কোটা সংস্কার আন্দোলনে শামিল আজমেরী হক বাঁধন। গ্রাফিক : সনৎ সিংহ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় জলছবি। অঝ়োর বৃষ্টি, তার মধ্যেই ছাতা মাথায় কেউ, আবার কেউ হাঁটছেন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে। অধিকাংশের পরনেই কালো জামা। সে দেশের সরকারের বিরুদ্ধে উঠছে মুহুর্মুহু স্লোগান। কোথাও আবার উঠেছে সমবেত কণ্ঠে সুর, ‘‘জোয়ার এসেছে গণসমুদ্রে, রক্ত দাও রক্ত দাও।’’
এ দিন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই জমায়েত করেন সাধারণ মানুষ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এ দিন রাস্তায় নামেন অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। এই মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় অভিনেতা মোশাররফ করিম, আজমেরী হক বাঁধনদের। ছিলেন রাফিয়াত রাশিদ মিথিলা , আশফাক নিপুণ, সোহেল মণ্ডলের মতো অসংখ্য শিল্পী। এ দিনের জমায়েত থেকে ফিরে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন অভিনেত্রী বাঁধন।
ও পার বাংলা থেকে ভেসে এল বাঁধনের কণ্ঠ। কথা বলতে বলতেই আবেগে বুজে এল গলা। অভিনেত্রী বলেন, ‘‘যে দিন থেকে এই ঘটনা ঘটেছে, দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। একটা অসহ্য পরিস্থিতি চলছে। আমাদের দেশের ছাত্রেরা দেখিয়ে দিল কী ভাবে প্রতিবাদ করতে হয়। আমি কথা বলতে গিয়ে হয়তো রেগে যাচ্ছি। যে হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল এবং ঘটছে, সেটির বিচার কি আমি চাইব না? যদি না চাই, তা হলে তো আমি এই রাষ্ট্রের কেউ না। তা হলে তো অমানুষ। আমার মনে হয়েছে, এর প্রতিবাদ করা উচিত।’’
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে গণ গ্রেফতারি চলছে বলেই দাবি করেন অভিনেত্রী। তাঁর অভিযোগ, নাবালাক শিক্ষার্থীদেরও রেয়াত করা হচ্ছে না। ছাত্র-ছাত্রীদের যে ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তারই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রাণ গিয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের। বাঁধন দাবি করেন, সাঈদের হত্যায় অভিযুক্ত হিসেবে ১৬ বছরের এক নাবালককে ধরেছে পুলিশ। যদিও সে জামিন পেয়েছে। কিন্তু বাঁধন দাবি করেছেন, এটা দ্বিচারিতা। তিনি বলেন, “যত দিন শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে রয়েছেন, তত দিন তাঁদের সঙ্গেই থাকবেন।”
বাঁধন বলেন, ‘‘আমার প্রশ্ন, রাষ্ট্র কি জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে না? নাবালকদের যে ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে, মানতে পারছি না। আমি স্বস্তিতে থাকতে পারছি না। কারণ আমিও মা, ১২ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে আমার।’’ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। অভিনেত্রীর দাবি, তাঁর দেশে নিরপেক্ষ সংবাদ পেশ করা হচ্ছে না। তিনি বলেছেন, “আমার ১২ বছরের মেয়েও বলছে, বন্ধ করো এ সব ভুয়ো খবর।”
যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন বাঁধন, সেই রাষ্ট্রই তাঁকে দিয়েছে একাকী মা হিসেবে মেয়ের পূর্ণ অভিভাবকত্বের অধিকার। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বাঁধনই প্রথম মহিলা, যিনি সন্তানের পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়েছেন। ফলে সরকারের বিরাগভাজন হয়ে পড়ার ভয় কি পাচ্ছেন তিনি? উত্তরে বাঁধন বলেন, ‘‘এটা ঠিক, দেশের সুবিধাভোগী নাগরিক আমি। তবে অন্যায়টা তো অন্যায়, যে-ই করুক না কেন! এখনও আমাকে গ্রেফতার করার মতো পরিস্থিতি আসেনি। আমি এ দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক। কিন্তু আজ আমাদের মিছিলে শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছেলেগুলি বা অন্য যে সব টেকনিশিয়ান হেঁটেছেন, তাঁদের তো গ্রেফতার করা হতেই পারেই।’’
দেশের উত্তাল পরিস্থিতি, কার্ফু জারি থেকে রাজপথে সেনা ট্যাঙ্কার নামা, গুলিতে রক্তাক্ত রাজপথ— সবই দেখেছেন, তবু দেশ ছাড়বেন না অভিনেত্রী। দৃপ্ত কণ্ঠে বাঁধন বলেন, ‘‘আমার অন্য কোনও দেশের পাসপোর্ট নেই যে পালিয়ে যাব। স্বাধীন দেশে আমার জন্ম, এইগুলো মেনে নেওয়া যায় না। এই দেশেই থাকব।’’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন অভিনেতা মোশাররফ করিম। তিনি বলেন, ‘‘আমরা রক্তপাত চাই না, আমরা শান্তি চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy