Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
nusrat jahan

Nusrat-Anindita: দাঁত-নখে শান দিয়ে নিন নুসরত, নিজের সন্তানকে রক্ষা করতে বাঘিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে

ছেলের জন্মের বিস্তারিত বিবরণ, মা হওয়ার বিবরণ চেয়ে আমার জীবনটাকেই যেন ‘ডিটেকশন টেবিল’-এ ফেলে কাটাছেঁড়া করতে শুরু করলেন স্কুল শিক্ষকেরা। এ যন্ত্রণা, লজ্জা লুকোই কোথায়?

নুসরত জাহান এবং সন্তানের সঙ্গে অনিন্দিতা সর্বাধিকারী

নুসরত জাহান এবং সন্তানের সঙ্গে অনিন্দিতা সর্বাধিকারী

অনিন্দিতা সর্বাধিকারী
অনিন্দিতা সর্বাধিকারী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২১ ১৭:১০
Share: Save:

সাল ২০১৩। আইভিএফ পদ্ধতিতে সফল মা আমি। বিয়ে নয়, ৩৯ বছরে এসে নিজের ইচ্ছেয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পিতৃপরিচয় ছাড়াই সন্তানের জন্ম দিয়েছিলাম। আমার নিজের শহর নড়ে বসেছিল। সাল ২০২১। একই পথে হাঁটলেন নুসরত জাহান। নিজের দায়িত্বে মা হলেন। জন্ম দিলেন আমারই মতো এক সুস্থ, পুত্র সন্তানের। ওঁকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।
তবে মা হওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমার মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে, আট বছরের ব্যবধানে সময় কতটা এগিয়েছে? আমি অন্তত কিছুই বুঝতে পারলাম না। মা হতে গিয়ে নুসরতকে কত কিছু সহ্য করতে হল! আমি ভাগ্যবান। আমায় এত ঝক্কি সামলাতে হয়নি। মা-বাবা পাশে ছিলেন। প্রতিবেশীরাও যখন শুনেছেন, ভীষণ খুশি হয়েছেন। আমায় আগলেছেন। বলেছেন, ‘পাশে আছি’।

সন্তান বড় করতেও যে খুব সমস্যা হয়েছে তা কিন্তু নয়। ব্যতিক্রম একটি বিষয়। আমার ছেলে অগ্নিস্নাতকে স্কুলে ভর্তি করা। সেই সময় সাত মাস ঘুমোতে পারিনি। দুশ্চিন্তায়, অপমানে, ক্ষোভে আমার দিনগুলোও যেন রাতের মতোই কালো হয়ে উঠেছিল। সারাক্ষণ শুধুই একটি ভাবনা, কী করে স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করাব? শহরের প্রথম সারির স্কুলগুলোর দরজায় দরজায় ঘুরছি। আর তারা মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ছেলের জন্মের বিস্তারিত বিবরণ, মা হওয়ার বিবরণ চেয়ে আমার জীবনটাকেই যেন ‘ডিটেকশন টেবিল’-এ ফেলে কাটাছেঁড়া করতে শুরু করলেন সবাই। এ যন্ত্রণা, লজ্জা লুকোই কোথায়? নিজেকে, আমার সন্তানকে বাঁচাতে শিশু সুরক্ষা কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। ওঁরা সবাই আমায় প্রচণ্ড সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু যে স্কুল আমাদের বিস্তারিত বিবরণ চেয়েছিল সেই স্কুলের কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, ছ বছর বয়স থেকে একটি শিশু এই কমিশনের আওতায় আসে। আমার ছেলের বয়স তখন মাত্র চার। সুতরাং, তাঁরা বিষয়টিকে নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছেন না!

তার থেকেও মজার ব্যাপার, যাঁরা আমার বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরা সবাই নারী। পরে ছেলে যে স্কুলে ভর্তি হয় তার অধ্যক্ষ এক জন পুরুষ। তিনি শুনেই বলেছিলেন, কবে ভর্তি করতে চাই! অথচ আমাদের দেশে ‘একা মা’ হওয়ার নিদর্শন আজকের নয়। উপনিষদে জবালা আর তার ছেলে সত্যকামের কথা বলা আছে। জবালাও সেই যুগে ‘একা মা’ ছিলেন। সত্যকাম গুরুগৃহে যাওয়ার আগে তাঁর মাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ব্রহ্মচর্য আশ্রমে গুরু বাবার নাম জানতে চাইবেন। কী বলব?’ জবালা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘বলবে, জবালা আমার মা। জবালাই আমার বাবা। আমি জবালার সন্তান।’
আমি সেই মন্ত্র জপেছি। নুসরতকে বলব, আজ থেকে আপনিও সেই মন্ত্র জপুন। আপনি যথেষ্ট প্রভাবশালী। আপনার পাশে সমাজ আছে। তাই কারওর কটাক্ষ গায়ে মাখবেন না। পাত্তা দেবেন না কাউকে। নিজের শর্তে নিজের মতো করেই বাঁচুন। সন্তানকেও সে ভাবেই বড় করে তুলুন। ইদানিং, পাসপোর্ট বা কোনও ক্ষেত্রেই বাবার নামের প্রয়োজন পড়ে না। আপনিই আপনার সন্তানের জন্য যথেষ্ট। পাশাপাশি, দাঁত আর নখে একটু শান দিয়ে রাখবেন। যাতে নিজের সন্তানকে রক্ষা করতে বাঘিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। যে সন্তানের ক্ষতি করতে আসবে তাকে ছিঁড়ে টুকরো করে দেবেন। আর নিজেকে এবং ছেলেকে ইতিবাচক বলয়ের মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। এমন মানুষদের সংস্পর্শে বাঁচুন, যাঁরা আপনার আর আপনার ছেলের মঙ্গল চান। যাঁরা আপনাদের শুভাকাঙ্খী। তা হলেই আপনাকে কেউ হারাতে পারবেন না।

অন্য বিষয়গুলি:

nusrat jahan Single Mum Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE