Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Alivia Sarkar

নতুন প্রজন্মের কথা ভেবে অনলাইনে কি ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব? প্রশ্ন তুললেন অলিভিয়া

চলতি নির্বাচনকে মাথায় রেখে শুরু হয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ বিভাগ ‘ভোটের দিব্যি’। নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মনোভাব ব্যক্ত করছেন আপনাদের পরিচিত মুখেরা। এ বারে ভোট নিয়ে লিখলেন অলিভিয়া সরকার।

Alivia Sarkar

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অলিভিয়া সরকার
অলিভিয়া সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ ০৯:০৬
Share: Save:

গরম কমেছে। বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। এ দিকে দেখতে দেখতে চার দফা ভোটও হয়ে গেল। গণতন্ত্রের অন্যতম বড় যজ্ঞ চলছে। আমি রাজনীতি বুঝি না। কাউকে জ্ঞানও দিতে চাই না। তবে আমিও দেখছি, চারপাশে কী কী ঘটছে। এক জন সাধারণ নাগরিক হিসেবে খবরাখবর রাখার চেষ্টা করছি।

আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে লেখার প্রস্তাব আসার পর থেকেই ভাবছি, কী ভাবে লেখাটা শুরু করব। কিংবা কী কী লিখব। আমি খুব একটা মাথা খাটিয়ে ভেবে সব কিছু করি না। তাই মনের মধ্যে যে জিনিসগুলো ভিড় করেছে, সেগুলোই লেখার চেষ্টা করব। একটা জিনিস শুরুতেই জানিয়ে রাখতে চাই। এর আগে আমি ভোট দিয়েছি। কিন্তু, সেটা খুবই কম। কারণ, আমার জন্ম দুর্গাপুরে। আর কর্মসূত্রে ২০০৮ সাল থেকে আমি কলকাতায় থাকি। এখনও পর্যন্ত দুর্গাপুরেই আমাকে ভোট দিতে যেতে হয়। আর সেখানেই সমস্যা। বাবা-মা সব সময়েই ভোটের দু’তিন দিন আগে মনে করিয়ে দেন। কিন্তু, আমি অভিনেত্রী। কাজের চাপে সেটা সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমি এ বারেও কাজের ব্যস্ততায় ভোট দিতে যেতে পারলাম না। অদূর ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে, ভোট কলকাতায় স্থানান্তর করে নেওয়ার।

অনেকেই বলেন, ভোট এলে নাকি চারিদিকে বাড়াবাড়ি শুরু হয়। আমার মতে, তা খানিকটা হলেও সত্যি। তবে একই সঙ্গে ভাবি, যাঁরা ভোট চাইছেন, তাঁরা তো আমাদের ভাল করতে ইচ্ছুক। কিন্তু ভোটের নামে এই ‘হিংসা’য় কি কারও ভাল হচ্ছে? তাঁরাও কি সেটা চান? না কি এটা সিস্টেমের একটা অংশ? পুরো বিষয়টাই কি শান্তিপূর্ণ ভাবে হতে পারে না? ভোটের সময় চারদিকে এই হিংসার খবর দেখলে আমার বেশ খারাপ লাগে। কারণ, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো আরও আধুনিক হবে। আবার এটাও ঠিক, রাতারাতি একটা একশো বছর ধরে চলে আসা ব্যবস্থায় বদল আনা সম্ভব নয়। প্রতি বার বিভিন্ন প্রার্থী বিভিন্ন রকমের আশার আলো দেখান। তার পর সেই আলো কতটা জোরালো হল বা নিভে গেল, তা নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। আমার সে যোগ্যতাও নেই। তবে আমার মনে হয়, যে কঠিন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা প্রত্যেকে অগ্রসর হচ্ছি, সেখানে যাঁরা জিতে আসবেন, তাঁরা যদি একটু শিক্ষাক্ষেত্রে জোর দেন তা হলে খুব ভাল হয়। কারণ গ্রামের দিকে অনুষ্ঠান করতে গেলে বুঝতে পারি, এখনও অনেক জায়গায় শিক্ষার আলো পৌঁছয়নি। অনেকেই অল্প দিন পড়াশোনা করে তার পর ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ অল্প বয়সেই সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ করে তাদের ঘাড়ে রোজগারের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন। এটা ঠিক নয়। শিক্ষার বিকাশ খুব কঠিন কাজ নয়, একটু চেষ্টা করলেই এটা করা যায়।

এখন আমি যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা। এখানে আমারই ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মী সায়নী (ঘোষ) প্রার্থী হয়েছে। ওর সঙ্গে আলাপ রয়েছে। এক সময় একসঙ্গে আড্ডাও দিয়েছি। বাকী প্রার্থীদের আমি সায়নীর মতো ভাল চিনি না। তবে যিনিই জিতুন, তাঁদের কাছে আমার একটা বিশেষ আর্জি আছে। আমি একা থাকি। নিজে গাড়ি চালাই। প্রায়শই অনেক রাতেও শুটিং সেরে বাড়িতে ফিরি। আমি কিন্তু নিজেকে যথেষ্ট সুরক্ষিত মনে করি। কখনও কোনও সমস্যায় পড়িনি। তবে আমার এলাকায় ট্র্যাফিক এবং যানজটের সমস্যা রয়েছে বলে মনে হয়েছে। এটা একটু কমলে আমি খুশি হব।

অভিনেতা বা শিল্পীরা রাজনীতিতে এলেই দেখছি তাঁদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়! এ বারেও সেটা হয়েছে। কিন্তু কেন এমন হয়, তা আমি জানি না। তাঁরা তো আমারই সতীর্থ। তাই আমার খারাপ লাগে। আমার কাছে কোনও দিন রাজনীতি বা ভোটে লড়ার প্রস্তাব আসেনি। কোনও দিন প্রস্তাব এলেও হয়তো আমি না বলব। কারণ আমার মনে হয়, রাজনীতি একটা বড় দায়িত্ব। আর সেটা নিজের কাঁধে নেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার অন্তত নেই। তবে যাঁরা আমাদের সকলের জন্য এই লড়াইটা ময়দানে নেমে লড়লেন, তাঁরা প্রত্যেকেই নির্ভীক। আমি তাঁদের কুর্নিশ জানাতে চাই।

এর আগে নিয়মিত ভোট না দেওয়ার কথা বলেছি। তার সপক্ষে কারণও জানিয়েছি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ভোট দেওয়া উচিত। কিন্তু আমার মতো যাঁরা ভোট দিতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য কি সরকার যথাসাধ্য উদ্যোগী হচ্ছেন? আমি ‘পোস্টাল ব্যালট’-এর কথা শুনেছি। এ প্রসঙ্গে আমারও একটা প্রস্তাব আছে। আমাদের মতো, এই প্রজন্মের অনেকেই তো এখন তাঁদের ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে থাকেন। আমার মতো দুর্গাপুর-কলকাতা নয়। আমাদের প্রজন্মের অনেকেই কর্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকেন, তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন। অথচ সমাজমাধ্যমে লক্ষ করি, তাঁরা রাজনীতি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। কিন্তু, তাঁরা কি সব সময়ে ভোট দেওয়ার জন্য কাজ ফেলে রেখে এ রাজ্যে ছুটে আসতে পারেন? এ রকম ভোটারদের জন্য অনলাইনে ভোট দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি? জানি না, আমি কতটা যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন করছি। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার মাথার মধ্যে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। তা হলে হয়তো আমার মতো আরও অনেকেই নিয়মিত ভোটটা দিতে পারবেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE