ঋতুপর্ণা: এখন নানা বিতর্কের কেন্দ্রে। ছবি সৌজন্য: ফেসবুক।
সময় পেরিয়ে যায়। বদলে যায় ঋতু... এই ঋতু বদল ভাবনা আর কাজ ঘিরে। এই ঋতু, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
এ বছর খান দশেক ছবিতে কাজ করার ফাঁকে শিল্পীসংসদের সভাপতি থেকে দুঃস্থ শিশুদের পাশে দাঁড়ানো। বদলের ঋতুপর্ণাকে খুঁজল আনন্দবাজার ডিজিটাল।
আপনি বেশ বদলে গিয়েছেন দেখছি।
মানে?
এই যে ফোনে কাজের প্ল্যানিং নয়, ইভেন্ট নয়, ছবি নয়, কিছু নির্দিষ্ট শিশুর চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করছেন...
আমার শহর। শহরের চারপাশে যা দেখছি সেই দেখা থেকে একটা দায়িত্ববোধ তো এসেই যায়। এড়িয়ে যাব কী করে? হ্যাঁ, ছবি করা আমার কাজ। সেই বিষয়ে কথা বেশি হয়। লেখাও। তবে আজ যে ভাবনার কথা আপনি বললেন সে নিয়ে সামান্য কিছু করার চেষ্টা করি। ঢাক পেটাই না। তাই আপনার অবাক লাগছে!
একটু বলবেন প্লিজ ঠিক কী করছেন?
আমার শহরে অনেক বাচ্চা হার্টের সমস্যায় ভোগে। রোটারি ক্লাব অব ক্যালকাটা-র প্রেসিডেন্ট ববি ভৌমিকের মাধ্যমে আমি জানতে পারি, অর্থের অভাবে অনেক বাচ্চার হার্ট সার্জারি হয় না। তাদের হৃদ্স্পন্দন থেমে যাচ্ছে! কী করছি আমরা? কী বা করতে পারি? এ ক্ষেত্রে আমার সাধ্যমতো বাচ্চাদের জন্য সহযোগিতা করতে চাইছি। যে শিশুদের অর্থের অভাবে চিকিৎসা হয় না, তাদের যদি কিছু উপকারে আসতে পারি...কিছু আর্থিক সাহায্য দিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও দেব। এইটুকুই...
আপনি ‘শিল্পীসংসদ’-এর পক্ষ থেকেও তো বাসন্তী দেবীকে সাহায্য করেছেন?
হ্যাঁ, উনি উত্তমকুমারের সঙ্গে অফিস ক্লাবে নাটক করতেন। আমার সঙ্গেও ‘সুজনসখী’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এখন উনি খুব অসুস্থ। আজ ওঁর খবর কেউ রাখে না। ওঁর অর্থের প্রয়োজন। সেই কারণে ওঁকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়া হল। ‘শিল্পীসংসদ’-এর সভাপতি হিসেবে আমি চেষ্টা করছি নানা রকম কাজ করতে।
উত্তমকুমার যে শিল্পীসংসদের সভাপতি ছিলেন সেই শিল্পীসংসদের সভাপতি আপনি। সময় দিতে পারছেন?
ইচ্ছে থাকলে সব হয়। উত্তমকুমার আর অনিল চট্টোপাধ্যায় একসময় ‘শিল্পীসংসদ’ থেকে ছবি করেছিলেন। আমি চাই শিল্পীরা আবার ‘শিল্পীসংসদ’-এর ব্যানারে একজোট হয়ে ছবি করুন। আমরা চেষ্টা করছি গৌতম ঘোষকে দিয়ে ছবি পরিচালনা করাতে।
‘শিল্পীসংসদ’-এর অনুষ্ঠানে ঋতুপর্ণার সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ এবং রেশমী মিত্র।
টালিগঞ্জের কলাকুশলীরা তো এখন রাজনীতির দল বদলে ভাগ হয়ে যাচ্ছেন। আর তাঁদের আপনি এক জায়গায় আনার কথা ভাবছেন?
কাজের জায়গায় আবার রাজনীতির দলাদলি কী? দেখুন, রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকুক। সেটা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়! কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে এই ভাবনা মিশে গেলে তো আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আরও ছোট হয়ে যাবে। সেটা কাম্য নয়। আমি তো চাইব না আমাদের ইন্ডাস্ট্রির দু’জন মানুষ শুধু রাজনৈতিক মতবিরোধিতায় প্রকাশ্যে ফেসবুকে ঝগড়া করবে? বা এক ছবিতে অমুক দলের লোক থাকলে অন্য দলের লোক সেখানে কাজ করবে না! এটা হতে পারে না। এই জন্যই অনেকে মিলে কাজ করার কথা ভাবছি। আগে আমরা শিল্পী। এ ছাড়াও শিল্পীসংসদের সভাপতি হিসেবে উত্তমকুমারের ছবি সংরক্ষণের বিষয়টার উপর আমি জোর দিতে চাই। আমাদের শিল্পীদের মধ্যে এই সচেতনতা আসতে হবে যাতে তাঁরা পুরনো শিল্পীদের গুরুত্ব দেন। তবেই তো আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও তাঁদের কাজ দেখাতে পারব।
তনুশ্রী দত্ত নাকি আমেরিকায় আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন?
হ্যাঁ। ও আমার কাজ নিয়ে খুব উৎসাহী। ‘#মিটু’ মুভমেন্ট নিয়ে অনেক কথা হল ওর সঙ্গে। অন্য বিষয়ে অনেক কথা হল। ও খুব পছন্দ করে আমায়। তাই দেখা করতে এসেছিল। এ বার আমেরিকায় আমার তিনটে ছবি দেখানো হল। আর সবচেয়ে ভাল লেগেছিল, ওখানে ব্রডওয়ে শো-তে ‘প্রিটি ওম্যান’ দেখে। ও রকম পর্যায়ে প্রযোজনা দেখা একটা অভিজ্ঞতা!
২০১৯-এ ঋতুপর্ণাকে ইতিমধ্যেই নানা চরিত্রে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। কাজের গ্রাফটা তো ওপর দিকে উঠেই চলেছে!
দেখুন, ওঠা-নামা জানি না। কাজ তো করে যেতেই হবে।
‘আহা রে’ তো দেশ-বিদেশের প্রচুর জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে...
এ বছরটা খুব ইন্টারেস্টিং। ‘আহা রে’ খুব ভাল রেসপন্স পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ফেস্টিভালে ছবিটা দেখানো হবে। শাহরুখ খান ওপেন করবেন ফেস্টিভালটা। হায়দরাবাদে ইতিমধ্যেই দেখানো হল ‘আহারে’। হায়দরাবাদে নাগার্জুনা ওপেন করল। অন্য দিকে ‘বসু পরিবার’-এর জন্য বঙ্গ সম্মেলনে বেস্ট অ্যাক্টর সম্মান পেলাম আমি। ‘মুখার্জিদার বউ’ দারুণ হিট। বিদেশে বহু জায়গায় ছবিটা ঘুরছে।
ঋতুপর্ণা এবং ইন্দ্রনীল
সামনে কী ছবি আসছে?
রেশমী মিত্র-র ‘লাইমলাইট’ বলে একটা ছবি আসছে, আমার ডবল রোল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে মুক্তি পাবে ‘আমার লবঙ্গলতা’। ইন্দ্রনীল, পাপিয়া অধিকারী আছে এই ছবিতে। ‘অতিথি’-র মতো সাধারণ গল্প তো দেখলাম নন্দনে খুব ভাল চলেছে। নির্মল চক্রবর্তীর ‘দত্বা’ শুরু হয়েছে। ফিরদৌস, আমি, জয় সেনগুপ্ত, দেবলীনা কুমার। মিউজিক করবে হয়তো জয় সরকার। আর একটা ছবি শুরু করেছি রাজু দেবনাথের পরিচালনায়। ‘বিউটিফুল লাইফ’-এ আমি আর টোটা রায়চৌধুরী। এই সিনেমার ভাষা হল রং। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অসাধারণ চরিত্রে আছেন। শান্তনু বসুর মিউজিক। নচিকেতা আর জয়তী গান গেয়েছে। আমার ভাই প্রদীপ্ত সেনগুপ্ত এই ছবি এগজিকিউট করছে। প্রদীপ চুড়িওয়াল প্রডিউস করছেন।
ইন্দ্রাশিস আচার্যের ‘পার্সেল’ নিয়ে তো ইতিমধ্যেই বেশ আলোচনা হচ্ছে...
ইন্দ্রাশিস একেবারে অন্য ধারার পরিচালক। ওর ‘পিউপা’ দেখে খুব ভাল লেগেছিল। এ বার গল্পটাকে এমন ভাবে বলেছে বেশ চমক আছে। আমার আর শাশ্বত-র জুটিটাও দর্শকের ভাল লাগবে আশা করি। এই ছবিটা মানুষকে ছুঁয়ে যাবেই বলে মনে হয়। আমি গানও গেয়েছি এই ছবিতে, জয় সরকারের তত্ত্বাবধানে।
আপনি তো এ বছর অ্যাকশন ফিল্মও করছেন...
এই বছর ‘বিদ্রোহিনী’ আর ‘দামিনী’, দুটোই অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড ছবি। আমি ছবিতে খুব মারপিট করেছি।
আপনার ছবির লিস্ট তো ফুরোতেই চায় না... অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
দারুণ অ্যাক্টর অনুরাগ। ‘বাঁশুরি’-তে আমাকে আর ওঁকে দেখে দেবজ্যোতি মিশ্র তো ফোনে বলল, ‘‘ঋতু, খুব ভাল লাগছে দু’জনকে। ভাল কাজ হয়েছে।’’ দেবুদা মিউজিক করছে এই ছবির। এ ছাড়াও সঞ্জয় নাগের ‘গুডমর্নিং সানশাইন’ তাড়াতাড়ি রিলিজ হবে। আর আছে আমার বেস্টফ্রেন্ডের ছবি ‘বেলাশুরু’।
আরও পড়ুন: এই সুন্দরী সাহিত্যিক ও চিত্রনাট্যকারের জন্যই নাকি ভাঙল দিয়া-সাহিলের বিয়ে
এত ছবি করতে করতেই কি আরও রোগা হচ্ছেন?
(হাসি) কী জানি!
সুইম সুট পরেও তো সম্প্রতি ফটোশুট করলেন!
হ্যাঁ, প্রচন্ড গরমে কুল থাকার ছবি। রিল্যাক্স মোড! (হাসি)
এ বার একটু প্রসঙ্গ বদলাচ্ছি। এই মুহূর্তে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নামের সঙ্গে দু’টি বিষয় জড়িয়ে আছে।
হমম! বুঝেছি। দেখুন, এখানে আমার একটা কথা বলার আছে। আপনি কী বলবেন আমি জানি! দেখুন, মিডিয়া কিছু বিষয় নিশ্চয়ই ঠিক বলে। আমাদের কাজের কথা নিয়ে লেখে। কিন্তু ইদানীং দেখছি কিছু বিষয়ের অতিরঞ্জন হচ্ছে। আচ্ছা বলুন তো, সেগুলোর অথেনটিসিটি কে চ্যালেঞ্জ করবে?
সম্পূর্ণ অন্য রূপে ঋতুপর্ণা
মানে? একটু পরিষ্কার করে বলবেন?
আমি বরাবর মিডিয়ার সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলি। কিন্তু আমায় না জানিয়ে মনগড়া জিনিস লিখলে কিন্তু আমি সমর্থন করব না। কখনওই না। এটা তো অন্যায়! এত বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে আছি। আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা হচ্ছে। ইদানীং দেখছি আমার মতামত না নিয়েই যা খুশি স্টোরি হচ্ছে! এমন স্টোরি যা শুধু আমাকে নয়, আমার পরিবারকেও অ্যাফেক্ট করছে। আমার ছেলেমেয়েকে এটা ডিস্টার্ব করছে। আরে, আমার তো এক্সটেন্ড ফ্যামিলি আছে! আত্মীয়স্বজন? এ ভাবে বানিয়ে গল্প লেখা হলে তাঁদের জনে জনে আমি কী জবাব দেব? এটা সম্ভব? আমি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে এসেছি। কাজ নিয়ে কথা হোক। আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সাজানো গল্প মুখরোচক করে কেন পরিবেশন করা হবে?
আপনি কি রেগে আছেন?
রেগে থাকলে এত কথাই বলতাম না। গসিপ নিয়ে আমরা এই ইন্ডাস্ট্রিতে অভ্যস্ত। অত পাত্তা দিই না। কিন্তু কিছু বিষয়কে তো ছেড়ে দেওয়াও যায় না।
তা হলে সোজা জিগ্যেস করি। আপনি কি বলতে চান, আপনার সঙ্গে আপনার স্বামী সঞ্জয়ের বিরোধ হচ্ছে না?
একেবারেই না। সঞ্জয়ের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনও সমস্যা নেই। শুনুন, আজ একটা কথা বলি, এত নিরলস ভাবে পঁচিশ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এ ভাবে হঠাৎ যা হোক কিছু বলে সম্মান নষ্ট করাটা কি ঠিক? আমার ফ্যান ফলোয়ার আছে। এমন মানুষ আছেন যাঁরা আমায় খুব ভালবাসেন, তাঁরা তো আমায় ফোন করছেন।
আর ইডি যে আপনাকে ডেকে পাঠাচ্ছে?
ইডিকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনারা যা প্রশ্ন করেন তা কি বাইরে প্রকাশ করেন? ওঁরা বলেছেন, একেবারেই না। সরকারি দফতরের ভারপ্রাপ্ত অফিসার বলেছিলেন, আমাদের প্রশ্নের কথা বাইরে কখনওই বলা যায় না। তা হলে? আমাকে কী প্রশ্ন করা হয়েছে তা নিয়ে লেখা হচ্ছে, কী করে? আরে, ওই সংস্থার সঙ্গে এন্টারটেনমেন্ট কোম্পানি হিসেবে আমার কোম্পানি কাজ করেছে। এগজিকিউটিভ প্রডিউসার আর অভিনেত্রী হিসেবে আমি যুক্ত ছিলাম। ব্যস, এটাই। ইডি-র সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও করা হবে। কাগজপত্রও দেওয়া হয়েছে। ব্যস, এটাই তো বিষয়! কিন্তু নানা রকম ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে! সত্যি কিছু বলার থাকলে আমার কাজ নিয়ে, ছবি নিয়ে বলা হোক না।
মানে, আপনি সমালোচনা শুনতে পারেন?
সমালোচনা তো হয়েছেই। আবার হোক। আমি নিতে প্রস্তুত। কত বার বলা হয়েছে আমার চয়েস অব সিনেমা ঠিক নয়। আমি এই সিনেমা কেন করছি? ওই সিনেমা কেন করলাম? আমি তো শুনছি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বানিয়ে লেখা হবে কেন? আজকের সময়ে বাংলা সিনেমার কথা উঠলে আমাদের কাজের কথা বলা হয়। আমাকে সম্মান জানানো হয়। কাজের সম্মান, পরিবারের সম্মান— দুটো নিয়ে আমি চলেছি। সেখানে দুম করে ভিত্তিহীন কোনও কথা বললেই হল?
কথা শেষ হতে না হতেই মেকআপ শুরু। ডাবিংয়ের তাড়া। খান তিনেক মিটিং। বাইরে নাচের অনুষ্ঠানের প্ল্যানিং। নতুন গল্প শোনার আলাদা মিটিং। এর মধ্যেই মা আর ভাইকে যত্ন করে নিজের হাতে খেতে দেওয়া। সেলুলয়েডের মানবী হঠাৎ যেন হয়ে ওঠেন রক্তমাংসের কন্যা। যেন পাশের বাড়ির মেয়ে!
কখনও ক্যানভাসে সম্পূর্ণ রং বদল। ঝড়বাদলের রাত পেরিয়ে আলো ঘেরা এক ঋতুকাল। ঝলসে ওঠে মুখ।
আরও পড়ুন: মুভি রিভিউ ‘সামসারা’: রহস্যের জট ছাড়াতে ছাড়াতে জীবনের সন্ধান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy