Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sourav Das

প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু একটি ভিডিয়োয় সিদ্ধান্ত বদল সৌরভের

বোনও সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকতেন দাদাকে নিয়ে। সহকারীর ফোনে সৌরভের গলায় ‘হ্যালো’-টুকু শুনতেন কেবল।

সৌরভ দাস।

সৌরভ দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২১ ১৭:১৪
Share: Save:

তৃণমূলে যোগ দিলেন আনুষ্ঠানিক ভাবে। নতুন পথে চলা শুরু। সামনে বিধানসভা নির্বাচন। অনেক পরিকল্পনা। কিন্তু যোগ দেওয়ার ঠিক আধ ঘণ্টার মধ্যে চোখের সামনে দুনিয়াটা পালটে গেল অভিনেতা সৌরভ দাসের।

একটি ভিডিয়ো প্রকাশ পেল নেটমাধ্যমে। বোন ও বাবার সঙ্গে জন্মদিন পালন করছিলেন সৌরভ। ছিলেন আরও মানুষ। ভিডিয়োর বিশেষ অংশ দেখে সমালোচনার ঝড় উঠল। নানা কথা ভেসে ভেসে আসতে থাকল, ‘ভাই-বোনের নোংরামো!’, ‘বোনের বুকে হাত দিয়ে রয়েছেন সৌরভ। কিন্তু সামনে ক্যামেরা ছিল, সে কথা ভুলে গিয়েছেন।’, ‘তৃণমূল কর্মীর আসল পরিচয়’ ইত্যাদি। আর সব ক’টা কথাই আঘাত দিয়েছে সৌরভ ও তাঁর পরিবারের বুকে। সে কথাই আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন অভিনেতা।

এক মাস হয়ে গিয়েছে সে ঘটনার। এখন অনেকটা ভাল আছেন বলে জানালেন সৌরভ। কিন্তু আতঙ্কটা ভিতর থেকে যায়নি। তার প্রমাণ দিলেন একটি ঘটনায়। কয়েক দিন আগে সৌরভের বাবার বুকে যন্ত্রণা হচ্ছিল। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। অনেক কিছুরই আশঙ্কা করছিল পরিবার। পরীক্ষানিরীক্ষা হয়। ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার পর সৌরভকে ডেকে চিকিৎসক জানান, ‘‘আসলে তোমার বাবা এই এক-দেড় মাস খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আর তার ফল এই ধরনের শারীরিক অসুস্থতা।’’ আর এক চিকিৎসক সৌরভের সঙ্গে ছবি তুলতে চেয়েছিলেন। সৌরভ তাঁকে অনুরোধ করেন, যেন তাঁর বাবার সামনে গিয়ে ছবি তোলা হয়। যাতে বাবার ভাল লাগে। মনে হয় যেন, সব ঠিক আছে।

ঘটনাটি ঘটার পরে সৌরভ নিজের ফোন নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিলেন। কারও সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা ছিল না তাঁর। সহকারীর ফোন থেকে কথা হত কেবল পরিবারের সঙ্গে। যাঁকে নিয়ে ভিডিয়ো প্রকাশ পেয়েছিল, সেই বোনও সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকতেন দাদাকে নিয়ে। সহকারীর ফোনে কল করে সৌরভের গলায় ‘হ্যালো’-টুকু শুনতেন কেবল। সৌরভ জানালেন, ‘‘তার ঠিক আগেই হয়তো আমি কাঁদছিলাম। কিন্তু বোনুর ফোন এলেই আমি নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক গলায় কথা বলতাম। ও শুধু আমার গলাটা শুনেই শান্তি পেত।’’

‘‘ভেবেছিলাম, কাউকে কিছু উত্তর দেব না। কিন্তু মা বলল, ‘তোর কাছে গোটা ভিডিয়োটা আছে, ছাড়ছিস না কেন!’ বুঝলাম, নিজেকে একটু স্পষ্ট করে মেলে না ধরলে এই কুৎসিত কথাবার্তার কোনও লাগাম থাকবে না। তাই ইনস্টাগ্রামে ওই ভিডিয়োর অন্য অংশ পোস্ট করে লেখাটা লিখেছিলাম। তার পর নেটমাধ্যম থেকে নিজেকে সরিয়ে আনি কয়েক দিনের জন্য।’’

 সৌরভ দাস ও তাঁর বোন।

সৌরভ দাস ও তাঁর বোন।

প্রার্থী হয়ে দাঁড়ানোর কথা হয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনার পর সৌরভ নিজেই দলের প্রত্যেককে অনুরোধ করেন, যাতে এই নির্বাচন থেকে তাঁকে দূরে রাখা হয়। প্রচারে তিনি যাবেন। বিশেষ করে পরিচালক ও তৃণমূল প্রার্থী রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে ব্যারাকপুরের প্রচারে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। সৌরভের কথায়, ‘‘মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, এই কথাটা এত লোক এত ভাবে বলে বেড়াচ্ছেন যে কথাটার ওজন কমে গিয়েছে। কিছু বলতে চাই না আমি। আমার বাবারই ছেলে আমি। তাঁর মতো মানুষের সাহায্য করব। সেটা বলে বেড়াব না। আর তার জন্য প্রার্থী হওয়ার দরকার পড়ে না।’’

আজ তাঁর পরিবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকাটা সব থেকে প্রয়োজন তাঁর। এমনটাই জানালেন সৌরভ। ‘‘সাউথ পয়েন্টে পড়তাম। মা আপেল দিত টিফিনে। নিজে খেতাম না। মা-কে না জানিয়ে রোজ এক জন ভিখিরিকে সে আপেলটা দিতাম। এটা আমি করেই যাব। সারা জীবন। কিন্তু এখন মা, বাবা ও বোনের আশ্রয় হয়ে দাঁড়ানোটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই সিদ্ধান্ত বদল আমার।’’

সম্প্রতি সৌরভকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শোনা গিয়েছিল, তৃণমূল কর্মী ও অভিনেতা সৌরভ দাস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি। এর পর থেকেই তাঁর প্রেমিকা অভিনেত্রী অনিন্দিতা বসুর কাছে ফোনের পর ফোন। ‘‘সৌরভের কী হয়েছে?’’ দুর্ঘটনা শুনেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ২ শিল্পীর পরিবার ও বন্ধুবান্ধব।

খবরের সত্যতা যাচাই করার জন্য আনন্দবাজার ডিজিটাল অনিন্দিতা বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করল। টলি-নায়িকা জানালেন, ‘‘হ্যাঁ, শ্যুট থেকে ফেরার পথে একটি লরির সঙ্গে সৌরভের গাড়ির প্রায় ধাক্কা লাগছিল বটে। কিন্তু এ ছাড়া অনেক কিছুই রটছে। সেগুলো গুজব। আর গুজব কত দূর গড়াতে পারে, তা তো দেখেইছি। তবে সৌরভ এখন ঠিক আছে।’’

দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে সৌরভ জানালেন, বোলপুর থেকে শ্যুট করে ফিরছিলেন রাতে। একটি লরির সঙ্গে প্রায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে যাচ্ছিল। একটুর জন্য প্রাণে বেঁচে যান সকলেই। লরির যাত্রীরাও ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছেন। অভিনেতা বললেন, ‘‘মাথার বাঁ দিকে চোট পেয়েছি। সে দিনই পরীক্ষা করিয়েছি। ফলাফল ঠিকই আছে। কিন্তু শরীরে দুর্বলতা রয়েছে। মাথা ঘুরছে হালকা। তাই আবার পরীক্ষা করাতে হবে। মনের ভিতরে আতঙ্কটা রয়ে গিয়েছে। তবে এমনিতে সুস্থ রয়েছি। হাসপাতালে ভর্তি থাকার খবরটা একদমই ভিত্তিহীন। বাড়ির কাউকে বা ‌অনিন্দিতাকেও জানাইনি শুরুতে। খবর পড়ে পরিবারের সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তার পর ধীরে ধীরে জানাই সবটা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy