‘বহুরূপী’ ছবির শুটিং ফ্লোরে পরিচালক নন্দিতা রায়। ছবি: সংগৃহীত।
দুর্গাপুজো শেষ। কিন্তু, এখনও বক্স অফিসে রাজত্ব করছে নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘বহুরূপী’। গত বছর থেকে ‘রক্তবীজ’-এর মাধ্যমে পরিচালক জুটি তাঁদের স্বভাবসিদ্ধ ঘরানার ছবি থেকে বেরিয়ে থ্রিলারে মনোনিবেশ করেছেন। বাংলায় শুরু থেকেই থ্রিলার মূলত পুরুষ পরিচালকেরা শাসন করেছেন। বাংলা ছবির ইতিহাসে মঞ্জু দে-র মতো হাতেগোনা মহিলা পরিচালক বাদ দিলে থ্রিলার বিষয়টাই যেন পুরুষের একচেটিয়া নির্মাণ। সেখানে মহিলা পরিচালক হিসাবে নন্দিতা সাম্প্রতিক ইতিহাসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
আনন্দবাজার অনলাইনকে নন্দিতা জানালেন, ছবি নিয়ে দর্শকের উন্মাদনা তিনি প্রথমে আশা করেননি। কিন্তু এখন তিনি মনে জোর পেয়েছেন। বললেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে। বহু মানুষ ছবিটি দ্বিতীয় বার দেখেছেন কিংবা দেখার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। বাংলা ছবি তথা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে এটা খুবই গর্বের বিষয়।’’ পাঁচ বছরে ২৭টি ব্যাঙ্ক ডাকাতির বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ছবিটি। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্বাচিত কিছু ঘটনা নিয়ে চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। তবে নন্দিতা বললেন, ‘‘আমি কারও বায়োপিক বা কোনও তথ্যচিত্র তৈরি করতে চাইনি। কোনও অপরাধকে উদ্যাপন করতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম যাবতীয় উপাদানের মিশ্রণে একটা ফিকশন তৈরি করতে।’’
২০০৯ সাল নাগাদ ‘বহুরূপী’ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন নন্দিতা ও শিবপ্রসাদ। মহিলা পরিচালক হিসাবে থ্রিলার নিয়ে নন্দিতার মনে কোনও আশঙ্কা দানা বাঁধেনি। কোনও প্রথাগত পথে হাঁটা বা ‘ফর্মুলা’র পরিবর্তে এই ছবিকে ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ সিদ্ধান্ত বলেই উল্লেখ করতে চাইলেন নন্দিতা। কারণ, গল্পটা তাঁর পছন্দ হয়েছিল। নন্দিতার কথায়, ‘‘আমার বেশ মজাই লেগেছিল। কারণ, বেশির ভাগ থ্রিলার ছবিই পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি। মারপিট, গুলি, বিস্ফোরণ! আমি সেখানে থ্রিলারের মধ্যে আবেগ রাখতে চেয়েছিলাম। নারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ছবিটা তৈরি করতে চেয়েছিলাম।’’ ‘রক্তবীজ’ তৈরির ক্ষেত্রেও আবেগকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন বলেই জানালেন নন্দিতা। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু মারপিটে সাময়িক আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু দর্শকের মনে তা সুদূরপ্রসারী ছাপ ফেলে না।’’
বাঙালি থ্রিলার-প্রিয়। কিন্তু, সেই চাহিদা মেটাতে এক সময়ে ঘন ঘন সাহিত্য থেকে গোয়েন্দাদের পর্দায় তুলে আনা হয়েছে। বিপরীতে ছবির প্রয়োজনেই তৈরি করা হয়েছে গোয়েন্দা। নন্দিতা এমন ধরনের কোনও ঘরানা বা প্রবণতায় বিশ্বাসী নন। বললেন, ‘‘একটি পারিবারিক ছবি সফল হল মানেই প্রত্যেকে একই রকম ছবি তৈরি করতে শুরু করলেন, এই প্রবণতার আমি বিরুদ্ধে। আমার তো মনে হয়, দর্শক একের পর এক গোয়েন্দা দেখেও ক্লান্ত।’’ দর্শকের দরবারে বিষয়বৈচিত্রের উপস্থাপন যে এক জন পরিচালকের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত, সে কথাও জানাতে ভুললেন না নন্দিতা।
‘বহুরূপী’ ছবিতে গ্রামবাংলার মাটির টান অনুভব করেছেন দর্শক। নন্দিতার বিশ্বাস, সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পও থ্রিলার হয়ে উঠতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে যে গল্পের অভাব নেই, সে কথাও তিনি জোর গলায় উল্লেখ করলেন। বললেন, ‘‘সহজ কোনও পথে হাঁটলে চলবে না। চোখ-কান খোলা রেখে ভাল গল্প খুঁজে নিতে হবে। একজন পরিচালক হিসাবে আমি সব সময়েই সচেতন থাকি।’’
প্রেক্ষাগৃহে তৃতীয় সপ্তাহ। এখনও তাঁর তৈরি ছবি হাউসফুল। একজন মহিলা পরিচালক হিসাবে তিনি কি গর্বিত? নন্দিতা বললেন, ‘‘অবশ্যই। খুব গর্ববোধ করি। চেখের সামনে যেটা কল্পনা করেছিলাম, যা চেয়েছিলাম, দর্শক সেটা যদি আমায় ফিরিয়ে দেন, সেই ভালবাসায় আমি মুগ্ধ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy