যাঁরা ‘রামধনু’ দেখেছেন তাঁদের নিশ্চয়ই মনে আছে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় আর আমার অভিনীত সেই দৃশ্যটি। যেখানে রচনা বলবেন, চাকরি বা শিক্ষাক্ষেত্রে পরীক্ষা দেওয়ার সময় ইংরেজিতে কথা বলতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। যে ভাষায় স্বছন্দ সেই ভাষাতেই ইন্টারভিউ দেওয়া যেতে পারে। কী সুন্দর রচনা ওই দৃশ্যে আবৃত্তি করেছিলেন, ‘কোন দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শ্যামল...’।
একই ভাবে আমাদের আগামী ছবি ‘আমার বস’-এ বাংলা ভাষার গুরুত্ব থাকবে। গল্প আবর্তিত হবে এক প্রকাশনা সংস্থাকে কেন্দ্র করে। ‘আমার বস’-এর কথা উঠতেই একটা মজার কথা মনে পড়ে গেল। রাখি গুলজ়ার এই ছবি দিয়ে অনেক বছর পরে বাংলা ছবিতে ফিরছেন। তার আগে ওঁকে গল্প শোনাতে মুম্বইয়ে দিদির বাড়ি যাব। ফোনে ঠিকানা জানতে চেয়েছিলাম। রাখিদি সঙ্গে সঙ্গে মজা করে বলে উঠলেন, “ঠিকানা চাও? বলছি শোনো, আমড়াতলার মোড়ে...!” বলে সুকুমার রায়ের লেখা ‘ঠিকানা’ কবিতাটি গড়গড় করে বলে গেলেন! এই হল বাঙালি। বাংলা কবিতা, গান ছাড়া থাকতেই পারে না।

এক ফ্রেমে রাখি গুলজ়ার, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
মাতৃভাষা আসলে মাতৃদুগ্ধ-সম! আমি অক্ষরে অক্ষরে মানি সে কথা। আমার নিখুঁত বাংলা উচ্চারণ মায়ের থেকে শেখা। রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াশোনা করতাম। স্কুলে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী, কবিতা পড়ানো হত। সে সব আবৃত্তি করতে হত। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণি। কিছুতেই ‘বজ্র’ উচ্চারণ করতে পারছি না। মা অসম্ভব ধৈর্য ধরে উচ্চারণ শিখিয়েছিলেন। বকুনিও দিয়েছিলেন, বাঙালি হয়েও সামান্য একটা যুক্তাক্ষর উচ্চারণ করতে পারছি না!
আরও পড়ুন:
বড় হয়ে নান্দীকার নাট্যদলে ভর্তি হলাম। নাটক শিখব, মঞ্চে অভিনয় করব। সেখানে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত হাতে ধরে শেখালেন, ‘বিজ্ঞান’, ‘অভিজ্ঞতা’ উচ্চারণের সময় চন্দ্রবিন্দু-যোগে ‘জ্ঞ’ উচ্চারণ করতে হয়। এ ভাবেই নিজের মধ্যে ভাষাটিকে লালন করতে করতে আমার বেড়ে ওঠা। ইদানীং বাংলা নাকি নিজভূমেই পরবাসে। কানে আসে, এই প্রজন্ম নাকি বাংলা ভাষার সঙ্গে অন্যান্য ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে উচ্চারণ করে! চারিদিকে তাই নিয়ে ‘গেল গেল’ রব। আমার বিশ্বাস, কেউ মনেপ্রাণে বাঙালি হলে সময়ে-অসময়ে মুখ দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত বা কবিতা বেরোবেই। প্রবাসীরা কিন্তু এ ভাবেই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখছেন।