অনির্বাণ, কোয়েল না কি আবীর, পুজোয় বাজিমাত করলেন কে? ছবি: সংগৃহীত।
পুজোয় মুক্তি পেয়েছে চারটি বাংলা ছবি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘দশম অবতার’, নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘রক্তবীজ, অরুণ রায়ের ‘বাঘা যতীন’ এবং অরিন্দম শীলের ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’। প্রথম পাঁচ-ছ’দিনের বক্স অফিসের হিসাব বলছে প্রথম স্থানে রয়েছে সৃজিতের ‘দশম অবতার’। ইন্ডাস্ট্রির ফার্স্ট বয়ের ছবির ‘প্যাকেজ’ এ বছর ছিল বেশ আকর্ষণীয়। তাই প্রত্যাশা অনুযায়ী বক্স অফিসে ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু অভিনেতাদের মধ্যে এগিয়ে কারা? অভিনয় এবং বক্স অফিস— এই দুই মাপকাঠিকে মাথায় রেখে পাঁচ জনকে বেছে নিল আনন্দবাজার অনলাইন। তার মধ্যেই বেছে নেওয়া হয়েছে ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’-ও।
৫। কোয়েল মল্লিক (পঞ্চম স্থান)
বড় পর্দায় দ্বিতীয় বার মিতিন মাসি হয়ে ফিরলেন কোয়েল মল্লিক। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস ‘সারান্ডায় শয়তান’ অবলম্বনে অরিন্দম শীল গল্প বুনেছিলেন ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’-র। তবে গল্পের চেয়ে পর্দার মিতিন আরও বেশি ‘বোল্ড’। দুষ্কৃতীদের মেরে পাট পাট করে দিতে তার কারও সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। বাকিদের আগলে নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়ে বিপদের মাঝে। তেমন মিতিন মাসির চরিত্রে কোয়েল সত্যিই দারুণ। এত দীর্ঘ অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করার জন্য তিনি যে নিজেকে বহু মাস ধরে গড়ে তুলেছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। পর্দায় তাঁকে দেখতেও বড় সুন্দর লাগে। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের বার্তা নিয়ে তৈরি এই ছবিতে প্রচুর সে সংক্রান্ত সংলাপ রয়েছে। বিশেষ করে ছবির শুরুর দিকেই কোয়েলের একটি দীর্ঘ মোনোলগ রয়েছে এই নিয়ে। সেই দৃশ্যে কোয়েলের অভিনয় মনে থাকবে। টলিউডে পুরোদস্তুর অ্যাকশন খুব কম অভিনেত্রী করে থাকেন। সেখানে মিতিন মাসির চরিত্রটা যথেষ্ট ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ হিসাবে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক। অথচ তাতে মিতিন মাসির যে ঘরোয়া সাংসারিক ছবি সুচিত্রা ভট্টাচার্য আমাদের মনে এঁকেছেন, তা-ও ক্ষুণ্ণ করতে চাননি নির্মাতা। এই দুইয়ের মিশেল ফুটিয়ে তুলতে কোয়েল সফল।
৪। দেব (চতুর্থ স্থান)
ইতিহাসের উপর ভরসা করে ‘বাঘা যতীন’ নিয়ে এই পুজোয় ময়দানে নেমেছিলন দেব। তাঁর আগের ছবি ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’ বক্স অফিসে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। তাই ‘বাঘা যতীন’ নিয়েও অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তার উপর দেবের কিছু ‘কাছের মানুষ’-রা তো রয়েছেনই, রসিকতা করার জন্য, দেবের যে কোনও প্রয়াসকে ছোট করার জন্য। তবে ছবি মুক্তির পর সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়েছেন দেব। ‘দশম অবতার’ ও ‘রক্তবীজ’-এর তুলনায় ‘বাঘা যতীন’-এর শো কম। তবে খুবই ছোট পরিসরে জাতীয় স্তরে মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। এবং বাকি ছবির মতো শুধু মাল্টিপ্লেক্সে নয়, শহরতলির অনেক সিঙ্গল স্ক্রিনেও ভালই চলছে এই ছবি। বক্স অফিসের নিরিখে ‘বাঘা যতীন’ উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে (প্রথম পাঁচ দিনের হিসাব)। তাই সকলকে চমকে দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন দেব। শুধু প্রযোজক হিসাবেই নয়, অভিনেতা দেবও অনেক পরিশ্রম করেছেন এই ছবির জন্য। তাঁর অভিনয়ের গ্রাফ যে ঊর্ধ্বমুখী, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
৩। জয়া আহসান (তৃতীয় স্থান)
পর্দার কপ ইউনিভার্সে নারী চরিত্ররা বেশ গুরুত্ব পায় না। সেখানে অবশ্যই ব্যতিক্রম ‘দশম অবতার’-এর মৈত্রেয়ী। জয়া আহসান বরাবরই দক্ষ অভিনেত্রী। কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং যিশু সেনগুপ্তর মতো তাবড় অভিনেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়েছে এ বার তাঁকে। তা-ও আবার এমন এক গল্পে, যেখানে পুরুষরাই সিংহ ভাগ ‘স্ক্রিন টাইম’ নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। তবে তারার ঔজ্জ্বল্যে নিজেকে মলিন হতে দেননি জয়া। বাকিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যথেষ্ট জটিল একটি চরিত্রে সহজ অভিনয় করেছেন।
২। আবীর চট্টোপাধ্যায় (দ্বিতীয় স্থান)
তিনি ধীরে ধীরে পুজোর বক্স অফিসের রাহুল দ্রাবিড় হয়ে উঠছেন। যাঁকে বলা যায় ‘মিস্টার ডিপেনডেব্ল’। গত বছর পুজোয় আবীর চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ সর্বোচ্চ ব্যবসা করেছিল। এ বছর ‘রক্তবীজ’ মুক্তির দিন বাকি ছবিগুলির তুলনায় বক্স অফিসে খানিক পিছিয়ে ছিল। কিন্তু লোকমুখে প্রচারে সেই ছবি ঘুরেছে। দর্শকের প্রতিক্রিয়া বেশির ভাগই ইতিবাচক। প্রথম পাঁচ দিনের হিসাবে এখান এই ছবি রয়েছে তৃতীয় স্থানে। কিন্তু দ্বিতীয় ছবির সঙ্গে এই ছবির বক্স অফিস কালেকশনে তফাত সামান্যই। প্রশংসা পেয়েছে এই ছবির গল্প বলার ধরন এবং আবীরের অভিনয়। দিল্লির আইপিএস অফিসার পঙ্কজ সিংহের চরিত্রের প্রস্তুতির জন্য বেশ ভালই পরিশ্রম করেছিলেন আবীর। কোনও স্টান্টম্যান নেননি ছবিতে। অ্যাকশন দৃশ্যে নিজেই সব শট দিয়েছেন। এবং একাধিক বার দিয়েছেন। সে নাগরদোলা থেকে ঝাঁপানোই হোক বা দুষ্কৃতীদের সঙ্গে হাতাহাতি। ছবিতে পঙ্কজ সিংহ ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ নায়ক নয়, বরং কর্মনিষ্ঠ আইপিএস অফিসার। যে কথায় কথায় গুলি চালায় না, বরং ঠান্ডা মাথায় তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যায়। এই ধরনের চরিত্র পর্দায় প্রাণ দেওয়ার জন্য আবীর অতুলনীয়।
১। অনির্বাণ ভট্টাচার্য (প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ)
পুজোয় তাঁর জোড়া মুক্তি। দুটোই একই পরিচালক— সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। বড় পর্দায় ‘দশম অবতার’ এবং ওটিটি-তে ‘দুর্গরহস্য’। ‘দশম অবতার’-এ প্রসেনজিতের প্রবীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে সমানে সমানে টেক্কা দিয়েছে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের বিজয় পোদ্দার। প্রবীর-পোদ্দারের রসায়ন যে এই ছবির শ্রেষ্ঠ সম্পদ, তা এক কথায় মানবেন অনেকে। পরিচালক ছবির সেরা সংলাপগুলি এই দু’জনকেই দিয়েছেন। ছবিতে ছিলেন যিশু সেনগুপ্ত এবং জয়া আহসানও। চিত্রনাট্য যতটা সুযোগ দিয়েছে, তাঁরাও সেই অনুযায়ী নিঃসন্দেহে তাঁদের সেরা অভিনয়টাই করেছেন ছবিতে। কিন্তু এত ‘হেভিওয়েট’দের মধ্যেও অনির্বাণ যেন ছাপিয়ে গিয়েছেন সকলকে। ছবির প্রচারপর্বে প্রসেনজিৎ নিজেই আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘প্রবীরের প্রবীরত্ব কোনও পাকড়াশি কিংবা পোদ্দার ছাড়া বেরোবে না। এখানে পোদ্দারের জন্যই প্রবীর আরও বেশি উজ্জ্বল’’। তবে ছবিতে অনির্বাণ প্রবীরের সঙ্গে যতটা দৃঢ়, মৈত্রেয়ীর (জয়ার চরিত্র) সঙ্গে ততটাই ছটফটে। তিনি অ্যাকশন দৃশ্যে যেমন দুরন্ত, আবেগঘন দৃশ্যে ততটাই আগলহীন। ফ্রেমে দক্ষিণী কায়দায় ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ কীর্তিকলাপ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি তাঁর মাপা অভিনয় দিয়ে রাশ টেনে ছবির টেম্পো ধরে রাখতে পারেন। এবং সেই মাপা অভিনয়ে তিনি কতটা দক্ষ, তা আরও ভাল ভাবে বুঝতে গেলে ‘দুর্গরহস্য’ দেখা প্রয়োজন। ব্যোমকেশ হিসাবে এই তাঁকে শেষ বার পর্দায় দেখবেন দর্শক। দেখবেন এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন, কেন এই ব্যোমকেশ আর ফিরবেন না।
‘দুর্গরহস্য’-এ ‘দশম অবতার’-এর মতো চটুল সংলাপ নেই। কিন্তু অনির্বাণের অভিনয়ে যা আছে, তাতে দর্শকের ঠোঁটে স্মিত হাসির রেখা ফুটে উঠবেই। লোক হাসানোর জন্য কাঁচা খিস্তি দিতে ‘দশম...’-এ অনির্বাণ অবশ্যই অনায়াস। তবে ‘দুর্গরহস্য’-এ শুধু তাঁর অভিব্যক্তিই সেই কাজ করে দেয় সফল ভাবে। অ্যাকশনের পাশাপাশি অনির্বাণের প্রেমিক অবতারও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। প্রেম-খুনসুটিতে যে সোহিনী সরকারের সঙ্গেই তাঁকে পর্দায় সবচেয়ে ভাল মানায়, এটাই পরম ‘সত্য’। সব মিলিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনিই এই পুজোর ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy