সুনিধি নায়েক। ছবি: সংগৃহীত।
সাইবার জালিয়াতির শিকার গায়িকা সুনিধি নায়েক। জানা যাচ্ছে, সিবিআই পরিচয় দিয়ে তাঁর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা হাতিয়েছেন প্রতারকেরা।
শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীতে সিবিআই-এর পরিচয় দিয়ে সাইবার অপরাধীরা সুনিধিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা লুট করেছে বলে অভিযোগ। সুনিধি বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের প্রাক্তন ছাত্রী এবং কর্মসূত্রে পূর্বপল্লীতে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। এর মধ্যে বুধবার বাড়িতে একাই ছিলেন তিনি। সেই দিনই অপরিচিত মানুষদের বাড়ির বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেখেন তিনি।
অজ্ঞাতপরিচয় সেই ব্যক্তিরা ‘হায়দরাবাদের সিবিআই’ পরিচয় দিয়ে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে তাঁকে হুমকি দিতে থাকেন। সুনিধি ও তাঁর বাবার প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আদায় করেন। এমনকি গায়িকার ছবিও ডার্ক ওয়েবে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
সুনিধির এই ভাড়াবাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যে শান্তিনিকেতন থানা ও এসডিপি অফিস অবস্থিত। এই কারণে নতুন ধরনের এই অপরাধটি জানাজানি হতেই শান্তিনিকেতনে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে শান্তিনিকেতন থানায়।
সুনিধি জানান, বুধবার তাঁর কাছে ফোন আসে। বলা হয়, সুনিধি নাকি নরেশ গোয়েল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আর্থিক তছরুপের ঘটনায় জড়িত। এমনকি তাঁর নামে নাকি একটি ক্রেডিট কার্ডও তোলা হয়েছে। এর পরেই সুনিধিকে বলা হয় তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কথোপকথন এই ভাবে শুরু হলেও পরে তাঁকে ও তাঁর বাবাকে খুনের হুমকি দিতে থাকেন অভিযুক্তেরা। খুনের হুমকি পেয়ে বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার ৫ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন সুনিধি।
ফোন পাওয়ার পরে সন্দেহ হয়নি? প্রশ্ন করতেই গায়িকা বলেন, “ওরা আমার ও বাবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমস্ত তথ্য জানে। একটা গল্প বানিয়ে বলে, আর্থিক তছরূপের মামলায় আমি নাকি ধরা পড়েছি! খুনের হুমকিও দেওয়া হয় আমাদের। বাড়ির বাইরে এক অজ্ঞাতপরিচয়কে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি। ওরা ৬-৭ মাস ধরে নজরদারি চালাচ্ছিল আমার উপরে। এ-ও বলেছে, আমি যদি মুখ খুলি তা হলে নরেশ গোয়েল আমাকে মেরে ফেলবে। হিন্দি এবং ইংরেজিতে কথা বলছিল ওরা।”
সুনিধি আরও বলেন, “প্রথমে আমি ভেবেছিলাম সত্যিই হয়তো হায়দরাবাদের সিবিআই পুলিশ ফোন করেছেন। পরে বুঝতে পারি এরা জালিয়াত। তবে এখন প্রশাসন সাহায্য করছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে।”
গায়িকার অভিযোগ, প্রতারকেরা তাঁকে জানান যে তাঁর ফোন হ্যাক করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমি কাউকে মেসেজ বা ফোন করলেও নাকি তাঁরা জানতে পারছেন। ওঁরা এ-ও বলেন যে আমার ছবি ডার্ক ওয়েবে ছেড়ে দেবেন। আমাকে মানসিক ভাবে ভেঙে দেওয়াই ওঁদের উদ্দেশ্য ছিল। আমি গত তিন দিন ধরে খুব ভয়ে ছিলাম। এখন তদন্ত চলছে। আমি টাকা ফেরত চাই। এ ছাড়াও অপরাধীদের শাস্তি চাই। তার সঙ্গে নিরাপত্তাও চাই।”
উল্লেখ্য, সুনিধি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসাবে পরিচিত। শান্তিনিকেতনে মাঝেমাঝেই তিনি আসেন নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিকড়ের টানে। সেই জন্যই পূর্বপল্লীতে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন তিনি। ঘটনার দিন অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন পেয়ে তাঁকে বলা হয় যে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কের আর্থিক তছরুপের অভিযোগ রয়েছে এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁর উপর নজরদারি চালাচ্ছে। সুনিধি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং দুষ্কৃতীদের নির্দেশে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠান। টাকা পেয়েই দুষ্কৃতীরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে গভীর রাতে স্থানীয় বন্ধুদের মাধ্যমে থানায় অভিযোগ করেন সুনিধি। এই ঘটনার পরে শান্তিনিকেতনে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুনিধি। সাইবার অপরাধ দমন শাখার আওতায় তদন্ত শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy