Advertisement
E-Paper

‘ছবিতে আমি যেন নিজেকেও দেখলাম,’ ‘দাবাড়ু’ দেখে লিখলেন দিব্যেন্দু বড়ুয়া

ছবিটির উদ্যোগ নেওয়াই বড় প্রাপ্তি। একটা সময়ে বলা হত, ‘তাস-দাবা-পাশা, তিন সর্বনাশা’।

Chess grandmaster Dibyendu Baruah shares his views on Dabaru

‘দাবাড়ু’ ছবির একটি দৃশ্যে ঋতুপর্ণা ও সমদর্শী। ছবি: সংগৃহীত।

দিব্যেন্দু বড়ুয়া

দিব্যেন্দু বড়ুয়া

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৪ ১২:০৩
Share
Save

আমার জীবন জুড়ে সাদা আর কালোর খেলা। বাজিমাত বা ডাহা হার। শেষ থেকে শুরু। মগজাস্ত্রের শান দেওয়া। আমাদের মতো দাবাড়ুদের সেই জীবন ছবিতে দেখলাম।

জীবনে প্রথম কোনও ছবি দেখে সমালোচনা লিখছি। ছবির প্রযুক্তিগত দিকগুলি নিয়ে কিছু বলতে পারব না। ও সব আমি জানি না। আমি কেবল জীবন দেখছিলাম। সেই বহু পরিচিত সূর্যশেখরের (গঙ্গোপাধ্যায়) জীবন নিয়ে ভাবছিলাম। দাবা নিয়ে ছবি করার জন্যই সাহসের দরকার পড়ে। ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’র পরে এই প্রথম দাবা নিয়ে কোনও ছবি দেখলাম। আর আমাদের দেশে তো দাবাড়ু নিয়ে ছবি দেখিনি।

নিজেকেই দেখছিলাম যেন! আমি যখন দাবা নিয়ে মেতেছি, আমার বন্ধুরা ফুটবল-ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকত। বলত, “দাবা বোরিং, কোনও উত্তেজনা নেই।’’ ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হল, দাবার বোর্ডের ভিতরে যে উত্তেজনা হয়, যুদ্ধটা চলে, সেটা এই ছবি তুলে ধরেছে। সংলাপটা নাড়িয়ে দেয়, “চৌষট্টি ঘুঁটির দান যেন এক একটা মিসাইল।’’

এক জন খেলোয়াড় তৈরি হওয়ার পিছনে তাঁর পরিবারের আত্মত্যাগের রক্তাক্ত ইতিহাস থাকে। প্রত্যয়ী মা, বাবা, দাদু, কোচ, বন্ধুর সঙ্গ লাগে— এই ছবি সেই সব মানুষগুলিকে সামনে নিয়ে আসে। তবে কয়েক জনকে খুঁজে পাইনি এই ছবিটিতে।

ছবিতে সূর্যের দিদির কোনও উল্লেখ নেই। একটি পরিবারে যখন একাধিক ভাইবোন থাকেন, তখন প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু ভূমিকা থাকে। তাঁদের একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, বকা খাওয়া, পরস্পরকে উৎসাহ জাগানো অনেক কিছু বিষয় থাকে। চার ভাই-বোনের মধ্যে এক জন হয়তো সফল হলেন, বাকিরা কী ভাবে উৎসাহ জাগালেন, সেটা দেখতে পেলে ভাল লাগত!

যে দাদু জিনিস বিক্রি করে দাবার বোর্ড এনে দেন, সেই দাদুকে দেখে খুব ভাল লাগছিল। চরিত্রটির অভিনয়ে দীপঙ্কর দে-কে বেশ লাগল।

Chess grandmaster Dibyendu Baruah shares his views on Dabaru

ছবির একটি দৃশ্যে চিরঞ্জিৎ ও সমদর্শী। ছবি: সংগৃহীত।

ছবি নিয়ে লিখতে বসে, বার বার ওই দৃশ্য ভেসে আসছে, যেখানে ছবির সৌর বিদেশে দাবা প্রতিযোগিতায় যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করতে পারছে না। ভেঙে পড়ছে।

আমি সূর্যের আগের প্রজন্মের গ্র্যান্ড মাস্টার। কিন্তু ওই ভেঙে যাওয়ার সময় যে আমাকেও পেরোতে হয়েছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিদেশে গিয়ে লড়াই করার উদ্যম দেখাতে অনেক ‘না’-কে ‘হ্যাঁ’ করতে হয়েছে। মনে পড়ছিল। এই সময়টা এক জন খেলোয়াড়ের জীবনে কী যে মর্মান্তিক! গলা বুজে আসে। কিন্তু ছবির সৌর মাটি থেকে আকাশ ছুঁতে পারে। এখানেই ‘দাবাড়ু’ ছবির সার্থকতা।

কুর্নিশ প্রযোজক নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে, এক দাবাড়ুর জীবনকে বড় পর্দায় আনার জন্য। গল্পটি ভারী সুন্দর এগিয়েছে পরিচালক পথিকৃত বসুর পরিচালনায়।

যে বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের দাবাড়ু তৈরি করার জন্য প্রাণপাত করে দিচ্ছেন, এই ছবি তাঁদের। এই ছবি সূর্যের। ছবির সৌরের। আবার একাংশ মধ্যবিত্ত বাঙালি যাঁরা খেলাকে পেশা করে বাঁচতে চাইছেন, তাঁদের।

হাতিবাগানে গ্র্যান্ড মাস্টার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের বেড়ে ওঠাটা আমি দেখেছি। আমি ওঁর সঙ্গে অনেকটাই সময় কাটিয়েছি। ওঁর বাড়ি গিয়েছি। ওঁর সঙ্গে খেলা অভ্যাস করেছি। ওঁর পরিবারের সকলকে খুব কাছ থেকে জেনেছি।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

সূর্যর বেড়ে ওঠায় আরও কয়েক জনের ভূমিকা ছিল, যাঁদের ছবিতে দেখতে পাইনি। বাকিদের মধ্যে থেকে সূর্যই গ্র্যান্ড মাস্টার হয়ে উঠলেন। তাই সেই বাকি দাবাড়ুদের সফরও দেখতে পেলে ভাল লাগত। সূর্যের সঙ্গে অন্যরা, সন্দীপন-নীলোৎপল এই দু’জনও এক সঙ্গেই কোচিং করেছেন। ওঁদের ব্যাপারও যদি একটু কিছু দেখা যেত ভাল লাগত।

হয়তো আমি ওঁর জীবন জানি বলে মিলিয়ে মিলিয়ে দেখছি। আর একটা কথা, দাদুর মৃত্যুটা যে ভাবে দেখানো হয়েছে, সেটি ঠিক ভাবে গ্রহণ করতে পারিনি। দিদাকেও খুঁজেছি। তবে আর কারও এ সব মনে হবে না। আর ছবির সৌর হুবহু কেনই বা সূর্যের জীবনের সব কথা বলবে?

অভিনয়ের দিক থেকে দেখতে গেলে প্রত্যেকে ভাল কাজ করেছেন। মায়ের চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নজর কেড়েছেন। গ্ল্যামার দুনিয়ার ডাকসাইটে অভিনেত্রী সাদামাঠা মায়ের চরিত্রের ছেলের জন্য লড়াই করেছেন এই ছবিতে। তিনি সূর্যের সত্যিকারের মা হয়ে উঠেছেন। কোচ হিসেবে কৌশিক সেনকে খুবই ভাল মানিয়েছে। ভাল লেগেছে আর এক কোচের চরিত্রে চিরঞ্জিৎকেও। কিন্তু গ্র্যান্ড মাস্টার আনন্দের সম্বন্ধে আর একটু দেখালে ভাল লাগত।

বাবার চরিত্রে শঙ্কর চক্রবর্তী ভাল অভিনয় করেছেন। দাবাকে নেশা বলে দাবার বিরুদ্ধে কথা বলা বাবা যখন নিজেই ছেলেকে যুদ্ধে পাঠান, সেই দৃশ্য দেখতে বেশ লাগে!

এ দেশে খেলোয়াড় তৈরি হওয়ার পর ‘রাষ্ট্র’ পাশে আসে। বিদেশে ঠিক তার উল্টো। খেলোয়াড় তৈরির সময় থেকেই ‘রাষ্ট্র’ তার দায়িত্ব নেয়। আমি যে যুগে দাবা খেলেছি, সে যুগে তো প্রায় কিছুই ছিল না।

ছবিটি দেখতে দেখতে আমার বেড়ে ওঠার বহু কথাই মাথায় আসছিল। সূর্য ওঁর সময়ে বেশ কিছু জিনিস পেয়েছেন, যা আমি আমার সময়ে পাইনি। আমার সময়ে কোচিং কেন্দ্র, কোচ এ সব ছিল না। তাই নিজের উদ্যোগে অনেক বেশি খাটতে হয়েছে। সূর্যের জন্ম ১৯৮৪ সালে। আর আমি ১৯৭২ থেকে খেলেছি। তাই আমার সময়ে লড়াইও বেশি ছিল। বহু জিনিস দেখে মনে হয়েছে, এমন তো আমার সঙ্গে আরও বেশি হয়েছে। যেমন, বর্তমান সময়ের লড়াইটা সূর্যদের সময় থেকেও কম। যুগের বিবর্তনের সঙ্গে মানুষ সচ্ছল হয়েছে।

একটা সময়ে বলা হত, ‘তাস-দাবা-পাশা, তিন সর্বনাশা’ ! এই ছবি হয়তো দাবাকে ‘সর্বনাশা’ নয়, ‘আশা’-র আলো দেখাবে।

Film Review Rituparna Sengupta Chiranjeet Chakraborty New Bengali Film Nandita Roy Shiboprosad Mukherjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।