Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Rituparna Sengupta

হাসপাতালে মা, জড়িয়ে ধরতে পারছি না! শাড়ির আলমারিতে মায়ের গন্ধ খুঁজে পেলাম

মায়ের জোরেই আজ আমি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত! মা স্পষ্ট জানিয়েছিল, সব কিছুতে এগিয়ে যেতে হবে আমাকে।

Image of Rituparna Sengupta

মায়ের স্মৃতিতে কলম ধরলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:১৬
Share: Save:

মা সেই চলেই গেল। আটকাতে পারলাম না। সব কেমন ওলটপালট। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণার কথা তো সকলে জানে। নন্দিতা সেনগুপ্তের মেয়েকে কত জনই বা জানত! আমার জীবনে এগিয়ে যাওয়া, সফল ভাবে কাজ করা, ভেঙে পড়া, উঠে দাঁড়ানো— সব মায়ের কঠোর সমর্থনে। শুধুই মা। মা আমার দুর্গা। আমার মনের জোর। জন্ম থেকে আমার মধ্যে যে আত্মবিশ্বাসের বীজ মা বুনে দিয়েছিল তার জেরেই আমি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সব কিছুতে এগিয়ে যেতে হবে আমাকে, মা স্পষ্ট করে দিয়েছিল। মেয়ে বলে আলাদা করে মানুষ করা, এমন কখনও দেখিনি মায়ের মধ্যে।

মা আচমকাই অক্টোবরের শেষের দিকে হাসপাতালে ভর্তি হল। আগেও হয়েছে। কিন্তু ফিরে এসেছে। সেই কারণেই ভাবলাম যার এত মনের জোর সে ঠিক ফিরবেই। কিন্তু ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করল। এক দিন মনে হল, কার কাছে যাব? মা বাড়িতে নেই। মা কথাও বলছে না। কাছে যাচ্ছি, কিন্তু গেলেও তো জড়িয়ে ধরে সব কথা, সমস্যার কথা বলতে পারছি না। কী করি? হাসপাতালে মাকে দেখে রবিনসন স্ট্রিটে মায়ের বাড়ি চলে গেলাম। অস্থির মন। মাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজছি। মন ডুকরে উঠছে। কোথায় মা? কী মনে হল, মায়ের শাড়ির আলমারি খুললাম। ওখান থেকে আর সরতে পারি না। কত শাড়ি। আমার কত স্মৃতি জড়িয়ে ওই আলমারিতে। আর তখনই মায়ের গন্ধটা পেলাম। মাকে না পেয়ে ওই শাড়িগুলোই ঘাঁটছিলাম আমি। মনটা সে দিন স্থির হল। যেন মাকেই খুঁজে পেলাম।

তখনও ভাবিনি মাকে হাসপাতালেই শেষ দেখব। বিগত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালের ঘেরাটোপে আমার সবাক, সজীব মাকে শুধু কষ্ট পেতেই দেখলাম। আমি কাজের জন্য যেমন নিয়মিত বাইরে যাই এ বার আর যাইনি। দুটো দিন জরুরি কাজ ছিল তাই যেতেই হল। বাকি দিনগুলো শহর ছাড়িনি। মনে হত মায়ের কাছেই আছি।

ছোটখাটো প্রতিটা সুখ-দুঃখের অনুভূতি মনে পড়ে যাচ্ছিল। স্কুলজীবনে ভোর চারটে নাগাদ আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিত মা। আমাকে পড়াত। এত সুন্দর বাংলা লিখতে পারত। মায়ের থেকেই সব শিখেছি আমি। এই কিছু দিন আগেও রবি ঠাকুর বা নজরুল মা অনায়াসে আবৃত্তি করতে পারত। সারাটা জীবন দেখে এলাম মায়ের ঘরে রাত তিনটে পর্যন্ত আলো জ্বলছে। মা যেখানেই থাকুক রাতে আগে বই পড়ে তার পরে ঘুম। রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালবাসত। অন্য গানও। আমার ছোটবেলা মায়ের সঙ্গে খুব আনন্দে কেটেছে, নিশ্চিত আশ্রয়ের কোল, আমার মায়ের কোল। ছোট বয়স থেকেই মা শিখিয়েছিল যার যা নেই আমার থাকলে তাকে সেটা দিতে হয়। তখন থেকেই সামাজিক সচেতনতার বোধ তৈরি হয়েছিল আমার মধ্যে। তাই কিছু যদি দিতে পারি কাউকে আমার খুব আনন্দ হয়। মা বুঝিয়ে দিয়েছিল দায়িত্ববোধ কী। এগুলো নিয়ে চলতে চলতেই জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়।

বকাও খেতাম খুব মায়ের কাছে। বড় হয়েও সে সব চলত পুরো মাত্রায়। খাবার নষ্ট করলে খুব রেগে যেত মা। আমার ছেলেমেয়েদেরও একই শিক্ষা দিয়েছে আমার মা। সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। কোনও কথা বলতেই ভাল লাগছে না। এখন মায়ের কোলে মাথা রেখে একলা বড় একটা আকাশের তলায় যদি চলে যেতে পারতাম! কার কাছে পরামর্শ নিতে যাব আমি? কে বলবে, “তুই কাজ করে যা, সব ঠিক হয়ে যাবে, ভেঙে পড়বি না!” কার সঙ্গে মন খুলে ঝগড়া করব?

অন্য বিষয়গুলি:

Rituparna Sengupta Bengali Actress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy