোটিজ়মের ফাঁদে পড়েন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। তাঁর বিস্ফোরণ, ‘‘ইন্ডাস্ট্রির ক্যাম্প আছে। নায়ক বা তাঁর প্রেমিকার আবদারে ছবি থেকে অন্য অভিনেতাকে সরিয়ে দেওয়া... এ সব টলিউডে অনেক কাল ধরেই চলে এসেছে। আজ সুশান্তের আত্মহত্যার কারণে ইন্ডাস্ট্রির জঘন্য রাজনীতি নিয়ে আমরা সরব।’’ অভিনেত্রী কোনও বিশেষ ঘটনার খোলসা কি করবেন? ‘‘সুপারহিট হল ‘অন্নদাতা’। পরের ছবিতে সাইন করার কিছু দিন পর জানলাম বাদ পড়ার কথা। ছবির হিরোর সঙ্গে যিনি প্রেম করছেন, তাঁকেই নেওয়ায় দাবি এসেছে।’’ ‘পার্টিবাজ’ প্রযোজক-পরিচালকের সঙ্গে ডিনারে যাননি, বিশেষ সময় কাটাননি বলেই অভিনেত্রীকে শেষ মুহূর্তে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক ছবি থেকেই। মনখারাপ হলেও মনোবল ভাঙেনি শ্রীলেখার।
প্রতিভার জোরে অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী জায়গা করে নেন ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’-তে। তবু রাজনীতি পিছু ছাড়েনি তাঁর। অভিনেতার বয়ান, ‘‘এত বড় ব্রেক পাওয়ার পরও ইন্ডাস্ট্রির কয়েক জন মানুষের অঙ্গুলি হেলনের কারণে ছ’ মাস চুপচাপ বসে ছিলাম। ওই ছবির বাকি দু’জন অনেক কাজ পেল। কিন্তু আমার কাজগুলো নানা অজুহাতে হাতছাড়া হচ্ছিল। অসহনীয় ছিল দিনগুলো।’’ কিন্তু মানসিক ভাবে ভেঙে না পড়ে তিনি বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করেই পেলেন ‘টিনটোরেটোর যীশু’-সহ আরও কয়েকটি ছবি। কয়েক বছর পর হাত ধরলেন সুজয় ঘোষ। এল শর্ট ফিল্ম ‘অহল্যা’র সাফল্য, সেখান থেকে দক্ষিণ ভারতীয় ছবি, বলিউডের বেশ কয়েকটি প্রশংসনীয় কাজ। ‘‘হারতে শিখিনি। যারা আমার হাত থেকে কাজ কেড়েছে, তাদেরকে বলি স্প্রিং বল, আবার মাথা তুলে দাঁড়াবই,’’ আত্মবিশ্বাসী টোটা।
আবার আত্মবিশ্বাস ফেরাতে কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নেন তনুশ্রী চক্রবর্তী। কোনও লবিতে না থাকায় হাতছাড়া হয়েছে অনেক ছবি। সেই অস্থিরতা থেকে বার করেন তাঁর ইন্ডাস্ট্রির বাইরের বন্ধুরা, জানিয়েছেন তনুশ্রী।
‘বঙ্কুবাবু’, ‘ভাড়াটে’, ‘আমার আমি’--সহ একসঙ্গে চারটি ছবি প্রশংসিত হওয়ার পরও দু’বছর কাজ হারানোর যন্ত্রণায় কুঁকড়ে পড়েন অভিনেত্রী অরুণিমা ঘোষ। ‘‘দু’বছর ধরে মানসিক অবসাদে ভুগেছি। সারা রাত ঘুমোতাম না, ভোর চারটেয় বেরিয়ে, একা একা হাঁটতাম। একদিন বাইপাসে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হাউহাউ করে কেঁদেই চলি। তারপর পাশে পরিবার ও ডাক্তার বাবাকে পেয়েছি। আমার কাউন্সেলিং চলে,’’ বলছিলেন নায়িকা।
কামব্যাকের পরই অবশ্য একটি চর্চিত ছবিতে নিজের কস্টিউম তৈরি হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি বাদ পড়েন। আরেকটি গোয়েন্দাধর্মী ছবিতে তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান। কিন্তু পরিচালকের সঙ্গে ‘আরও ভাল’ সম্পর্ক তৈরি করতে অক্ষম হওয়ায় তাঁর চরিত্রের সময়সীমা কমানো হয়, ছবির ক্যাম্পেনিং শুটিং থেকেও নাম বাদ পড়ে।
‘‘ছবি হিট হওয়া যথেষ্ট নয়, ব্যক্তিগত পিআর এবং খুঁটির আশ্রয় জরুরি,’’ মনে করেন অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ হিসেবে জানালেন, ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ রের্কড গড়লেও প্রযোজনা সংস্থার পরবর্তী ছবিতে সোলো হিরো হিসেবে নিজেকে দেখতে পাননি। এই যন্ত্রণাই কি নায়ককে নেশার পথে ঠেলে দেয়? নায়কের কথায়, ‘‘কথাটা আংশিক সত্যি। কিন্তু প্রযোজক-পরিচালকরা কখনও আমাকে ডেকে কারণ জানতে চাননি। আউটসাইডার হওয়ায় কখনও সিরিয়াস ছবি নিয়ে আলোচনা করেননি। শুধু নেগেটিভ পাবলিসিটি করে গিয়েছেন।’’
টলিউডের ‘ইনসাইডার’ অভিনেতা বনি সেনগুপ্তও কেরিয়ারের শুরুতে প্রযোজক সংস্থার ব্যক্তিগত স্বার্থের জালে আটকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অভিনেতা বললেন, ‘‘এসভিএফ –এর সঙ্গে আমার চুক্তি হয়। কিন্তু তা নিয়ে জটিলতা হয়,’’ এতেই কয়েকটা মাস থমকে যায় বনির কাজ। হাতছাড়া হয় সুরিন্দর ফিল্মসের তিনটি ছবি। সমঝোতায় মিটমাট হলেও চরম অর্থনৈতিক দুর্ভোগের দিনগুলো আজও মানসিক ভাবে নাড়া দেয় বনিকে।
আবার অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ জানালেন, কয়েকজন উঠতি মডেলদের সঙ্গে কিছু পরিচালকের বিশেষ সখ্য গড়ে ওঠায়, বাদ পড়ছেন অনেক ভাল অভিনেত্রীই। ভবিষ্যতে ইন্ডাস্ট্রিতে এর প্রভাব মারাত্মক হবে বলেই মনে করেন অভিনেত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy