তথাগত মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
পুজোর আবহেও আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল শহর। তার সঙ্গে জয়নগরের নাবালিকার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা এই পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। আর এর মাঝেই মন ভার করা পোস্ট করলেন তথাগত মুখোপাধ্যায়। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম থেকেই শামিল ছিলেন তিনি। আর এ বার তিনি লিখলেন, “ভাগ্যিস ‘মেয়ে’ হয়ে জন্মাইনি!”
তথাগত শৈশবের একটি ছবি ভাগ করেছেন। দেখা যাচ্ছে, তথাগতকে তাঁর মা শিশুকন্যার মতো সাজিয়েছেন। পরিচালক-অভিনেতা লিখেছেন, “ছোটবেলার ছবিটা পুরীর সমুদ্রের ধারের। আমার মা চেয়েছিল, দ্বিতীয় সন্তান যেন মেয়েই হয়। হলাম আমি। ছোটবেলায় খুব লম্বা চুল ছিল। তাই অধিকাংশ সময় মা চুল ফিতে দিয়ে বেঁধে, এমন পোশাক পরিয়ে, টিপ পরিয়ে রাখত, যাতে কিছু ক্ষণের জন্য হলেও পথচলতি লোকজন ভুল করে বলে ফেলে ‘ভীষণ মিষ্টি মেয়ে আপনার’। ব্যাপারটার প্রমাণ অজস্র পুরনো ছবিতে আমি পেয়েছি।”
মায়ের সাধ ছিল দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হোক। ছোটবেলায় তেমনই সাজাতেন মা। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে বদল এল চেহারায়। তথাগত লিখেছেন, “বড় হওয়ার সঙ্গে শরীরে ব্যাপারটা পালটে গেলেও মননে খানিকটা থেকেই গেল। সে কথা দিদি, বান্ধবী, প্রেমিকা, স্ত্রী এদের কাছে শুনেছি বহু বার। আমার কিছু আঁকড়ে ধরা-টরা কিংবা ভাবা নাকি মেয়েদের মতো। যে হেতু আমি মেয়ে নই তাই যাচাই করে উঠতে পারিনি ‘মেয়েদের মতো’ না হলে আর হলে ঠিক কী রকম হয়।”
জয়নগরের ঘটনা দেখে তথাগতের উপলব্ধি, ভাগ্যিস তিনি মেয়ে হয়ে জন্মাননি। অভিনেতা লিখেছেন, “ভাগ্যিস হইনি। না হলে আমাকে ভাবতে হত জয়নগরের মেয়েটা আমি হতে পারতাম। কিংবা রাজারহাটের অথবা আরজি করের মেয়েটা, কিংবা কামদুনি, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি। আসলে গোটা ভারতবর্ষের যে কোনও অঞ্চলের যে কোনও বয়সের মেয়ে। এমন এক প্রজাতির প্রতিনিধি হিসেবে বড় হতে হত যে কোনও দিন, যে কোনও বয়সে তার সঙ্গে যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। ভারতবর্ষ নামক দেশের এই গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় দু’বছরের মেয়ে শিশুও তো ছাড় পায় না। আমি তো বরং সেই সম্প্রদায়ের অংশ যারা এই দেশে যে কোনও সময় যা কিছু করে ফেলার ক্ষমতা রাখে।”
শ্লেষ করে তথাগত লিখেছেন, পুরুষ হয়ে জন্মানোর জন্য তাঁর মায়ের আজ নিশ্চিন্ত থাকার কথা। অভিনেতা লিখেছেন, “আমার মায়ের তো নিশ্চিন্ত আর খুশি হওয়ার কথা। অথচ আমার মা খুশি হতে পারেনি। কারণ মা গল্প করার বন্ধু পায়নি। সমব্যথী পায়নি। অল্প বয়সের কষ্টের গল্প বোঝার লোক পায়নি। জড়িয়ে ধরে কাঁদার লোক পায়নি। যন্ত্রণা বোঝার সমমনস্ক সচেতন মন পায়নি। একই দুঃখ ভাগ করার মতো মানুষ পায়নি। শুধু পেয়েছে এই সমাজে আমার ধর্ষিত না হওয়ার নিশ্চিন্তি। আমি কিন্তু নিশ্চিন্ত হয়েছি। মায়ের ইচ্ছে পূর্ণ হয়নি। আমি ছেলে হয়েছি,পুরুষ....বাঙালি পুরুষ সিংহ।”
পোস্টের শেষে তথাগত লেখেন, “আমি আফ্রিকাতে ছয় ফুটের দূরত্বে বহু সিংহকে ঘুমোতে আর প্রস্রাব করতে দেখেছি। পরে পড়াশুনা করে জানলাম শিকার করে খাবার জোগাড় করা, বাচ্চাদের বড় করা, দল গঠন করা এ সমস্ত তুচ্ছ কাজ সিংহীরাই করে। সিংহেরা শিকার করে আনা খাবার খায়, ঘুমোয়, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয় আর নির্দিষ্ট ঋতুতে যৌনতায় মাতে। আমি টের পেলাম, ভারতীয় বা বাঙালিদের কেন পুরুষ সিংহ বলা হয়। আমিও সেই পুরুষ সিংহ দলের প্রতিনিধি। ভাগ্যিস, মেয়ে হয়ে জন্মাইনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy