অমৃতা প্রীতম ও ইমরোজ়। ছবি: সমাজমাধ্যম।
‘ম্যায় তেনু ফির মিলাঙ্গি, কিথে... কিস তরাহ...পতা নাহি... পর তেনু জ়রুর মিলাঙ্গি’ (তোমার সঙ্গে আবার দেখা হবে, কোথায়, কী ভাবে জানি না, তবে নিশ্চয়ই দেখা হবে।)—সহজ প্রতিশ্রুতি, যার ভরসায় ৪০ বছর এক সঙ্গে কাটিয়ে দিলেন পঞ্জাবি কবি ও সাহিত্যিক অমৃতা প্রীতম এবং কবি ও চিত্রকর ইমরোজ়। আসলে, সেই যাপন কালজয়ী। ২০০৫ সালে অমৃতার মৃত্যুর পরে তাঁর স্মৃতি নিয়েই বেঁচে ছিলেন ইমরোজ়। তাঁর কথায়— ‘উয়ো ইয়েহিঁ হ্যায়, ঘর পর হি হ্যায়, কহিন নহি গয়ি’। অবশেষে শুক্রবার শেষ হল সেই যাপন, ৯৭ বছর বয়সে মুম্বইয়ের কান্দিভলির বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ইমরোজ়, যাঁর আসল নাম ইন্দ্রজিৎ সিংহ। আদৌ শেষ হল কি? ইমরোজ়ের আত্মীয়া অমিয়া কুনওয়ারের মতে, অন্য কোনও দুনিয়ায় আবার হাতে হাত ধরে পথ চলা শুরু করলেন দু’জন। ইমরোজ়-অমৃতার প্রেম এত সহজে ফুরোনোর নয়।
দীর্ঘদিন ধরেই বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন ইমরোজ়। শেষ দিকে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। সেই অবস্থাতেও অমৃতার মৃত্যু নিয়ে কেউ কথা বললে বিরক্ত হতেন। বলতেন, ‘অমৃতা এখানেই আছে।’ শেষ জীবনে অমৃতার ছেলে নবরাজের স্ত্রী অলকা ও নাতি নাতনির সঙ্গে থাকতেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে অলকা জানিয়েছেন, ‘অমৃতার জন্মদিন কখনও ভোলেননি ইমরোজ়। প্রতি বছর পালন করতেন নিজের মতো করে।’ মুম্বইয়ের দাহানুকারওয়াড়ি শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন অমৃতার নাতনি শিল্পী কোয়াত্রা।
২৬ জানুয়ারি, ১৯২৬ সালে অবিভক্ত পঞ্জাবে ইমরোজ়ের জন্ম। ১৯৫৭ সালে আলাপ দু’জনের। ততদিনে কবি সাহির লুধিয়ানভির সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় শেষ অমৃতার। সেই সম্পর্কের টানাপড়েন ও জটিলতায় ক্লান্ত তিনি। প্রথমে বন্ধুত্ব, তার পর প্রেম, তাঁর পরে এক সঙ্গে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত— অমৃতা-ইমরোজ়ের সম্পর্ক এগিয়েছে এই পথ ধরে। ১৯৬৬ সালে অমৃতা যখন নাগমণি পত্রিকা প্রকাশ করছেন তখন চিত্রশিল্পী হিসেবে তাতে যোগ দেন ইমরোজ়। ৩৭ বছর ধরে নাগমণির সম্পাদনা করেছেন অমৃতা, আর তাঁর চিত্রাঙ্কণ করতেন ইমরোজ়। আর ৪০ বছর পরস্পরকে ভালবেসে একত্রবাসে থেকেছেন।
অনেকেরই দাবি, দু’জন দু’জনের আশ্রয় হয়ে উঠেছিলেন। অমৃতার সাফল্যের পিছনে ইমরোজ়ের স্থিতধী ভূমিকা অনস্বীকার্য। অনেকে এ-ও বলেন, সাহিরকে অমৃতা যতটা ভালবাসতেন, তার অনেক গুণ বেশি অমৃতাকে ভালবাসতেন ইমরোজ়। অমৃতার ‘শাম কি ফুল’ কবিতাতেও যেন রয়েছে তাঁর প্রতিফলন, ‘অজনবী তুম মুঝে জিন্দেগি কি শাম মে কিঁউ মিলে, মিলনা থা তো দোপহর মে মিলতে।’ ইমরোজ়কে ভালবেসে কবিতাটি লিখেছিলেন তিনি।
শর্তহীন প্রেমে প্রায় এক দশকের বড় অমৃতাকে ভালবেসেছিলেন ইমরোজ়, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। পরের দিকে অমৃতার বেশির ভাগ বইয়েরই প্রচ্ছদ আঁকতেন তিনি।
৩১ অক্টোবর ২০০৫ সালে ঘুমের মধ্যে প্রয়াত হন অমৃতা। তাঁর আগে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি, সেই সময়েই ইমরোজ়ের উদ্দেশে লেখেন সেই কবিতা— ‘ম্যায় তেনু ফির মিলাঙ্গি।’ তাঁর অসুস্থতার সময় থেকে কলম তুলে নিয়েছিলেন ইমরোজ়ও। অমৃতাকে উদ্দেশ্য করে একাধিক কাব্যগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। সেগুলোর নাম, ‘জশন জারি হ্যায়’, ‘মনচাহা হি রিশতা’, ‘রং তেরে মেরে’ প্রভৃতি। এর মধ্যে ‘জশন জারি হ্যায়’ বইটির জন্য তিনি পুরস্কৃতও হন। তবে, ভালবাসার অটুট প্রকাশ পাওয়া যায় ‘অমৃতা’ নামের একটি কাব্যাংশে— ‘কভি কভি খুবসুরত খেয়াল, খুবসুরত বদন ভি আখতিয়ার কর লেতে হ্যায়’ (কখনও সুন্দর ভাবনা সৌন্দর্যের রূপ নেয়।)
অসুস্থ অমৃতা জানতেন, ইমরোজ়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে। ইমরোজ় শেষ দিন পর্যন্ত বিশ্বাস করেননি অমৃতা চলে গিয়েছেন। দু’জনের ভাবনা, মনন, শ্বাস-প্রশ্বাসে মিশে ছিলেন দু’জন। তাই জন্যই তো জোর দিয়ে বলেছিলেন— দেখা হবে। এইটুকু আশ্বাসই তো যথেষ্ট...
ম্যায় তেনু ফির মিলাঙ্গি...।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy