Advertisement
১৮ অক্টোবর ২০২৪
Paran Bandopadhyay birthday

রাজি হলেন না পরানদা! তার পর সিঁড়িতেই আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম

১৮ অক্টোবর শুক্রবার অভিনেতা পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। বিশেষ দিনে আনন্দবাজার অলাইনের পাতায় ‘দাদা’র সঙ্গে তাঁর সমীকরণ বিশ্লেষণ করলেন পরিচালক অভিজিৎ সেন।

Bengali director Avijit Sen penned his association with Paran Bandopadhyay on the actor’s 84th birthday

শুটিংয়ের ফাঁকে (বাঁ দিক থেকে) পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, অতনু রায়চৌধুরী এবং অভিজিৎ সেন। ছবি: সংগৃহীত।

অভিজিৎ সেন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:০৬
Share: Save:

পরানদাকে আমি ‘দাদা’ সম্বোধন করি। নাম ধরে ডাকি না। কিন্তু, কোথাও যেন তিনি আমার বাবার মতো। 'বাবা' বলেই ডাকতে ইচ্ছে করে তাঁকে। দাদাও আমায় নিজের ছেলের মতোই স্নেহ করেন। তাই পরানদাকে নিয়ে লিখতে শুরু করলে শেষ করতে পারব না।

পরানদার সঙ্গে প্রথম আলাপ দিয়েই শুরু করা যাক। ‘টনিক’-এর বহু আগে থেকে দাদাকে আমি চিনি। একাধিক বার বিভিন্ন নন ফিকশন শো এবং অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে দাদা এসেছেন। তখন আমাদের দেখা হয়েছে, প্রচুর আড্ডা হয়েছে। দাদা শচীন দেব বর্মনের ভক্ত। তবে এই প্রসঙ্গে ‘সারেগামাপা’-এর কথা না বললেই নয়। পরানদা এই শো নিয়মিত দেখেন। শোয়ে কোনও শিল্পী ভাল গাইলে দাদা নিজে আমাকে ফোন করে সেটা জানান।

‘টনিক’-এর গল্পটা শোনার পর প্রথমে পরানদা কোনও মন্তব্য করেননি। শুধু জানতে চেয়েছিলেন, রিভার র‌্যাফটিং এবং প্যারাগ্লাইডিং তাঁকে করতে হবে কি না! তার পর দু’দিন কেটে গিয়েছে। দমদমে আমি তাঁর বাড়িতে হাজির হলাম। দাদা শর্ত দিলেন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস তিনি করবেন না। তার পর অতনুদা (ছবির প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী) পরানদাকে জানান যে, তিনি রাজি না হলে ছবিটাই তৈরি করবেন না। অবশেষে রাজি হলেন পরানদা।

কালিম্পঙে শুটিংয়ের প্রথম দিনেই রিভার র‌্যাফটিংয়ের দৃশ্য। ঠান্ডা কনকনে জল। চারপাশ থেকে ঠান্ডা হাওয়া। পরানদা রাজি হলেন না। অতনুদা এবং দেবের অনুরোধে দাদা শেষ পর্যন্ত একটা র‌্যাফটে বসতে রাজি হলেন। আমি তখনও চিন্তায়। বুঝতে পারছি না, তিনি কী বলবেন। টুক করে শটটা হয়ে যায়। পরানদা বুঝতেই পারেননি। শুধু বলেই যাচ্ছেন, ‘‘আমি পেরেছি! বিশ্বাস হচ্ছে না।’’ পরানদার ওই সহজাত অভিব্যক্তিটাই আমরা পরে ছবিতে রেখেছিলাম। আমার মনে আছে, সে দিন দাদা এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, পরের দিন বাথটাবে স্নানের দৃশ্যে শটের ফাঁকে দেখলাম, পরানদা সাবানের ফেনার মধ্যে শুয়ে শচীনকর্তার ‘মন দিল না বঁধু’ গানটা গুনগুন করে গাইছিলেন। প্যারাগ্লাইডিংয়ের দৃশ্যেও প্রথমে দাদা রাজি হলেন না। দেব ফ্লোরে পরানদাকে ‘কাকা’ সম্বোধন করে। ও কিন্তু প্রত্যেক বার দাদাকে আলাদা করে অনুপ্রাণিত করেছে। কিন্তু, সকলের অনুরোধে পরানদা কিন্তু রাজি হয়ে যান। রক ক্লাইম্বিংয়ের দৃশ্যেও একই পরিস্থিতি। শেষে পরানদা দেবকে বললেন, ‘‘কাকা সম্বোধন করে তো সবই করিয়ে নিলি। চল, তা হলে পাহাড়ে চড়া যাক।’’ একজন প্রবীণ অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও পরানদার মধ্যে এই শিশুসুলভ স্বভাব এবং চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতা থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে।

Bengali director Avijit Sen penned his association with Paran Bandopadhyay on the actor’s 84th birthday

উত্তরবঙ্গে ‘টনিক’-এর শুটিংয়ে অভিজিৎ সেন এবং পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

‘প্রধান’-এর গল্প শুনে পরানদা জানতে চান, যে ছবিতে আগের মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস রয়েছে কি না। বললাম যে, নেই। কিন্তু উত্তরবঙ্গে শুটিং শুনেই আবার পরানদা রাজি হলেন না। কারণ, বাড়ি ছেড়ে ১৯ দিন তিনি আউটডোরে যেতে চাইছিলেন না। বেশ কয়েক দিন পর আবার দাদাকে ফোন করলাম। অনুরোধ করলাম। মনখারাপ হয়ে গেল। সে দিনই আমি অতনুদা এবং শুভদীপ (চিত্রনাট্যকার শুভদীপ দাস) পরানদার বাড়িতে না জানিয়েই হাজির হলাম। সিঁড়ি দিয়ে দাদা নামছেন দেখেই আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। পরানদা হেসে বলেছিলেন, ‘‘এই তো! দেখো কাণ্ড। এ বার আমি না বলি কী করে!’’ দাদা রাজি হয়ে গেলেন। আসলে তাঁকে মানিয়ে নেওয়া, রাজি করানোর এই ভালবাসার মধ্যে দিয়েই দাদার উপর একটা অধিকারবোধ জন্মে গিয়েছে। অজান্তেই সেটা তৈরি হয়েছে।

আরও একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই। পরানদা কিন্তু খুব ভাল একজন শিক্ষক। ফ্লোরে নিজের অভিনয়ের পাশাপাশি অন্যদেরও যথেষ্ট সাহায্য করেন। সংলাপ বলতে গিয়ে কোথায় থামতে হবে, সহশিল্পীদের সেই পরামর্শ দেন। আমাকেও একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন। তাতে আমাদের প্রত্যেকেরই খুব সুবিধা হয়েছে।

Bengali director Avijit Sen penned his association with Paran Bandopadhyay on the actor’s 84th birthday

‘প্রধান’ ছবির শুটিংয়ে (বাঁ দিক থেকে) দেব, অভিজিৎ এবং পরান। ছবি: সংগৃহীত।

সাধারণত শুটিংয়ের ক্ষেত্রে পরানদার কিছু শর্ত থাকে। কিন্তু আমি দেখেছি, আমার ক্ষেত্রে সেগুলো একটু হলেও লঘু হয়ে যায়। উনি ওঁর সাধ্যমতো আমাকে সাহায্য করেন। এই সম্পর্কটা কিন্তু আমাদের কাজ করতে করতে তৈরি হয়েছে। ফোন করলেই সকলের খোঁজ নেন। আর কেমন আছেন, জানতে চাইলে হাসিমাখা উত্তর আসে ‘‘ভাল-মন্দ মিশিয়ে আছি।’’ কখনও যদি কষ্ট পাই, দাদা দেখে সেটা বুঝতে পারেন। ঠিক জিজ্ঞাসা করবেন। একটা আত্মিক যোগ না তৈরি হলে মানুষকে এতটা বুঝতে পারা সম্ভব নয়।

পরান বন্দ্যোপাধ্যায় একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলা তথা সারা দেশের গর্ব। তাঁর সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য। পরানদার জন্মদিনে আমার তরফে দাদাকে মন থেকে অনেক অনেক প্রণাম। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, দাদা যেন সুস্থ থাকেন। ভবিষ্যতে আবার সুযোগ পেলে দাদার সঙ্গে কাজ করব।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE