ট্রেলার দেখে গল্পটা বেশ অনুমান করা যাচ্ছিল। ছবি দেখতে বসে বোঝা গেল, সেই অনুমান মিথ্যে হয়নি। তবু ‘বাচ্চা শ্বশুর’ নিরাশ করেনি।
পারিবারিক মোড়কে তৈরি হাসির বাংলা ছবি যেমনটা হয়, সেই চেনা ছকেই বাঁধা হয়েছে ‘বাচ্চা শ্বশুর’কে। জোনাকির (কৌশানী মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে জমাটি প্রেম স্পন্দনের (জিৎ)। জাঁদরেল শ্বশুর (চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী) আর কুটিল শ্যালকের (অম্বরীশ ভট্টাচার্য) মন জোগাতে অপারগ স্পন্দন প্রেমিকাকে নিয়ে পালায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই স্পন্দন-জোনাকির বিয়ে, ছেলের জন্ম... শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও শ্বশুর কিছুতেই জামাইয়ের পিছু ছাড়ে না। মুখের বুলি না ফুটলেও দম্পতির সন্তান কী ভাবে যেন কথা বলে অবিকল শ্বশুরের স্বরে। তা শুধু নজরে পড়ে একা স্পন্দনেরই! যত বিপত্তি এখানেই। তা কি স্পন্দনের বিভ্রম? না কি বাচ্চার উপরে সত্যিই ভর করেছে শ্বশুর? জবাব দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মিলবে।
এ ছবির গল্প পাভেলের। তিনি চিত্রনাট্যেও কলম ধরেছেন। স্ত্রীর ভয়ে কাবু স্বামীর মুখে ‘আমি পাতি, নই পরমেশ্বর’ জাতীয় ডায়লগ শুনতে দিব্যি লাগে। কমিকের মোড়কে গল্প শুরু হলেও সাবপ্লটে উঠে এসেছে নানা বার্তা। দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে প্রেম আসলে খুব জটিল ব্যাপার নয়। হাসির রোলের মাঝেই মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রের চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকা এক ছেলের যন্ত্রণায় বেজেছে করুণধ্বনি। একই কথা খাটে ঘুগনি দিদার (অনামিকা সাহা) ক্ষেত্রেও। তাকেও যে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যায় না কেউই। নায়কের মুখে ‘বস্তিতে মানুষ থাকে না?’ জাতীয় প্রশ্ন তুলে রীতিমতো হাততালি কুড়িয়েছেন চিত্রনাট্যকার। ছবিতে স্ট্যান্ড আপ কমেডি-জাতীয় ভিন্ন ধারার পেশার প্রত্যক্ষ প্রচার দেখে ভাল লাগে। স্পাইডি ও মেরি জেনের মোড়কে স্পন্দন-জোনাকির দাম্পত্যও অন্য রকম। কিছু ক্ষেত্রে ক্যামেরার কাজ বেশ ভাল। গানও শুনতে মন্দ লাগে না। তবে ছবির সমস্ত কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার কাজ নির্মাতারা না করলেও পারতেন। যেমন নির্ভেজাল হাসির সংলাপে শুরু হয়েছিল ছবি, শেষ অবধি সংলাপে সেই মেদহীনতা বজায় রইল কোথায়? সর্বোপরি, ছবিটিও নতুন কিছু যোগ করতে পারল না।
আরও পড়ুন: রহস্য ও প্রেমের মিশেল
আসা যাক, অভিনয় প্রসঙ্গে। চিরঞ্জিতের অভিনয় নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার অবকাশ নেই। তিনি তাঁর মতোই ভাল। কৌশানী পরিণত, চরিত্রের সঙ্গে সাবলীল। নেগেটিভ চরিত্রে অম্বরীশকে ভাল লেগেছে। তবে মুগ্ধ করেছে ছোট্ট আমন। তার নিষ্পাপ চেহারায় দুষ্টুমির জোয়ার, অভিনয়দক্ষতা দেখে অবাক হতে হয়। আমন নিঃসন্দেহে ছোটা প্যাকেট, বড়া ধমাল! ছোট চরিত্রে ঊর্মিমালা বসু, অনামিকা সাহা, কুশল চক্রবর্তী যথাযথ।
আর বাকি থাকেন জিৎ। তাঁর কমিক টাইমিং, মিমিক্রি করার অসাধারণ দক্ষতা এবং নেচে-গেয়ে দর্শককে মাতিয়ে রাখার ভরপুর এনার্জি দেখে তারিফ করা ছাড়া উপায় থাকে না। ছবিতে নায়কের সংলাপের মতোই জিৎ আসলে ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর মাটি আঁকড়ে থাকার কারণ বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বলে— ‘‘আমি ছিলাম, থাকব আর বারবার ফিরে আসব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy