সংসার চালাতে নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে, পড়া ছেড়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। এখন যাঁকে বলিউড অরুণা ইরানি নামে চেনে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:১৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু আট সন্তানের সংসার আর টানতে পারছিলেন না বাবা। সংসার চালাতে নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে, পড়া ছেড়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। এখন যাঁকে বলিউড অরুণা ইরানি নামে চেনে।
০২১৬
অরুণা ইরানি সংসারের জন্য নিজের জীবনের এমন অনেক ইচ্ছা, ভাললাগাকেই আজীবন বিসর্জন দিয়ে এসেছেন। কখনও কারও থেকে খুব বেশি কিছু পাওয়ার আশা রাখেননি তিনি। আর এতেই লুকিয়ে রয়েছে তাঁর সবসময় হাসিখুশি রাখার মন্ত্র।
০৩১৬
১৯৪৬ সালে মুম্বইয়ের এক ইরানি পরিবারে জন্ম অরুণার। বাবার একটি নাটকের দল ছিল। মা সগুনাও অভিনয়ের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন।
০৪১৬
অরুণারা আট ভাইবোন। তাঁদের মধ্যে অরুণাই ছিলেন সবচেয়ে বড়। তাই সংসারের প্রতি তাঁর দায়দায়িত্বও অন্যদের থেকে অনেক বেশি ছিল।
০৫১৬
আট সন্তানের দেখভাল করা, তাঁদের পড়াশোনা, খাওয়ার খরচ আর বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না অরুণার বাবার দ্বারা। বাবার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ছোট্ট অরুণা সংসারের হাল ধরার মনস্থির করেন।
০৬১৬
কিন্তু অরুণাও তখন যথেষ্ট ছোট। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। ছোট থেকে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। সেই ছোট বয়সেই এতটা বুঝদার ছিলেন যে, নিজের স্বপ্ন ত্যাগ করে কাজ করতে শুরু করেন অরুণা।
০৭১৬
১৯৬১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। ফিল্ম ‘গঙ্গা যমুনা’-তে তিনি প্রথম অভিনয় করেন।
০৮১৬
পরের বছর ‘অনপড়’ ছবিতে মালা সিন্হার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর অভিনয় দক্ষতা তাঁর সামনে একটার পর একটা সুযোগ এনে দিয়েছিল।
০৯১৬
হিন্দি, মরাঠি, তেলুগু মিলিয়ে পাঁচশোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন তিনি।
১০১৬
নিতান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অরুণার প্রথমে খুব অসুবিধা হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে মানিয়ে চলতে। মাত্র ষষ্ঠ শ্রেনি পর্যন্ত পড়েছেন তিনি। তার উপর গ্ল্যামার দুনিয়ার আদবকায়দার সঙ্গে একেবারেই পরিচিত ছিলেন না। ইংরেজি জ্ঞানও খুব কম ছিল।
১১১৬
ইংরেজিতে কথা বলতে শেখার জন্য টিউশনের খরচও তাঁর পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না তখন। ফলে নিজেই একটা ইংরাজি থেকে হিন্দি এবং হিন্দি থেকে ইংরাজির ডিকশনারি কিনে ফেলেন। যখনই কোনও ইংরেজি শব্দ শুনতেন ডিকশনারিতে তার মানে দেখে নিতেন। এইভাবে আস্তে আস্তে ইংরেজি শেখেন তিনি।
১২১৬
সংসার টানতে গিয়ে জীবনের ৪০ বছর কখন যে পেরিয়ে গিয়েছিল, সে দিকে খেয়ালই ছিল না অরুণার। ৪০ বছর বয়সে তিনি পরিচালক কুকু কোহালিকে বিয়ে করেন।
১৩১৬
কুকু কোহালি আগে থেকেই বিবাহিত ছিলেন। সন্তানও ছিল তাঁর। কুকু-র বিয়ের খবর অরুণার কাছেও অজানা ছিল না। তা সত্ত্বেও ১৯৯০ সালে তাঁকে বিয়ে করেন অরুণা। পরবর্তীকালে তাঁর সন্তানদেরই আপন করে নেন।
১৪১৬
কুকু কোহলির আগে অরুণার জীবনে আরও এক পুরুষের প্রবেশ ঘটেছিল। তিনি হিন্দি ফিল্মের অভিনেতা, কমেডিয়ান মেহমুদ। তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে এক সময় ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ গু়ঞ্জন ছড়িয়েছিল। কিন্তু মেহমুদ বা অরুণা কেউই কখনও প্রকাশ্যে তাঁদের প্রেমের কথা স্বীকার করেননি।
১৫১৬
পড়াশোনা শিখিয়ে ভাইবোনদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন অরুণা। তাঁর তিন ভাই ইন্দ্র কুমার, আদি ইরানি এবং ফিরোজ ইরানি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গেই যুক্ত। কিন্তু নিজের জীবনের স্বপ্নভঙ্গগুলো আজও নাড়া দিয়ে যায় তাঁকে।
১৬১৬
২০০২ সাল থেকে তিনি ফিল্মে অভিনয় করা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছেন। টেলিভিশনেই অভিনয় করেন এখন। কোনও কিছু নিয়েই আফশোস নেই তাঁর। তাঁর মতে, “জীবনের অঙ্কটা খুব ভাল ভাবে শিখেছি। সুখ-দুঃখ সবই এসেছে আমার জীবনে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিখেছি, কী ভাবে সেটাকে ম্যানেজ করতে হয়।”