২০১৭-য় শুরু। এই ২০২১-এ এসে তাঁর ঝুলিতে পরপর থ্রিলার ছবি-সিরিজ। রহস্য-রোমাঞ্চে হাত পাকিয়ে ফেলা পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের কাজ থেকে ভাবনার অলিগলিতে ঘুরল আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: ২০১৭ ‘যকের ধন’ থেকে ২০২১-এ ‘গোরা’। মুক্তির অপেক্ষায় ‘স্বস্তিক সংকেত’। মাঝের সব ছবি সিরিজেই রহস্য-কাহিনি। সায়ন্তনের ঝুলি মানেই কি গুপ্তধনের খোঁজ, রহস্য-রোমাঞ্চ, গোয়েন্দার গল্প?
হ্যাঁ, তা বটে। আসলে রহস্য-রোমাঞ্চ আমার চিরকালই প্রিয়। পড়তেও ভালবাসতাম। এ সব বই ঘিরেই বড় হওয়া। আর তখনই ঠিক করেছিলাম, প্রথম ছবি বানালে অ্যাডভেঞ্চার বা থ্রিলারই বানাব। সেই ভাবনা থেকেই ২০১৭-য় ‘যকের ধন’ করা। সেই ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই ডাক এল প্রযোজনা সংস্থা থেকে। ‘ব্যোমকেশ’কে নিয়ে ছবি করার ডাক। আর এই ঘরানায় আমার দু’টি ছবি সফল হওয়ার পরে প্রযোজকদের ধারণা হল অ্যাডভেঞ্চার বা থ্রিলার ছবি আমি ভালই বানাব!
প্রশ্ন: আর সেই অঙ্ক কষেই আপনার নামটাও সায়ন্তন ‘থ্রিলার’ ঘোষাল হয়ে দাঁড়াল?
(হাসি) অঙ্ক-টঙ্ক নেই! তবে হ্যাঁ এই নাম হলে আপত্তিও নেই মোটে। বরং উপভোগই করব। কারণ রহস্য-রোমাঞ্চ, ছবি বা সিরিজের শেষ অবধি টানটান উত্তেজনা তো আমার নিজেরও খুব পছন্দের বিষয়।
প্রশ্ন: ইদানীং ছবি বা সিরিজ দুই ক্ষেত্রেই থ্রিলারের রমরমা। সেটা কি সাফল্যের হিসেব কষে?
সে তো হওয়ারই কথা। কোনও একটা ঘরানার ছবি বা সিরিজ যদি ধারাবাহিক ভাবে সাফল্যের মুখ দেখে, স্বাভাবিক ভাবেই সব প্রযোজক চাইবেন সেই ধারারই ছবি বা সিরিজ করতে। আর নতুন পরিচালক বা প্রযোজকের লক্ষ্যই হয় দর্শক টানা এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে বসিয়ে রাখা। থ্রিলারের মধ্যে সেই উপাদান রয়েছে। আর সাফল্যের ফর্মুলা মেনে ছবি করতেও থ্রিলারের দিকেই ঝোঁক বেশি থাকছে সবার।
প্রশ্ন: আপনিও কি সেই কারণেই পরপর থ্রিলারে ঝুঁকছেন?
একেবারেই না। বরং নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিতেই এ ধরনের ছবি বানাচ্ছি। আমি যখন ‘যকের ধন’ বানিয়েছি, তখনও পর্যন্ত আর কেউ কিন্তু এমন বাংলায় এমন গুপ্তধন খোঁজার ছবি করেনি। আবার ‘আলিনগরের গোলকধাঁধা’র ধাঁচের ছবিও বাংলায় আমিই প্রথম তৈরি করেছি। দুটোই নিজের পছন্দ অনুযায়ী। সাফল্যের ছকে বাঁধা পথে নয়।
প্রশ্ন: এত থ্রিলারের ছড়াছড়ি। একঘেয়েমি তৈরি হবে না? দর্শক যদি মুখ ফেরান?
দেখুন, একমাত্র রহস্যকাহিনিই পাঠক বা দর্শককে শেষ অবধি টেনে বসিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে। এই ধারার গল্পেল পুরনো হয়ে যাওয়া কঠিন। তা না হলে এত বছর পরেও মানুষ শার্লক, ফেলুদা বা ব্যোমকেশে মজে থাকে? তবে হ্যাঁ, এই একঘেয়েমির দিকটা মাথায় রেখে আমি থ্রিলার বানালেও তাতে নতুন ধরনের স্বাদ আনার চেষ্টা করছি ইদানীং। ‘মৌচাক’-এ এক রাতের রহস্য, ‘ইন্দু’ এক সদ্যবিবাহিতার জীবনে সাসপেন্স, ‘গোরা’য় হাসির খোরাক জোগানো গোয়েন্দা। আবার ছবির ক্ষেত্রে ‘স্বস্তিক সংকেত’-এ ইতিহাসের একটা অধ্যায় তুলে আনা। চেষ্টা করছি রহস্য রোমাঞ্চেও হরেক স্বাদ বদলের। পরের ছবি ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে’-তেও ইতিহাসের সঙ্গে মিশবে বর্তমান সময়ের গল্প। অবশ্য করোনার কারণে তার শ্যুটিং এখনও শুরু করা যায়নি।
প্রশ্ন: হাসির খোরাক জোগানো গোয়েন্দা কিন্তু ‘গোরা’র আগেও আছে। ‘একেনবাবু’। অনেকেই বলছেন, কমেডির মোড়কে গোয়েন্দা গল্প সফল হচ্ছে, তাই ‘একেনবাবু’র দেখাদেখি ‘গোরা’ তৈরি হল। কী বলবেন?
‘একেনবাবু’ সিরিজ আমার দেখা হয়নি। তাই তার দেখাদেখি ‘গোরা’ও হাসির খোরাক দেওয়া গোয়েন্দা হয়ে উঠল, এটা বলতে পারছি না। ‘গোরা’ এ ভাবেই ভাবা, লেখা এবং তৈরি। প্রথম থেকেই। এক জন গোয়েন্দা তিনি ও রকম বিটকেল গান করেন। নিজের কাজের জিনিসটুকু ছাড়া বাকি সব বেমালুম ভুলে যান— ঋত্বিক চক্রবর্তীর অভিনয়ের গুণে খুব প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে চরিত্রটা। তা ছাড়া, চেষ্টা করেছি শেষ অবধি টানটান উত্তেজনা ধরে রাখতে। অনেকেই আমায় বলেছেন, দারুণ লেগেছে সিরিজটা।
প্রশ্ন: এ পর্যন্ত আপনার ছবি নারীবর্জিত কিংবা গল্পে মেয়েরা নেহাতই পার্শ্বচরিত্রে। ‘ইন্দু’ বা ‘মৌচাক’ ছাড়া সিরিজেও তা-ই বলা চলে। নারীতে অ্যালার্জি?
(হা হা হাসি) না, না, মোটেই অ্যালার্জি নয়। বরং জীবনের প্রথম অনেক কিছু শেখা মেয়েদের কাছেই। আমার প্রথম টিচার ছিলেন মহিলা। সাইকেলও শিখেছি এক মেয়ের কাছেই। বাড়িতে বউ আছে। মেয়েও আছে। তবে হ্যাঁ, চার-পাঁচ বছরের কেরিয়ারে সত্যিই ছবি-সিরিজে মেয়েদের খানিকটা ব্রাত্য করে ফেলেছিলাম। অনিচ্ছাকৃত ভাবে এবং অজান্তেই। সেই ভুল এখন শুধরে নিচ্ছি। ‘স্বস্তিক সংকেত’-এই গল্পের কেন্দ্রে এক নারী চরিত্র। নুসরত জহান থাকছেন সেই ভূমিকায়।
প্রশ্ন: নারীদের গল্পে সে ভাবে জায়গা না দেওয়া ভুল হয়েছিল মানছেন তা হলে? ভুলটা ধরিয়ে দিল কি কোনও মহিলা?
(আবার হাসি) ওই আর কী! ভুল তো হচ্ছিলই। মহিলা দর্শকদের খানিকটা হারাচ্ছিলাম আমরা। সেটাই এ বার শুধরে নিতে চাই।
প্রশ্ন: মহিলা গোয়েন্দাকে নিয়ে ছবি করার কথা ভাববেন না?
হ্যাঁ ভেবেছি তো। বানিয়েও ফেলেছি। খুব তাড়াতাড়ি দেখতে পাবেন। ‘স্বস্তিক সংকেত’-এ রহস্যভেদ তো করবেন এক মহিলাই।
প্রশ্ন: থ্রিলার, রহস্য-রোমাঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে অন্য কোনও ধারার ছবি বা সিরিজ করতে ইচ্ছে করে না?
হ্যাঁ করে তো। সত্যিই এ বার একটা অন্য ধারার ছবি বানানোর কথা ভাবছি। জীবনীচিত্র।
প্রশ্ন: তাই নাকি? কাকে নিয়ে?
সে সব এখন মোটেই ফাঁস করতে চাই না। এক বৈজ্ঞানিকের জীবনের অজানা কাহিনি। এর বেশি আর কিছু বলতে চাই না এখনই। হাতে পরপর কাজ। ‘গোরা’, ‘ইন্দু’র দ্বিতীয় সিজন বানাতে হবে। দেখা যাক, তার পরে কবে কী করতে পারি।
প্রশ্ন: আর নিজের জীবনে? সেখানেও কি নতুন কেউ আসছে?
না, না। আমি একেবারেই ও সবে নেই। পুরোদস্তুর ফ্যামিলি ম্যান। বাবা, মা, বউ, বাচ্চা। কাজ শেষ হলে সোজা বাড়ি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy