‘অর্ধাঙ্গিনী’ ছবির একটি দৃশ্যে চূর্ণী, অম্বরীশ এবং জয়া। ছবি: সংগৃহীত।
‘প্রাক্তন’ শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ফেলে আসা অতীত। ভাল হোক বা খারাপ, যে স্মৃতির রোমন্থন মানুষকে পথ চলতে কখনও কখনও হোঁচট খেতে হয়তো বাধ্য করে। আর সেই প্রাক্তন যখন কারও স্ত্রী হন, তখন বর্তমানের সঙ্গে অতীতের দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়। হিসাবের খাতায় জমে থাকা অভিমান, ক্ষোভ হয়তো বা মুহূর্তের আনন্দগুলোও বেরিয়ে এসে সম্পর্কের সমীকরণ ব্যালান্স করতে চায়।
আইনি বিয়ের মুহূর্ত। স্ত্রী স্বামীর আঙুলে আংটি পরিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ দৃশ্য পরিবর্তন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা শরীরের সেই আঙুলেই এখন পাল্স মাপার যন্ত্রটি শোভা পাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী রাতে শুতে যাওয়ার আগে বিছানায় দৈনন্দিন সাংসারিক আলোচনায় ব্যস্ত। আবার পট পরিবর্তন। স্বামীর পাশে শুয়ে থাকা নারীটি অন্য কেউ, তার বর্তমান স্ত্রী। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘অর্ধাঙ্গিনী’ ছবিতে এ রকমই কিছু দৃশ্য ক্ষয়িষ্ণু জীবনের দ্রুত পট পরিবর্তনকে তুলে ধরে। তুলে ধরে অতীত এবং বর্তমানের সমান্তরাল লড়াইকে। সেখানে পরিচালক প্রাক্তন এবং বর্তমান স্ত্রীর সমীকরণকে মাপতে চেয়েছেন তাঁদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা স্বামীর ভাল-মন্দের বিচারে।
বিয়ের ১৭টা বছর পর সুমন (কৌশিক সেন) এবং শুভ্রা (চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়) তাদের সাংসারিক জীবনে ইতি টানে। বেশ তো এগোচ্ছিল দুই প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যজীবনের নতুন ইনিংস। কিন্তু বাদ সাধে সুমনের আকস্মিক অসুস্থতা। শপিং মলে সেরিব্রাল অ্যাটাক, রাতারাতি তার ঠিকানা বদলে হয় হাসপাতালের বেড। সুমন এখন বিবাহিত। তার স্ত্রী মেঘনা (জয়া আহসান) মুসলমান। তাই ভবানীপুরের বনেদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে তাদের নতুন সংসার গল্ফ গ্রিনের ভাড়াবাড়িতে। এ পার বাংলায় সদ্য পা রাখা মেঘনা পরিস্থিতির জালে জড়িয়ে এক প্রকার স্বামীকে বাঁচাতেই শুভ্রার শরণাপন্ন হয়। টাকার জন্য নয়, স্বামীর ফেলে আসা সংসারের চাবিটি যার হাতে, স্বামীর সেই প্রাক্তন স্ত্রীর থেকে সে হিসেব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করে। চেষ্টা করে স্বামীকে নতুন করে চিনে নিতে। সুমন আবার ফিরে আসবে কি না, তার হদিস রয়েছে ছবির শেষে। কিন্তু ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ের ময়দানে এই দুই নারীচরিত্রের অসহয়তা, পরস্পরের প্রতি সাহায্যের হাত, আত্মসম্মান বোধ বা কখনও প্রতিহিংসার যে চিত্র পরিচালক এঁকেছেন, তা ছবির অন্যতম আকর্ষণ।
ছবির পোস্টার স্মরণ করে বলাই যায়, ‘অর্ধাঙ্গিনী’ যতটা চূর্ণীর, ঠিক ততটাই জয়ার। সাধারণত স্ত্রীকে স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী বলা হয়। কিন্তু এই ছবিতে শব্দটির ভিন্ন অর্থ খুঁজতে চেয়েছেন পরিচালক। দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন চূর্ণী। ট্রেলারের দৌলতে ইতিমধ্যেই তাঁর সংলাপ ভাইরাল হয়েছে। তবে সেটা ছবির তুলনায় সমুদ্রে ডুবে থাকা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। কয়েকটি দৃশ্যে শুধুমাত্র চাহনির ব্যবহারেই প্রতিপক্ষকে এক পা এগোতে দেননি তিনি। জয়ার চরিত্রটি যে ভাবে লেখা হয়েছে, তাতে অসহায়তার দৃশ্যে তিনি অনবদ্য। তবে চূর্ণীকে টক্কর দেওয়ার মতো সংলাপও তাঁকে দিয়েছেন পরিচালক। কৌশিক সেনকে দেখে দর্শকের রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। সেই পরীক্ষায় তিনি সসম্মানে পাশ করেছেন। আলাদা করে নজর কেড়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী লিলি চত্রবর্তী। সুমনের মায়ের চরিত্রে তাঁর অভিনয় মনে রাখার মতো। আরও এক জনের কথা না বললেই নয়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য। তাঁর অভিনীত সুকান্ত চরিত্রটি যেমন ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছে, তেমনই এমন সিরিয়াস ছবিতে ক্ষণিকের কৌতুক হাজির করে দর্শককে হাসিয়েছে। ছোট ছোট চরিত্রে প্রয়াত অভিনেতা অরুণ গুহঠাকুরতা, দামিনী বেণী বসুর অভিনয় ছবিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
কৌশিকের পরিচিত টিম এই ছবির সঙ্গে যুক্ত। চূর্ণী এবং জয়ার মুখোমুখি দৃশ্যে গোপী ভগতের ক্যামেরা দারুণ কিছু মুহূর্ত তৈরি করেছে। হাসপাতালের অলিগলিতে তাঁর ক্যামেরা ছবির প্রয়োজনীয় টেনশনকে ধরে রেখেছে। অনুপম রায়ের কণ্ঠে ‘শরীর ভাল নেই’ এবং ইমন চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘আলাদা আলাদা’ গান দুটি গল্পের রাশ ধরে রাখে। শুভজিৎ সিংহের সম্পাদনা অতীত এবং বর্তমানের সময়কালকে সুন্দর ভাবে পাশাপাশি তুলে ধরেছে। তবে পরিচালকের কাছে একটাই অভিযোগ, জয়ার অতীতের কিছু দিক জানার কৌতূহল মিটল না। কিন্তু সব মিলিয়ে ‘অর্ধাঙ্গিনী’ নিরাশ করবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy