মিমি, শ্রাবন্তী এবং রূপঙ্কর।
আট মাস পরে ‘দিদি’ ফিরেছেন মঞ্চে। রাজনীতির নন, টেলিভিশনের জনপ্রিয় ‘দিদি’ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন তিনেক আগেই হাওড়ার পাঁশকুড়ায় তাঁর শোয়ের ছবি পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রামে। ‘‘অন্য বার অক্টোবর থেকে আমার শো শুরু হয়ে যায়। এ বার এত পরে শুরু করলাম। পূর্ব মেদিনীপুরেও শো করেছি,’’ উচ্ছ্বাস তাঁর কণ্ঠে। কাঁথিতে এই মরসুমের দ্বিতীয় শো করেছেন সাংসদ-অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে জনসংযোগ গড়ে তোলার গুরুত্ব তাঁর কাছে অপরিসীম। তবে মিমিও জানেন জলসার জৌলুসে এ বার ভাটাই বেশি, ‘‘আগের মতো শো করা সম্ভব হচ্ছে না এখন। অনেক নিয়মকানুন মানতে হচ্ছে।’’ গত ২৫ ডিসেম্বর আরামবাগে এই মরসুমের প্রথম শো করেছেন শ্রাবন্তী। সামনেও তাঁর হাতভর্তি শো।
ইংরেজি বছরের বিদায় এবং নতুন বছরের প্রথম মাসে জলসা-অনুষ্ঠানের দাপট বেশি থাকে। ছবির তারকা ও সঙ্গীতশিল্পীদের কাছে এই সময়টা শোয়ের জন্য আদর্শ। তবে এ বছরের শুরু আর পাঁচটা বছরের মতো ছিল না। করোনার চোখে চোখ রেখেই জীবনযাত্রার স্বাভাবিক ছন্দে ধীরে ধীরে ফিরছে বাংলা। সঙ্গে মঞ্চে বাংলার জনপ্রিয় শিল্পীরা। অন্য বারের তুলনায় সংখ্যা অনেকটা কম হলেও, গত কয়েক মাসে শহর-মফস্সল এবং জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে গানের জলসা, তারকাদের শো। সেখানে দর্শকাসনে উপচে পড়া ভিড় সর্বত্র না থাকলেও, ফাঁকা আসনের দৃশ্য কিন্তু সে ভাবে ধরা পড়েনি।
গায়িকা লোপামুদ্রা মিত্রের কথায়, ‘‘লেকটাউন, ট্যাংরার পাশাপাশি বর্ধমান, হাওড়ার মহিষাদলে পারফর্ম করলাম। আমার প্রত্যাশার চেয়ে কিন্তু বেশি দর্শক পেয়েছি।’’ ব্যারাকপুরের একটি শোয়ে মঞ্চে ওঠার ঠিক আগেই আনন্দ প্লাসকে রূপঙ্কর বাগচি ফোনে বললেন, ‘‘নভেম্বর থেকেই শো করছি। নিউ নর্মালে দর্শকের মুখে মাস্ক দেখছি। তবে আলাদা কিছু মনে হয়নি।’’ সম্প্রতি বনহুগলিতে শো করেছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। মনোময় ভট্টাচার্য, ইমন চক্রবর্তীও বেশ কয়েকটি জায়গায় অনুষ্ঠান করেছেন ইতিমধ্যেই। রচনা, মিমি, শ্রাবন্তীর পাশাপাশি এই মরসুমে শো করেছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে জলসা?
সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই বোঝা যায়, গত মাস থেকে শহর-জেলায় যে শোগুলি হয়েছে, সেখানে দূরত্ববিধির কড়াকড়ি ছিল না। ‘‘নিয়মবিধি মানা কতটা সম্ভব হয়েছিল বলতে পারব না। আমি স্টেজে ছিলাম। আর সেটা দেখার দায়িত্ব ক্লাব-কমিটির,’’ জবাব উদ্যোক্তা তোচন ঘোষের। খড়দহ, মেদিনীপুরে শোয়ের আয়োজন করেছেন তোচন। অনুপম রায়, রূপঙ্করকে নিয়ে একটা এবং মুম্বইয়ের এক মুকেশকণ্ঠী ও অরিজিৎকণ্ঠীকে নিয়েও শো করেছেন তিনি। বেঙ্গালুরুতে সোনু নিগমের শো-ও করেছেন। সেখানে দর্শক মাস্ক পরেছিলেন বলেই মত তাঁর।
তারকাদের অনেকেরই মত, কাজ করতে গেলে দূরত্ববিধি মানা সম্ভব নয়। ‘‘করোনা নিয়ে বসে থাকলে জীবন, সংসার কোনওটাই চলবে না। এই ধরনের কাজে দূরত্ববিধি মানা যায় না,’’ স্পষ্ট জবাব রচনার। ‘‘মিটিং-মিছিলে যখন দূরত্ববিধির বালাই নেই, তখন আমাদের শোয়েই বা থাকবে কী করে?’’ মন্তব্য লোপামুদ্রার। আবার মিমির মতে, ‘‘দর্শকাসনে ব্লক ব্লক করে পৃথকীকরণ করা ছিল।’’ শ্রাবন্তীর কথায়, ‘‘স্টেজে করোনা-বিধি মানা হয়েছে। দর্শক মানছেন কি না, তা দেখার দায়িত্ব আয়োজকদের।’’
নিম্নমুখী সংখ্যা ও বাজেট-যোগ
অন্য বছর রূপঙ্করের অনুষ্ঠানের সংখ্যা যদি মাসে হয় ১৬-১৭টা, এ বারে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে চার-পাঁচে। লোপামুদ্রার শোয়ের সংখ্যাও পাঁচের কমই। মেলা-উৎসব শুরু হলেও তার বহর-আড়ম্বর যে অনেকটাই কম, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু না হওয়ার চেয়ে কিছু হোক, সেটাই মত বেশির ভাগ শিল্পীর। ‘‘আগে যদি মাসে পঁচিশটা শো করতাম, এখন সেটা পাঁচ। গত বছর দুর্গাপুজো, কালীপুজো আর জগদ্ধাত্রীপুজোয় সায়ন্তিকা আর প্রিয়ঙ্কা সরকারের একটা করে ওপেনিং করেছিলাম,’’ বললেন মাচার অন্যতম আয়োজক গৌতম ভৌমিক।
আর এক আয়োজক বাবুয়া ভৌমিকের কথায়, ‘‘ছোট ছোট শো, যাতে দর্শকসংখ্যা দশ-পনেরো হাজার, সেগুলো কিছু কিছু হচ্ছে। কোনও নেতা বা মন্ত্রী করলে, তা হলেই হচ্ছে। বড় শো পুরোপুরি বন্ধ। টিকিট বিক্রি করে যে সব প্রোগ্রাম, সেগুলোও সব বন্ধ।’’ আয়োজকদের মতে, পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি আদায়েও বেগ পেতে হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে।
পারিশ্রমিকের টানাপড়েন
জনসংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি এই শোগুলি থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন করেন শিল্পীরা। তাঁদের মুখ প্রচারে রেখেই শোয়ের সঙ্গে যুক্ত বহু কর্মীর সংসার চলে। করোনার কোপে উদ্যোক্তাদের অনেকেই শিল্পীদের সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে দরাদরি করছেন। তবে সাত-আট মাস পরে কাজ শুরু হওয়ায়, এই দফায় আপস করতে চাইছেন না কেউই। লোপামুদ্রার কথায়, ‘‘আমি অপেক্ষা করতে রাজি। তবে কম পারিশ্রমিকে কাজ করব না। তাতে শো কম হলে ক্ষতি নেই।’’ এ দিকে আয়োজক তোচন ঘোষের দাবি, ‘‘এই পরিস্থিতিতে রেট কেউ কমাচ্ছেনই না, উল্টে বাড়িয়ে দিয়েছেন।’’ কিন্তু অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর বক্তব্য, ‘‘আমার পারিশ্রমিক যা ছিল, তা-ই আছে। পারিশ্রমিক কেউ বাড়িয়েছেন বলে আমার মনে হয় না।’’
ছোট পরিসরে হলেও, শো শুরু হওয়ায় স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত সকলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy