জ়ারিনা ওয়াহব। ছবি: সংগৃহীত।
‘ম্যাঁয় মুলায়ম সিংহ যাদব’ ছবির প্রিমিয়ারে সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন জ়ারিনা ওয়াহব। কোনও পাঁচতারা হোটেলে নয়, বরং প্রযোজকের বাড়িতে সাদামাঠা ভাবে থাকতেই স্বচ্ছন্দ তিনি। কোনও রূপ্সজ্জা ছাড়াই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বসলেন। বললেন, “সাক্ষাৎকার বলে শুধু পরচুলা লাগিয়ে চলে এলাম।” শুরু হল সাক্ষাৎকার…
প্রশ্ন: মুলায়মের মায়ের চরিত্রে অভিনয়…
জ়ারিনা: মোদীজির মা হয়েছিলাম। মোদীর চরিত্রে বিবেক ওবেরয় অভিনয় করেছেন। এখন মুলায়ম সিংহ যাদবের মায়ের চরিত্রে। এত মহৎ লোকেদের মা হতে পারছি আর কী চাই! শুটিংও খুব ভাল হয়েছে। পুরো ইউনিট দুর্দান্ত।
প্রশ্ন: চরিত্রের বাস্তব জীবনযাপন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন?
জ়ারিনা: আমি বেশি গভীরে যাইনি। প্রয়োজন পড়েনি। পরিচালক যতটা বলেছিলেন সেই অনুযায়ী করেছি।
প্রশ্ন: জীবনীচিত্র হলে ছবি দেখার জন্য তৈরি থাকেন এক দল দর্শক। অন্য দিকে, কিছু দর্শক আগ্রহ না-ও দেখাতে পারেন?
জ়ারিনা: সচরাচর প্রচুর অ্যাকশন ও লাস্যময়ী ছবি হয়। আমাদের দেশের মহান ব্যক্তিত্বরা কী কী করেছেন তা দর্শকের জানা উচিত। কী ভাবে তাঁরা এই জায়গায় পৌঁছেছেন। পছন্দ করুক বা না করুক, তাঁদের জ্ঞান তো বৃদ্ধি পাবে। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে, তখন বোকার মতো চুপ করে না থেকে কিছু তথ্য তো অন্তত জেনে রাখা উচিত।
প্রশ্ন: সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে সমীকরণ কেমন?
জ়ারিনা: প্রত্যেকেই খুব ভাল। পর্দার ছেলেকে তো নিজের ছেলে ভাবতে শুরু করেছি। মিষ্টি ছেলে। শুটিং শেষে যে যার বাড়িতে। পরের দিন এসে আবার হইহই করে শুটিং।
হয়তো বড় কথা বলছি, কিন্তু চরিত্র হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগে না আমার। সেটে কেউ হয়তো বলল, “জ়ারিনাজি আপনি এত হাসছেন। এর পরে আপনার কান্নার দৃশ্য রয়েছে।” আমার কোনও অসুবিধা হয় না শট দিতে।
প্রশ্ন: অভিনয়ে আসার নেপথ্যে রাজ কপূর…
জ়ারিনা: রাজ কপূরকে নিয়ে এত খারাপ কথা লেখা হয়! আমার খুব খারাপ লাগে। উনি আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এমন নয়। উনি আমাকে নেওয়ার কথা ভাবেননি কখনও। পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে উনি যেতেন কারণ সেখানে কাছাকাছি ওঁর বাগানবাড়ি ছিল। ‘ববি’ ছবির সময় পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে আমরা যত জন ছিলাম, প্রত্যেককে খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাজ সাহেব। গান শোনাও হয়েছিল। ওঁর সামনে তো কথাই বের হচ্ছিল না আমাদের। হঠাৎ আমাকে বললেন, “তোমাকে ঝাড়ুদার মনে হচ্ছে।” আমি তো শুনে ভাবলাম, এত সুন্দর করে তৈরি হয়ে এসেছি তা-ও এ রকম মনে হল আমাকে দেখে! একটু খারাপও লেগেছিল। তা-ও রাজ কপূর বলেছেন মানে তখন আমাদের কাছে তা প্রশংসার মতোই। খাওয়াদাওয়ার পরে যখন আমরা বেরিয়ে আসছিলাম, তখন উনি বলেছিলেন, “জানো তোমাকে কেন ঝাড়ুদার বললাম? আমি ওয়াহিদা রহমানকে ঝাড়ুদার বলতাম।” তার মানে উনি আমাকে ওয়াহিদা রহমানের সঙ্গে তুলনা করলেন! এই হচ্ছে ঘটনা। লোকে সেটা নিয়ে কত কী গল্প বানিয়ে ফেলেছে!
প্রশ্ন: এখনও সাবলীল ভাবে কাজ করে চলেছেন। কাজ ও জীবনের মধ্যে সমতা বজায় রাখেন কী ভাবে?
জ়ারিনা: মাসে দশ থেকে বারো দিন কাজ করি আমি। বাকি দিনগুলি বাড়ির লোকজন আমাকে সহ্য করে। কাজ করতে ভালই লাগে। কাজ আমার কাছে অক্সিজেনের মতো।
প্রশ্ন: কেরিয়ারে শুরুর দিকে মহিলা হিসাবে ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিতে কতটা লড়াই করতে হয়েছিল?
জ়ারিনা: সত্যি কথা বলতে খুব একটা লড়াই করতে হয়নি। আমি তখন কিশোরী। নাচ শিখতাম। অভিনেত্রী হওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। ইচ্ছে ছিল, ছবিতে নাচের দৃশ্যে থাকব। আমাকে বলা হয়েছিল, “তুমি না শিশুশিল্পী, না পরিণত অভিনেত্রী! তুমি করবেটা কী!” আমি জানিয়েছিলাম, শুধু নাচ করতে চাই আমি। ছবিতে নায়িকার চরিত্র, খ্যাতি নিয়ে কোনও ভাবনা ছিল না আমার। বোনের চরিত্রে অভিনয় করব বলেছিলাম। সেই সময় দেব আনন্দ সাহেবের ছবির শুটিং চলছিল। আমাকে বলা হল, ছবিতে জ়িনাত আমনের ৪-৫ জন বোন রয়েছে। আমি একটি বোনের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি। শোনা মাত্রই নিজের কয়েকটি ছবি হাতে ছুটে সেটে পৌঁছে যাই আমি। ওখানে প্রোডাকশন ম্যানেজার বসতে বললেন আমাকে। হঠাৎ দেব সাহেব বেরিয়ে এসে বললেন “আমরা একসঙ্গে ছবি করছি।” উনি আমার ছবিও দেখতে চাননি। এখন একটা ছোট চরিত্রের জন্যও লম্বা লাইন দিতে হয় মানুষদের। সেই সময় পরিচালকেরা এক ঝলক দেখে বুঝে যেতেন কোন চরিত্রের জন্য কাকে কাস্ট করবেন। তখন সকলকে একই জায়গায় রাখা হত। নবাগত বলে যে আলাদা থাকার ব্যবস্থা হবে এ রকম ছিল না। আমরা প্রত্যেকেই জ়িনাতের সঙ্গে একই হোটেলে ছিলাম। ছবির নাম ছিল ‘ইশক ইশক ইশক’।
প্রশ্ন: সেই সময় আর বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে ফারাক কোথায়? কম সময়ে তারকার তকমা পেয়ে যাচ্ছেন অভিনেতারা?
জ়ারিনা: কিন্তু এখনকার অনেক অভিনেতাই বড়দের শ্রদ্ধা জানান। প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে দু’টি ছবি করেছি। যখনই আমি ঘরে ঢুকতাম, ও উঠে দাঁড়াত। অনেকে আবার এমনও আছে, যারা মুখ ঘুরিয়ে চলে যায় যাতে হ্যালো না বলতে হয়। যদিও এ সবে আমার কোনও যায় আসে না।
প্রশ্ন: ইন্ডস্ট্রিতে ভাল সময় ও খারাপ সময় নিয়ে কী বলবেন?
জ়ারিনা: আমার খুব ভাল সময় কেটেছে সব সময়। ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে লোকে এত কিছু বলে। আমি ভাবি যে আমি কী এতই খারাপ যে কেউ আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করে না! ইন্ডাস্ট্রিকে আমি ভালবাসি।
প্রশ্ন: ‘চিতচোর’ ছবির ডাক পেলেন কী ভাবে? পরিচালক হিসাবে কেমন বাসু চট্টোপাধ্যায়?
জ়ারিনা: উনি একদম রূপটান পছন্দ করতেন না। সেটে এসে চশমা তুলে বলতেন, “কী লাগিয়েছ মুখে? যাও তুলে এস।” আমি লুকিয়ে হালকা লিপস্টিক দিতাম ঠোঁটে। একদিন সেটে আমরা ধাঁধাঁ নিয়ে মজা করছিলাম। দাদা তা শুনে সংলাপ বানিয়ে ফেলেছিলেন নিমেষে।
প্রশ্ন: অধিকাংশ অভিনেতাদের বক্তব্য, বলিউড পিতৃতান্ত্রিক। আপনার কখনও এই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে?
জ়ারিনা: না, আমার এমন মনে হয় না। কী জানি, ভিতরে হয়তো এ রকম হয়। আমি জানি না।
প্রশ্ন: সব সময় ছবি হিট না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে সামলান নিজেকে?
জ়ারিনা: আমি নায়িকা হতে পেরেছিলাম, এটাই বড় বিষয় আমার কাছে। এর থেকে বেশি আর কী চাইব? তার পরেও আমি খুব ভাল ভাল ছবি পেয়েছি। আমার কেরিয়ার নিয়ে আমি খুশি।
প্রশ্ন: বিয়ের পরে অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছিলেন…
জ়ারিনা: আমি স্বেচ্ছায় বিরতি নিয়েছিলাম। কোনও আক্ষেপ নেই। সানা, সুরজ হওয়ার পরে ওদের সঙ্গেই সময় কাটত। ওদের যখন পাঁচ বছর হল, তখন আমার স্বামীকে বললাম, অভিনয়ে ফিরতে চাই আমি। আর ধারাবাহিকে অভিনয় করব। ও বলেছিল, “নিশ্চয়। অভিনয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত তোমার ছিল। আবার কাজ শুরু করো।”
প্রশ্ন: এত ভাল ভাল ছবি করে হঠাৎ ধারাবাহিকে অভিনয় কেন?
জ়ারিনা: এ রকম কোনও ব্যাপার নেই। প্রত্যেকটির নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। আমি ওটিটিতেও অভিনয় করতে চাই। আমি যখন ধারাবাহিক শুরু করেছিলাম, আমাকে বলা হয়েছিল ছোট চরিত্র। পাঁচ-ছয় দিনে কাজ শেষ হয়ে যাবে। তার পরে ওরা এক বছর টেনেছিল চরিত্রটিকে।
প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে সে রকম গসিপ শোনা যায় না…
জ়ারিনা: হ্যাঁ, আমাকে নিয়ে কোনও গসিপ আছে বলে মনে হয় না। অথবা হয়তো আমার আড়ালে গসিপ হয় আমাকে নিয়ে। একটা কথা আমার কানে এসেছিল, “ওই দেখো, বয়সে ছোট ছেলেকে বিয়ে করেছে। পাঁচ মাসও টিকবে না বিয়ে!” বর্তমানে ৩৬ বছরের বৈবাহিক জীবন আমাদের।
প্রশ্ন: বিয়ে টিকিয়ে রাখা কি খুব কঠিন কাজ?
জ়ারিনা: আমার ছোটবেলার পরিবার খুব সুখী ছিল। আমার মায়ের প্রতি বাবা খুব মনোযোগী ছিলেন। পরবর্তীকালে আমার পরিবারেও আমি এই বিষয়টি মাথায় রেখেছিলাম। হ্যাঁ, বিয়েতে কিছু বিষয় সহ্য করে নিতে হয়। সেটা যদি মেনে নেওয়া যায় তা হলে আপনি সফল। সকলে করে, আমিও করেছি।
প্রশ্ন: আপনার স্বামীও একই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত…
জ়ারিনা: একটা মজার ঘটনা বলি। একবার স্বামীর একটি ছবির শুটিং হচ্ছিল ঊটিতে। আমি ওখানে গিয়েছিলাম। আদিত্যের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অঞ্জনা মুমতাজ়। উনি আমাকে বলেছিলেন, “জ়ারিনা একটা কথা বলি, তোমার বর এত হ্যান্ডসাম। মেয়েরা ওঁর উপর ঢলে পড়ে। আমি নিজের চোখে দেখেছি।” আমি বলেছিলাম, এটা তো ভালই! আমার স্বামীকে প্রথম থেকেই বলেছিলাম, যা করবে বাইরে কর। বাড়ি পর্যন্ত যেন না আসে! অনেকে গোপনে এ সব করে, অনেকে বাইরে দেখিয়েও করে। এমন নয় যে, আদিত্যের বাইরে সম্পর্ক ছিল না। সে সব জানার পরেও চুপ ছিলাম আমি। কারণ ও বাড়ি পর্যন্ত সেই কথা টেনে আনেনি কখনও।
প্রশ্ন: আপনার স্বপ্ন কী?
জ়ারিনা: একটাই চাওয়া, আমার সন্তানেরা ভাল করুক। মা-রা আর কী চাই বলুন!
প্রশ্ন: বাংলা ছবিতে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে?
জ়ারিনা: আমি করেছি, কিন্তু হিন্দিতে সংলাপ বলতে হয়েছে। এক দু’বার এসেছি। তবে হয়ে ওঠেনি এখনও। বাংলা ছবিতে কাজ করতে ভালই লাগবে আমার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy