Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Dabaru Shooting Coverage

চৌষট্টি খোপে জীবনের চর্যা, ‘দাবাড়ু’-র প্রথম দিনের শুটিংয়ে উপস্থিত আনন্দবাজার অনলাইন

দাবাড়ু সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের বায়োপিকের শুটিং শুরু হয়ে গেল। বাংলায় ক্রীড়া বিষয়ক ছবির কেন্দ্রে দাবা এই প্রথম রাজার আসনে।

Rituparna Sengupta, Shankar Chakraborty

‘দাবাড়ুু’র শুটিং ফ্লোরে (বাঁ দিক থেকে) ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অর্ঘ্য বসু রায় এবং শঙ্কর চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩ ১৮:৪৮
Share: Save:

উত্তর কলকাতার হেদুয়ার নয়ন চাঁদ দত্ত স্ট্রিট ধরে ডান দিকে ঢুকতেই চেনা সাবেকি বাড়ি। উঠোন পেরিয়ে বারান্দা ধরে এগোতেই কানে এল কথোপকথন...

কিশোর: বিশপ টু কুইন থ্রি।

মহিলা: বিশপ টু নাইট ফাইভ।

কিশোর: নাইট টু নাইট ফাইভ।

মহিলা: কিং রুক টু কুইন ওয়ান... চেকমেট!

শুনে অনেকের কাছেই এর অর্থ উদ্ধার করা কঠিন মনে হতে পারে। কারণ, এক তলার ঘরের বিছানা এবং বাইরের বারান্দায় বসে থাকা মানুষ দুটোর মুখের এই ভাষা আসলে দাবার চালের নোটেশন। বিছানায় বসে চাল বলছে অর্ঘ্য বসু রায়। আর বারান্দায় থামে ঠেস দিয়ে বসে পাল্টা চাল দিচ্ছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত!

গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী অবলম্বনে পরিচালক পথিকৃৎ বসু তৈরি করছেন ‘দাবাড়ু’। বৃহস্পতিবার উইন্ডোজ় প্রযোজিত এই ছবিরই শুটিং শুরু হল শহরে। এর নেপথ্যেও বিশেষ কারণ রয়েছে। ২০ জুলাই আন্তর্জাতিক দাবা দিবস। এই বিশেষ দিনেই ছবির শুটিং শুরু করতে পেরে খুশি পরিচালক। শট শেষ হতেই একান্তে বলছিলেন, ‘‘এই ছবিটার জন্য দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করেছিলাম। উত্তর কলকাতার রোয়াক থেকে সূর্যের গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার জার্নির মধ্যে সিনেমা তৈরির প্রচুর উপাদান রয়েছে।’’ এই ছবির জন্য সূর্যের মুখ থেকে তাঁর জীবনী শোনা ছাড়াও দাবা নিয়েও বইপত্র ঘেঁটেছেন পরিচালক। এমনকি, দাবার চালের কন্টিনিউটি যাতে ঠিক থাকে, তার জন্য ফ্লোরে সূর্যশেখরের টিমের এক জন সদস্যও সারা ক্ষণ থাকছেন। পথিকৃতের কথায়, ‘‘এখন সূর্য ফ্রান্সে রয়েছেন। ফিরে এসে উনিও ফ্লোরে আসবেন।’’

Biopic of Grandmaster Surya Sekhar Ganguly

শুটিং ফ্লোরে অর্ঘ্যকে শট বোঝাচ্ছেন পরিচালক পথিকৃৎ বসু। ছবি: সংগৃহীত।

ইতিমধ্যে আবার শটে ফিরলেন পরিচালক। ছেলের রাগ হয়েছে। তাকে জোর করে খাবার খাইয়ে দিচ্ছেন বাবা থুড়ি অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী। দৃশ্যটার বেশ কয়েক বার ওয়াইড এবং ক্লোজ় আপ টেক নিয়ে সন্তুষ্ট হলেন পরিচালক। ‘কাছের মানুষ’-এর শুটিংয়ের প্রায় দেড় বছর পর আবার মনিটরের সামনে বসে কেমন লাগছে তাঁর? পথিকৃৎ বললেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও ধারা তৈরি হলে সেখানে নতুন কিছু করা খুব কঠিন। বাণিজ্যিক ছবি নিয়ে আমি গর্বিত। পাশাপাশি দর্শকের নতুন কিছু উপহার দেওয়ার ভাবনা থেকেই এই ছবি।’’ এই প্রসঙ্গেই পরিচালকের গলায় আক্ষেপ স্পষ্ট হয়। বললেন, ‘‘প্রচারের আলো থেকে দূরে রয়েছে বাংলায় এ রকম স্পোর্টস ফিল্ম মানে ‘কোনি’, কিন্তু তার পর আর কিছু তৈরিই হল না।’’

Rituparna Sengupta, Shankar Chakraborty

এই ছবিতে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূর লুকে ঋতুপর্ণাকে দেখে অবাক সহ-অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তীও। ছবি: সংগৃহীত।

অর্ঘ্য অভিনয়ে নবীন। এক-দু’বার ‘এন জি’ হলেও ঋতুপর্ণার কোনও ক্লান্তি নেই। শটের ফাঁকে মেকআপ ভ্যানে পাওয়া গেল অভিনেত্রীকে। তিনি ছবিতে সৌরের মা করুণার চরিত্রে। বাংলায় স্পোর্টস ফিল্মে ফুটবল এবং ক্রিকেট যেন দাবার রাজা-মন্ত্রীর ভূমিকায়। এই বক্তব্য সমর্থন করেই ঋতুপর্ণার সংযোজন, ‘‘তাই শিবু (ছবির প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) প্রস্তাব দিতেই আমি রাজি হয়ে যাই। দাবা নিয়ে ছবি বলতে আমার তো একমাত্র ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’-এর কথা মনে পড়ে।’’ এই ছবিতে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূর লুকে ঋতুপর্ণা। বলছিলেন, ‘‘শঙ্করদা তো সকালে আমাকে দেখেই অবাক। বললেন গ্ল্যামারাস ঋতুপর্ণা থেকে ডি-গ্ল্যাম ঋতুপর্ণা!’’

সূর্যশেখরের মা আরতি গঙ্গোপাধ্যায় দাবা জানেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করেও মানুষটিকে জানার চেষ্টা করেছেন ঋতুপর্ণা। চরিত্রের জন্য দাবার চালের ভাষাও শিখছেন ঋতুপর্ণা। বলছিলেন, ‘‘আসলে এটা তো শুধু সূর্যের লড়াই নয়, একই সঙ্গে তাঁর পরিবারেরও সংগ্রাম। বলিউডে একাধিক স্পোর্টস বায়োপিকে আমরা এই টানাপড়েন দেখেছি। এ বার বাংলার পালা।’’

ছবিতে অভিনয় করছেন এক ঝাঁক অভিনেতা। রয়েছেন চিরঞ্জিৎ, কৌশিক সেন, খরাজ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, দীপঙ্কর দে, স‌ংঘশ্রী সিন্‌হা মিত্র প্রমুখ। প্রথম দিন তাঁদের মধ্যে কয়েক জনের কল টাইম ছিল। ফ্লোরেই পাওয়া গেল অর্ঘ্যকে। সূর্যশেখরের বড় বয়সে অভিনয় করেছে সে। ছবিতে চরিত্রের নাম সৌর। পরনে হাফ প্যান্ট এবং স্যান্ডো গেঞ্জি। এর আগে ‘পোস্ত’ ছবিতে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিল সে। এখন অবশ্য অনেকটাই বড়। কেমন লাগছে আবার অ্যাকশন-কাট-এর জগতে? পাঠ ভবনের নবম শ্রেণির ছাত্রটি হেসে বলে, ‘‘ভালই লাগছে। অল্পবিস্তর দাবা খেলতে জানি। কিন্তু সূর্যস্যরের থেকে খেলার আরও খুঁটিনাটি জানতে পেরেছি।’’ অর্ঘ্য জানাল, জনপ্রিয় দাবাড়ুর চরিত্রে সুযোগ পেয়ে খবরটা বন্ধুদের থেকে গোপনই রেখেছিল। কিন্তু বন্ধুরা জানার পর খুশি হবেই বলেই আশাবাদী সে। এই ছবিতে সূর্যশেখরের ছোট বয়সের চরিত্রে অভিনয় করছে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র সমদর্শী সরকার। এই খুদেকে সারা ক্ষণ ফ্লোর মাতিয়ে রাখতে দেখা গেল।

ইতিমধ্যে পরিবারে কারও প্রয়াণের আবহ শুট করা হবে। সেটে আপাত নিস্তব্ধতা। এ দিকে বাড়ির দোতলায় চিত্রনাট্য ঝালিয়ে নিচ্ছেন স‌ংঘশ্রী। ছবিতে তিনি সৌরের প্রতিবেশীর চরিত্রে। বলছিলেন, ‘‘বিশ্বনাথদার সঙ্গে আমার জুটি। সৌরদের পরিবারকে আমরা একটু খাটো নজরেই দেখি।’’ ইউনিটের থেকে লোকেশনের ঠিকানা ঝালিয়ে নিয়েই অ্যাপ থেকে গোল বাড়ির কষা মাংস অর্ডার করে বসলেন সংঘশ্রী। বললেন, ‘‘আজকে ইউনিটের খাবার— নো চান্স! উত্তর কলকাতায় শ্বশুরবাড়ি। এ পাড়ায় এলে ভাল খাবার না খেলে তো দিনটাই বৃথা।’’

ছবির চিত্রনাট্য অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সংলাপ লিখেছেন অর্পণ গুপ্ত। আগামী কয়েক দিন কলকাতার বিভিন্ন লোকেশনে ছবির শুটিং সারবে ইউনিট। দেশের অষ্টম গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখরের বায়োপিক বাংলার স্পোর্টস ফিল্ম ঘরানায় নতুন ধারার সংযোজন করতে পারে কি না, তা জানতে আপাতত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, জানা গেল, ছবিটি চলতি বছরের শেষে মুক্তি পাওয়ার কথা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE