Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Interview

বউকে চাঁদের আলোয় গান শোনাই, মধ্যবয়সের প্রেমে দিব্যি আছি: বাবুল

আমি বলতে চাই না বয়স বাড়ছে। তবে এত দৌড়ঝাঁপ তো! নিজের শরীরের দিকে একটু নজর দিচ্ছি।

আমি কলেজে বেশ স্মার্ট ছেলে ছিলাম।

আমি কলেজে বেশ স্মার্ট ছেলে ছিলাম।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৩৩
Share: Save:

ছাইরঙা ব্লেজার, কালো শার্ট আর সাদা পাজামায় কলকাতার এক পাঁচতারায় নায়কসুলভ ভঙ্গিতে ‘জুম মিটে’ ব্যস্ত তিনি। গায়ক-অভিনেতা বাবুল সুপ্রিয়। সদ্য শুরু করছেন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। লিকার চা হাতে শুরু হল আড্ডা।

প্রশ্ন: হঠাৎ ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কেন?

বাবুল সুপ্রিয়: আমি বলতে চাই না বয়স বাড়ছে। তবে এত দৌড়ঝাঁপ তো! নিজের শরীরের দিকে একটু নজর দিচ্ছি। ছোটবেলার সেই আলু-পোস্ত, কষা মাংসের ঝোল আর নয়। অনেক কাজ করতে হলে শরীরটা ঠিক রাখতে হবে।

প্রশ্ন: শরীরের প্রতি এত নজর! সঙ্গীতশিল্পী বাবুল কি তবে এবার অভিনয়ের দিকে বেশি মন দেবেন?

বাবুল: অভিনয় তো করেই চলেছি। লকডাউন না থাকলে কৌশিক গঙ্গোপাধায়ের ‘লক্ষ্মীছেলে’ দেখতে পেতেন। ওখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজনীতিবিদের চরিত্র করেছি। সব দিক সামলে অভিনয়ের সুযোগ এলে নিশ্চয়ই করব। এই দেখুন না, বেশ অনেকদিন পর মিউজিক ভিডিয়ো লঞ্চ করলাম ‘শায়রা’।

সব দিক সামলে অভিনয়ের সুযোগ এলে নিশ্চয়ই করব।​

প্রশ্ন: ইতিমধ্যেই আপনার নতুন গান ‘শায়রা’র ২ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। যা বলছে, মানুষ এখনও প্রেমের গান শুনতে ভালবাসে!

বাবুল: গানটা এত মানুষের ভাল লাগবে ভাবিনি। সকলে বলছে, আমার গলা আরও পরিণত হয়েছে। খুব ভাল রেসপন্স! তবে এই গান নিয়ে আমার নিজস্ব ভাবনা ছিল। সাধারণত রোম্যান্টিক গানের দৃশ্যে দেখানো হয় কলেজের প্রেম দাম্পত্য অবধি গড়ায় না। দেখা যায় সেই প্রেমিকা এখন বিবাহিতা। বাচ্চার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটছেন— এই রকম। আমি ‘শায়রা’তে কলেজের প্রেমকে পরিণত প্রেমে নিয়ে যেতে চেয়েছি। সাহেব ভট্টাচার্য কলেজে পড়া আমার মতোই এক গায়কের চরিত্র করেছে। কিন্তু পার্নো, ওই ভিডিয়োর নায়িকা, কলেজ আর পরিণত দুই চরিত্রেই অভিনয় করেছে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের টিম খুব ভাল কাজ করেছে।

প্রশ্ন: আপনার নিজের জীবনে তো কলেজপ্রেম পরিণতি পায়নি!

বাবুল: নাহ্। শ্রীরামপুর কলেজে দু’জনকে ভাল লেগেছিল সেই সুপ্রিয় বড়ালের। কত শখ ছিল, নৌকা ভাড়া করে হাওড়া ব্রিজের তলায় ‘চিঙ্গারি কোই ভড়কে’ শোনাব! মাঝিদেরও আগে পয়সা দিয়ে ফিট করে রাখতাম। আমি কলেজে বেশ স্মার্ট ছেলে ছিলাম। কিন্তু নৌকায় তাদের কেউ উঠল না। আমি ওদের বুঝিয়েছিলাম, বড় হলে আমার নাম হবে। ওরা বোঝেনি। ওদের বাবারাও রাজি ছিল না তখনকার ওই গায়কের সঙ্গে বিয়ে দিতে।

প্রশ্ন: আগে ২৪ ঘন্টাই গান করতেন। এখন?

বাবুল: রাত ১২টায় বসি। সকলের ডেস্কটপের তলায় যেমন কী বোর্ড থাকে, আমার তেমন থাকে সিন্থেসাইজার। ওটা ধরে ‘সা’ লাগাই। গান করি। আমি যে খুব মন্দিরে যাই, আংটি পরি, তা কিন্তু একেবারেই নয়।আমার কাছে সুরই ঈশ্বর। সব কাজ সেরে রাতের বেলা ওই সুরে ডুবে থাকি।

চাঁদের আলোয় বউয়ের জন্য গান গাইলাম, ‘চাঁদ ছুপা বাদল মে’।


প্রশ্ন: ডায়েরি লেখা চলছে?

বাবুল: হ্যাঁ। রোজ। আমি তো মজা করে বলি, আমি যদি কখনও খুন হই, আমার লাল ডায়েরিতে কিন্তু সব বলা থাকবে!

প্রশ্ন: মুম্বই তো এখন বেসুরো গায়কদের দখলে। কী বলবেন?

বাবুল: দেখুন, আমি খুব পজিটিভ মানুষ। কলকাতায় যে বার ‘হোপ ৮৬’ হয়, সেবার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সারা রাতের নাচ-গানের এই অনুষ্ঠান কী অপসংস্কৃতি? উনি বলেছিলেন, এত অসংখ্য মানুষ সারারাত ধরে এই অনুষ্ঠান শুনেছে। উপভোগ করেছে। আমি একে খারাপ বলতে যাব কেন? ওই কথাটা সারাজীবন মনে রাখব। আমার বাড়িতে আমার সাড়ে তিন বছরের মেয়েও সকালে এখনকার পাঞ্জাবি গান শোনে। আমার বউ শোনে। আমি জানি ওইসব গানে সুর নেই। ওগুলো সব স্টুডিয়ো প্রোডাক্ট। এই বদল আচমকাই এসেছে। এখন বহু বিখ্যাত গায়ক আছে, যারা গানটা গাইতেই পারে না! কম্পিউটারে ‘এনটার’ মারলেই সুর চলে আসছে এখন। কিন্তু তার মধ্যেই রিফ্রেশিং অরিজিৎ সিংহ। অঙ্কিত তিয়ারী। অরিজিৎ যেভাবে নিজেকে তৈরি করল, সেটা দেখার মতো! এই যুগকেও আমাদের স্যালুট করতে হবে।

প্রশ্ন: এমন কেউ আছেন, যাঁর লিপে গান গাইতে ইচ্ছে করে?

বাবুল: টম ক্রুজের জন্য গাওয়ার ইচ্ছে ছিল। রোম্যান্টিক সং। আর এখনকার সময়ে রণবীর সিংহের এনার্জি আমার খুব ভাল লাগে। ‘কহোনা প্যার হ্যায়’ বা ‘হটা সাওয়ান কি ঘটা’র মতো গান গাইলে বেশ জমে যাবে। রণবীর কপূরের জন্যও গাইতে ইচ্ছে করে। দেখা যাক!

প্রশ্ন: এখনও ফুটবল খেলেন?

বাবুল: হ্যাঁ। রাতে খেলি। তবে একটা সময় ছিল, যখন আমায় বাছতে হয়েছিল আমি গান না ক্রিকেট— কোনটা সিরিয়াসলি করব। ভোরবেলা ক্রিকেট কোচিং শুরু হত আর ওই একই সময়ে রেওয়াজ। আমার মনে হয়েছিল, আমার গান গাওয়ার সহজাত দক্ষতাটা ক্রিকেটের চেয়ে বেশি। তাই গান বাছলাম। আর সেই গান আমায় এতদূর এনেছে। বাবা জোর করে জয়েন্ট এনট্রান্সে বসিয়েছিলেন। মনে আছে, খাতায় মা কালীর ছবি এঁকে চলে এসেছিলাম। তবে জীবনে ‘নাউন’ নয়। ‘প্রপার নাউন’ হওয়ার ইচ্ছে ছিল আমার। আমি এখন যা, সেটা নিয়ে বেশ খুশি। যেটা যখন করি মন দিয়ে করি। মন্ত্রীর কেন গানের অ্যালবাম বেরোল— এসব নিয়ে ভাবি না। এখন যেমন অভিনব মাস্ক তৈরি করার চেষ্টায় আছি। এক বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে কাজ করছি। দেখি, প্রকাশ্যে এলে সবাই পরতে পারবে সেই মাস্ক। আমি আসলে নানা কাজ নিয়ে থাকতে চাই। আমি একরকমই আছি। আবেগপ্রবণ। এখনও টুইটে কেউ কটুকথা বললে আমার দুঃখ হয়। আমি আগে একজন শিল্পী। তাই এই আবেগকে যত্নে রাখতে চাই।

প্রশ্ন: আর রোম্যান্স?

বাবুল: এই তো করবা চৌথের রাতে চাঁদ উঠতে বড্ড দেরি করছিল। ১০টা বাজিয়ে দিল। অপেক্ষা করছিলাম। বেশ লাগছিল। চাঁদ উঠল। আমার স্ত্রী আমার মুখে ওই জালের আলো নিয়ে আমায় দেখল। হিন্দি সিনেমায় যেভাবে করবা চৌথ হয়, আমার মা সেভাবে সব আয়োজন করেছিল। খুব মজা লাগছিল মায়ের উত্তেজনা দেখে। ছাঁকনির তলায় আবার প্রদীপ দিয়ে দিয়েছিল মা। চাঁদের আলোয় বউয়ের জন্য গান গাইলাম, ‘চাঁদ ছুপা বাদল মে’। ওই ছাঁকনির ভিতর দিয়ে বউয়ের ছবি তুললাম। এটাই আমার মধ্যবয়সী প্রেম। দিব্যি আছি এই নিয়ে।

অন্য বিষয়গুলি:

Interview Babul Supriyo BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy