Advertisement
E-Paper

বাংলার জন্য দেখা স্বপ্নের কঙ্কাল চারদিকে ছড়িয়ে! মানুষটাও চলে গেলেন

বুদ্ধকাকু এই বাংলার জন্য একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমাদের প্রজন্ম এবং তার পরের প্রজন্ম, সকলের জন্য স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্নটা তো অনেক আগেই মরে গিয়েছে।

Anindita Sarbadhikari writes a heartfelt note on Buddhadeb Bhattacharya\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s demise

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।

অনিন্দিতা সর্বাধিকারী

অনিন্দিতা সর্বাধিকারী

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ১২:৩৮
Share
Save

খুব ছোটবেলা থেকে বুদ্ধকাকুকে চিনি। আমি সত্যি কোনও দিন শুনিনি কোনও মুখ্যমন্ত্রী ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে সদ্য পাশ করা ছাত্রীর বানানো ছবি মন দিয়ে দেখেন। হ্যাঁ, আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। বুদ্ধকাকু, বিমানকাকু, আমার বাবা এঁরা সহযোদ্ধা ছিলেন। আমি কোনও দিন সরকারের টাকায় কোনও ছবিও বানাইনি। তবু আমার কেরিয়ারে ওঠাপড়া, সব তিনি খুব কাছ থেকে খবর রাখতেন। ডিপ্লোমার সময়ে যে ছবি বানিয়েছিলাম সেটাও তিনি দেখেছিলেন।

নন্দীগ্রামের পর আমার কেরিয়ারে একটা বড় ধাক্কা লেগেছিল। আমি আক্রান্তই হয়েছিলাম। কিন্তু আমরা জানি, বুদ্ধকাকু এই বাংলার জন্য একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমাদের প্রজন্ম এবং তার পরের প্রজন্ম, সকলের জন্য স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্নটা তো অনেক আগেই মরে গিয়েছে। সেই স্বপ্নের কঙ্কাল পড়ে রয়েছে চারদিকে, সিঙ্গুরের রাস্তার ধারে। আর আজ স্বপ্ন দেখার মানুষটাও চলে গেল।

২০০৯-এ মিউনিখ চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছিলাম আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। ফিরে আসার পর বুদ্ধকাকুর সঙ্গে দেখা। পার্টি অফিসে আড়াই ঘণ্টা কাকুর সঙ্গে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যিক ও ছবি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। কাকু ও আমার দু’জনেরই প্রিয় লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ়। সেই নিয়ে কত কথা হয়েছিল!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হয়েছিল আমাদের। আমি মিউনিখ চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ড্যাখাউ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। যখনই কোথাও যেতাম কাকুর জন্য সিগারেট নিয়ে আসতাম। মিশর থেকে সিগারেট এনে দিয়েছিলাম, মনে আছে। বাবা ও কাকু দু’জনের জন্যই আনতাম। তাই আমিও বোধহয় একটু অপরাধী। হয়তো হাতে করে বিষই তুলে দিয়েছিলাম। আজ খারাপ লাগছে। কিন্তু তখন তো ভালবেসেই দিয়েছি।

এক জন রাজনীতিবিদ আড়াই ঘণ্টা ধরে বই, সাহিত্য, ছবি, ইতিহাস নিয়ে টানা কথা বলে যেতে পারেন! তা-ও পরবর্তী প্রজন্মের একটি মেয়ের সঙ্গে! সত্যিই এটা একটা অসাধারণ প্রতিভার পরিচয়। ওঁর কথা কখনও ফুরিয়ে যেত না। ঠিক রাজনীতিতে আসার মানুষ নন। অথবা, সত্যিই এমন মানুষেরই রাজনীতিতে আসা উচিত। স্বার্থলোভী মানুষ নন।

অনেক বড় ক্ষতি হল আজ। একটা মানুষ, যাঁর কোনও লোভ নেই, সিগারেট ছাড়া কোনও নেশা নেই। ২০১০-এ আমার বাবার হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসক ধূমপান বন্ধ করতে বলেন। বিমানকাকুকে বলেছিলাম, “বাবাকে একটু বোঝাও, যাতে সিগারেটটা ছাড়ে।” বিমানকাকু বলেছিলেন, “খবরদার, বুদ্ধকে যেন এটা বলতে যাস না। ও বলবে, ‘যে সিগারেট ছাড়তে পারে, সে দলও ছাড়তে পারে।’” এই সিগারেটই সর্বনাশ ডেকে আনল।

একটা প্রজন্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই প্রজন্মের মূল্যবোধ, শিরদাঁড়ার জোর সেটাও চলে যাচ্ছে। আমাদের প্রজন্ম এড়িয়ে যেতে, আপস করতে শিখেছে। ভাবা যায়, একটা মানুষ রোজ কাজ শেষ করে নন্দনে গিয়ে ছবি দেখতেন! তাই নিয়েও কত কুৎসা করা হয়েছে! দেশ-বিদেশের ছবি দেখতে ভালবাসতেন। এক বার রেগে গিয়ে কাকুকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। সেটা মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পাঠিয়েছিলাম। আমি তত দিনে বিদেশের বেশ কিছু চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিয়েছি। তাই আমার দাবি ছিল, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আমাকে কেন কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেই বছরই হাঙ্গেরির চিত্রপরিচালক মার্থা মিসরসকে কলকাতায় নিয়ে আসা এবং ওঁর যাবতীয় দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়।

প্রতি বছর বইমেলায় আমাদের প্রতিবাদী কবিতার একটি বই বেরোয়। তখন রাজনৈতিক দলগুলি পরস্পরকে আক্রমণ করত। আমরা স্থির করলাম, কবিতার মাধ্যমে প্রতিবাদ করব। প্রথম বইটা কাকুই উদ্বোধন করেছিলেন। ২০১১-র আগে ওঁর একটা বিরাট সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখানে জোসে সারামাগোর উপন্যাস অবলম্বনে ‘ব্লাইন্ডনেস’ ছবির কথা উল্লেখ করেন। ছবির বিষয় ছিল, অন্ধত্ব। একটি মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ে অন্ধত্ব। কেউ কিছু দেখতে পান না চোখে। শুধু এক জন মানুষ, সবটা দেখতে পান। পাগলের মতো তিনি চেষ্টা করেন সকলকে জাগাতে, দেখাতে বাস্তবটা। আমার মনে হয়, এমন কোনও কোনও মানুষ সত্যিই থাকেন, যাঁরা বাস্তবটা দেখতে পান। বুদ্ধকাকুও তাঁদেরই একজন।

আজ প্রায় কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করছে না। সম্প্রতি আমার একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে, পরিস্থিতি এমনই, এক বার যেতেও পারব না। বাবাকে নিয়ে যাওয়ার মতোও কেউ নেই। আমার ছেলে অগ্নিস্নাত (রুশো) আজ বার বার প্রশ্ন করছে, “মা আমি কি দাদুটাকে দেখেছি?” ও খুব ছোট ছিল। তখন ব্রিগেডে একঝলক বুদ্ধকাকুকে দেখেছিল রুশো। ওর মনে থাক সেই স্মৃতি, ও যেন আদর্শ বুকে নিয়ে বড় হতে পারে।

Buddhadeb Bhattacharjee Death Buddhadeb Bhattacharjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।