Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Tenet

নোলানোচিত, কিন্তু সেরার মধ্যে নয়

ছবিতে মাথা গুলিয়ে দেওয়ার যাবতীয় উপাদান রেখেছেন পরিচালক, যেমনটা তাঁর প্রতিটি ছবিতে থাকে।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:০১
Share: Save:

টেনেট
পরিচালনা: ক্রিস্টোফার নোলান
অভিনয়: জন ডেভিড ওয়াশিংটন, রবার্ট প্যাটিনসন, ডিম্পল কাপাডিয়া
৬.৫/১০

এর আগের বার একটা গোটা যুদ্ধের ছবি তিনি দেখিয়েছিলেন প্রতিপক্ষকে একবারের জন্যও ফ্রেমে না এনে। এ বার প্রোটাগনিস্টের নামটাই বললেন না। ‘টেনেট’-এর প্রায় প্রতিটি ফ্রেমে জন ডেভিড ওয়াশিংটনের নামহীন উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয়, ছবির পরিচালকের নাম ক্রিস্টোফার নোলান। ছবিতে ওয়াশিংটনের মুখ দিয়েই বলানো হয়েছে, ‘অ্যাই অ্যাম দ্য প্রোটাগনিস্ট’। একাধিক বার এই সংলাপ উচ্চারিত হয়েছে কিন্তু ভিন্ন অর্থে। সেই অর্থের মর্মোদ্ধার করতে হলে নোলান রচিত ভুলভুলাইয়ায় আড়াই ঘণ্টা সফর করতে হবে।

ছবিতে মাথা গুলিয়ে দেওয়ার যাবতীয় উপাদান রেখেছেন পরিচালক, যেমনটা তাঁর প্রতিটি ছবিতে থাকে। আর এই ‘প্রতিটি ছবি’ই মুশকিল করে ফেলেছে। টাইম অ্যান্ড স্পেস— নোলানের সিগনেচার স্টাইল। ‘মেমেন্টো’ থেকে ‘ইন্টারস্টেলার’ সর্বত্রই এই খেলাটা তিনি খেলেছেন। এমনকি, তাঁর ওয়র ফিল্ম ‘ডানকার্ক’-এও জল-স্থল-আকাশের লড়াইকে আলাদা টাইমফ্রেমে বেঁধেছিলেন। ‘টেনেট’ দেখতে দেখতে এ প্রশ্ন জাগে স্রষ্টা কি নিজের সৃষ্টির জালেই ক্রমশ আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন?

প্লট হিসেবে ‘টেনেট’ আহামরি কিছু নয়। প্লুটোনিয়াম, মনুষ্যত্বের অস্তিত্ব বাঁচানো, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আটকানো— হলিউডের অতিপরিচিত এবং পছন্দের বিষয়কে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখিয়েছেন নোলান। সহজ করে বলতে গেলে, এ যেন জেমস বন্ডের প্লটে নোলান টাচ। সিআইএ এজেন্ট ওয়াশিংটন গোপন মিশনে কিয়েভ যায়। মিশনের আড়ালে চলে তার সত্যনিষ্ঠার পরীক্ষা। ছবিতে কোল্ড ওয়রের রেফারেন্স থাকলেও তা খুবই হালকা। বরং অস্ত্রের চোরাকারবার এবং প্লুটোনিয়ামের দখল নেওয়ার উপরে কাহিনির ফোকাস বেশি।

অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ জুড়ে চলা ছবির টাইমফ্রেম সত্যিই জটিল ধাঁধার মতো। কিন্তু নোলানের ছবি দেখতে হলে পরিচালকের উপরে ভরসা করে ধৈর্য ধরতে হবে। ছবি জুড়ে যে সুতোগুলো তিনি ছড়িয়ে রেখেছিলেন, তা যথাসময়ে গুটিয়ে নিয়েছেন। ছবির এক জায়গায় প্রোটাগনিস্টকে তার সহকারী নীল (রবার্ট প্যাটিনসন) বলছে, ‘‘ডাজ় ইয়োর হেড হার্ট ইয়েট?’ এটিই ছবির সারবত্তা। দর্শকের মাথা গুলিয়ে দিতে পরিচালক সিদ্ধহস্ত। অ্যাকশন-থ্রিলার-এসপিয়নাজ ড্রামা-সাইফাই— এত জ়ঁর যদি একটা ছবিতে থাকে, তা হলে কী হতে পারে, সেটা সহজেই অনুমেয়। ‘টেনেট’-এর সঙ্গে পরিচালকের ‘ইনসেপশন’-এর অনেক বেশি মিল। এই ছবিতে ক্যাথরিন (এলিজ়াবেথ ডিবেকি) এবং তার সন্তানকে কেন্দ্র করে একটা আবেগের জায়গা বোনার চেষ্টা ছিল। কিন্তু সেই আবেগ মন ছুঁতে পারে না। আট মাস পরে সিনেমা হলে গিয়ে আড়াই ঘণ্টার ছবি দেখা খানিক ক্লান্তিকর।

ছবির খুব অল্প দৃশ্যে মুম্বই এলেও, অস্ত্রের চোরা ব্যবসায়ী প্রিয়ার চরিত্রে ডিম্পল কাপাডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। বয়সোচিত চরিত্রে ডিম্পলকে দেখতে ভাল লেগেছে। ছবিতে প্যাটিনসন আর ওয়াশিংটনের বন্ধুত্বের জায়গাগুলো বেশ ভাল। এ ছবিতে ওয়াশিংটনই সর্বেসর্বা। পরিমিত অভিনয় দিয়ে চরিত্রটা বিশ্বাসযোগ্য করেছেন তিনি। ছবির খলচরিত্র আন্দ্রেই স্যাটরের ভূমিকায় কেনেথ ব্রানাও ভাল।

ছবিতে দেখার মতো কিছু অ্যাকশন দৃশ্য শুট করেছেন সিনেম্যাটোগ্রাফার হয়েতে ভান হয়েতেমা। অসলোর বিমানবন্দরের বিল্ডিং ভেঙে ঢুকে পড়া প্লেনের দৃশ্যটা বাস্তবে শুট করা হয়েছে ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়। তার সঙ্গে ছবির সাউন্ড এফেক্ট এক অদ্ভুত আবহ তৈরি করে। দ্বিতীয়ার্ধের কার চেজ়িং বা সাইবেরিয়ার অ্যাকশন দৃশ্যগুলো বুঝিয়ে দেয়, কেন কিছু ছবি শুধুই বড় পর্দার জন্য তৈরি। কেন ওটিটি রিলিজ়ের বদলে পরিচালক যে দেশে যখন সিনেমা হল খুলেছে, সেখানে ছবি রিলিজ় করিয়েছেন। আর বড় পর্দায় এ ছবি দেখার অভিজ্ঞতার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সিনেমার সার্থকতা।

অন্য বিষয়গুলি:

Tenet Christopher Nolan Hollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy