জন্মদিনে অরিন্দমদাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আগে প্রথম আলাপ দিয়েই শুরু করি। যত দূর মনে পড়ছে, সময়টা ২০০৫ সাল। আমি একটি বাংলা ধারাবাহিকের শুটিং করছি। সেই সেটে অরিন্দমদার সঙ্গে প্রথম আলাপ। তখন দাদা চুটিয়ে অভিনয় করতেন। সেই সম্পর্ক আজও অটুট।
পরবর্তী সময়ে অরিন্দমদা পরিচালনায় এলেন। দাদার পরিচালনায় একাধিক ছবিতে অভিনয়ও করেছি। বলতে পারি, টলিউডে যাঁরা ভাল থ্রিলার তৈরি করেন, তাঁদের মধ্যে অরিন্দমদা অন্যতম। কারণ তিনি যে ভাবে ছবিটাকে ভাবেন, সেটা অন্য কেউ ভাবতে পারবে না। দাদার দূরদৃষ্টিকে আমি শ্রদ্ধা করি। একটা ঘটনা জানালে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। ‘ঈগলের চোখ’ ছবির প্রস্তাব দিলেন দাদা। প্রথমে চরিত্রটায় আমি অভিনয় করতে রাজি হইনি। আমাকে বোঝালেন, ‘‘শুরু করা যাক। তার পর দেখা যাবে।’’ এই ভাবে শুটিংও হয়ে গেল। ছবিমুক্তির পর প্রচুর মানুষ আমার প্রশংসা করেছিলেন। বুঝতে পারলাম, চরিত্রটা হাতছাড়া হলে বোকামি করতাম।
পরিচালক হিসেবে ফ্লোরে অরিন্দমদার নানা বিষয় জিনিস আমার ভাল লাগে। কোনও দৃশ্য যে ভাবে বোঝান, তার পর আর অসুবিধা হয় না। আমি তো বিশ্বাস করি, যে কোনও মানুষকে দিয়ে দাদা অভিনয় করিয়ে নিতে পারেন। আরও একটা বিষয়, অরিন্দমদা কিন্তু কখনও অতিরিক্ত শট নেন না। এতটাই হোমওয়ার্ক করে ফ্লোরে আসেন, যে ক’টা শট নিচ্ছেন তার প্রায় সবটাই পর্দায় দর্শক দেখতে পান। সম্পাদনা নিয়েও দাদা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। যে কারণে ওঁর ছবিগুলি শেষ পর্যন্ত এত ভাল লাগে দেখতে।
আরও পড়ুন:
অরিন্দমদার সঙ্গে ‘সাহেব বিবি জোকার’ আমার কেরিয়ারের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজ। বড় চিত্রনাট্য, ডাবল শিফ্টে কাজ। কিন্তু সবটা সময়ে আমরা শেষ করতে পেরেছিলাম শুধুমাত্র দাদার জন্য। এই তো সম্প্রতি ‘উৎসব-এর রাত্রি’ ছবিটার শুটিং খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা শেষ করলাম। এ বারেও দাদাকে দেখে অবাক হয়েছি। রাত ৯টায় সব গুটিয়ে ফেলতে হবে, এক মিনিট দেরি হবে না। আমার ড্রাইভারকেও আমি ঠিক সেই ভাবেই বলে রাখতাম।
পরিচালক হিসাবে দাদার পরিবার হয়ে ওঠে ইউনিট। প্রত্যেক সদস্যের খেয়াল রাখেন। এ বারের ঘটনাটাই লিখি। এক দিন জ্বর গায়ে শুটিং করছি। ‘প্যাক-আপ’-এর পর আমার শরীরে আর শক্তি নেই। দাদা কিন্তু ঠিক বুঝতে পেরেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বলেছিলেন বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম করতে। আবার দাদার সঙ্গে আমার ঝগড়াও হয়েছে। পরে আবার নিজেরাই সমস্যা মিটিয়ে নিয়েছি। আবার একসঙ্গে কাজে ফিরে গিয়েছি।
এ বারে কাজ করতে গিয়ে একটা জিনিস উপলব্ধি করেছি। অরিন্দমদা আগের থেকে একদম বদলে গিয়েছেন। সে দিন শুক্লাদিকেও (অরিন্দমের স্ত্রী) একই কথা বলছিলাম। তবে এই পরিবর্তনের মধ্যে কোনও নেতিবাচক দিক নেই। বয়সের সঙ্গে প্রত্যেকেই বদলে যান। অরিন্দমদার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। আগের থেকে দাদা এখন আরও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। আরও বেশি মিষ্টি হয়েছেন, রসবোধ আরও বেড়েছে এবং অবশ্যই ভাল কাজের প্রতি খিদেও বেড়েছে।
জন্মদিনটা দাদার ভাল কাটুক, এটাই চাই। আগামী দিনে দাদার আরও ভাল ভাল কাজের অপেক্ষায় রইলাম। আর অবশ্যই তাঁর পরিচালানায় অভিনয় করার সুযোগ পেলে তো ‘কেয়া বাত’।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)