মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন দেব, গৌতম ঘোষ, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। —নিজস্ব চিত্র।
টলিউডি ফেডারেশনের নিয়মের জাঁতাকল কাকে বলে, বছরখানেক আগেই তা টের পেয়েছিলেন বাংলাদেশের ওটিটি মাধ্যম চরকি-র কর্তারা। “পশ্চিমবঙ্গে নিয়মিত কাজ করার সুযোগ থাকলে কলকাতায় আমরা নিজেদের অফিসই খুলে ফেলতাম। তার বদলে জোর ধাক্কা খেতে হল,” বিমর্ষ সুরে ঢাকা থেকে ফোনে বলছেন চরকির এক কর্তা।
টালিগঞ্জের পোড়খাওয়া এক পরিচালকের মতে, “চরকি সুষ্ঠু ভাবে এখানে কাজ করতে পারলে সারা ক্ষণ বাড়তি ছ’-সাতটা প্রজেক্ট শুটিং ফ্লোরে থাকত। তার মানে এখানকার ৬০০-৭০০ জন কলাকুশলীর কাজের সুযোগ। তা হলে ফেডারেশনের নিয়মের ফাঁসে
ক্ষতিটা কার হল?” কলাকুশলীদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র নিয়ম অনুযায়ী, হিন্দি ছবি হলে এখানে শুটিংয়ের বিভিন্ন খাতে দ্বিগুণ টাকা দিতে হয়। ইংরেজিতে কাজ হলে সেটা হয় চার গুণ। টালিগঞ্জের এক
অভিজ্ঞ প্রযোজক সরব, ‘‘এমন নিয়ম দেশের কোথাও নেই। তা ছাড়া, বাংলাদেশের কাজ স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে বাংলায় হলেও বিদেশি বলে কেন বাড়তি টাকা চাওয়া হবে?” চরকি-র কন্টেন্ট হেড অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে আর পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে চান না। তিনি শুধু বলছেন, “এখানে শুটিংয়ের খরচ শুনেই বুঝে গিয়েছিলাম, প্রজেক্টের টাকা উঠবে না। অতএব তখনই আমরা পিছিয়ে আসি!” এমনকি, বলিউডের ছবি ‘বরফি’ও বাংলায় শুটিং থামিয়ে মুসৌরী চলে যায় বলে অভিযোগ। তাতে টলিউডের মুখ পুড়েছে বলেই ইন্ডাস্ট্রির অনেকের অভিমত।
টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের সংগঠনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে প্রযোজক, পরিচালকদের স্নায়ুযুদ্ধের আবহে গত ১০-১২ বছর ধরে ফেডারেশনের নানা কীর্তি এখন চর্চিত হচ্ছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী সক্রিয় হয়ে প্রসেনজিৎ, গৌতম ঘোষ, দেব এবং স্বরূপের দাদা তথা টেলি অ্যাকাডেমির কর্তা অরূপ বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে বসলেও টালিগঞ্জে ফেডারেশনের একতরফা ‘দাদাগিরি’ মিটবে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। অভিযোগ, কোনও কোনও চ্যানেল কর্তৃপক্ষকেও সাম্প্রতিক অতীতে কোনও টিভি ধারাবাহিক একযোগে চ্যানেল এবং ওটিটি, দু’জায়গায় দেখানোয় কলাকুশলীদের বাজেট বাড়াতে বলে ফেডারেশন। বিষয়টি কার্যত হাতে-পায়ে ধরে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে।
ফলে, এ যাত্রায় বিভিন্ন চ্যানেল কর্তৃপক্ষও ফেডারেশনের বিরুদ্ধে প্রযোজক, পরিচালকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। প্রযোজক, পরিচালকদের এক কথা, স্বরূপ কার্যত ইমারতি ব্যবসার সিন্ডিকেটের ঢঙে কলাকুশলীদের সংগঠনকে ব্যবহার করেন। অভিনেতাদের সংখ্যা দু’-এক জন বাড়লেই বাড়তি হেয়ারড্রেসার বা মেক-আপ শিল্পী নিতে চাপ দেওয়া হয়। কিংবা ফেডারেশনের ইচ্ছা মতো সহকারী পরিচালককে চাপিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ট্রলি দরকার না-হলেও ট্রলি বসানোর কলাকুশলী চাপানো থেকে শুরু করে আউটডোর শুটিংয়ে আলো বসানোর ক্যাটওয়াক তৈরির লোক নিতে বাধ্য করার মতো উদ্ভট কাজের ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে। বিদেশে শুটিং করতে গেলেও ফেডারেশনের নির্দেশমাফিক কলাকুশলী নিয়ে যাওয়া থেকে রেহাই নেই।
মঙ্গলবার ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ফেডারেশনের কর্তাব্যক্তি অনেকে বলছেন, প্রযোজক, পরিচালকদের সব অভিযোগ ঠিক নয়। টিভি ধারাবাহিকের জনৈক প্রোডাকশন ম্যানেজারের কথায়, “ইদানীং আগের থেকে কলাকুশলী কমেছে শুটিংয়ে। বরং ক্যামেরা, আলোর কেয়ারটেকারদের জন্যই খরচ বাড়ে।” তিনি আরও বলছেন, “তা ছাড়া, কোনও অভিযোগ বা নিয়ম নিয়ে আলোচনা তো হতেই পারে। কিন্তু শুটিং বন্ধ করার কারণ ছিল না।” প্রযোজক, পরিচালকেরা বলছেন, পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে বিতর্কে প্রথম ফ্লোর ত্যাগ তো ফেডারেশনের অঙ্গুলিহেলনে কলাকুশলীরাই করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শুটিং চালু হলেও টলিউডি পরিবারের অন্দরে এত শত তিক্ততার সমাধান না-খুঁজলে নতুন করে সমস্যার মেঘ দেখছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy