টলিউডে ভিড় ‘ব্যোমকেশ’দের, বলিউডে হিড়িক ‘ডন’-এর গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বাঙালি গোয়েন্দাপ্রেমী জাতি। গোয়েন্দাপ্রেম তার এতই প্রবল যে, এক গোয়েন্দায় তাদের সাধ মেটে না। ফেলুদা, কাকাবাবু তো আছেই, তবে বাঙালির কাছে ব্যোমকেশ বক্সীর আবেদন কিছুটা আলাদা। ব্যোমকেশ বাঙালির প্রিয় ঘরোয়া গোয়েন্দা। সহকারী অজিতকে সঙ্গে নিয়ে সত্যান্বেষণের পাশাপাশি স্ত্রী সত্যবতীর সঙ্গে চুটিয়ে সংসারও করে সে। কাজেই সেই চরিত্রের ‘রিলেটেবিলিটি ফ্যাক্টর’ যে বাকি গোয়েন্দাদের থেকে কিছুটা বেশি, তা নতুন করে বলে দিতে হয় না। বাংলার সিনেদুনিয়ায় তার প্রভাবও বেশ স্পষ্ট। হরেক রকমের বার্বির মতো টলিউডের কারখানা থেকে বিভিন্ন অভিনেতার ব্যোমকেশের ‘উৎপাদন’ এখনও অব্যাহত। এত দিন ব্যোমকেশ হিসাবে দর্শক চিনে এসেছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে। মাঝে মধ্যে সেই চরিত্রে দেখা মিলেছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, গৌরব চক্রবর্তী, পরিচালক সুজয় ঘোষের মতো মুখেরও। এমনকি, ব্যোমকেশের জনপ্রিয়তা এমনই যে, বলিউডের প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে নিয়েও ব্যোমকেশের একটি ছবি বানিয়ে ফেলেছিলেন বাঙালি পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে টলিউডের গতে বাঁধা ব্যোমকেশের ভিড়ের মাঝে ওই ছবিতে তরুণ বাঙালি গোয়েন্দাকে অন্য ধরনের লেন্সে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন দর্শক। এ বার সেই ছাঁচে নিজেকে ফেলেছেন টলিউডের সুপারস্টার দেব। আগামী ১১ অগস্ট মুক্তি পেতে চলেছে ব্যোমকেশ অবতারে তাঁর প্রথম ছবি ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’। বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দার চরিত্রে আবীর, অনির্বাণ, যিশুকে কি টেক্কা দিতে পারবেন দেব? আর দু’দিন বাদেই মিলবে উত্তর।
ব্যোমকেশের বাহুল্যে সম্প্রতি কিছুটা ফিকে হয়েছে ফেলুদার ভিড়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যে ব্যাটন তুলে দিয়েছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তীর হাতে, সাম্প্রতিক কালে সেই চরিত্রে মুখ দেখিয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, টোটা রায়চৌধুরী। একই চরিত্রকে একাধিক বার বিভিন্ন অভিনেতাকে দিয়ে ‘রিপ্রাইস’ করার এই হাওয়ায় সবে গা ভাসানো শুরু করেছে বলিউড। বলিউডের এই হাতেখড়ির পুরোধা ‘ডন’। ১৯৭৮ সালে প্রথম ‘ডন’ রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। ‘চার্মিং গ্যাংস্টার’-এর বেশে পর্দায় উপস্থিত হয়েছিলেন অ্যাংরি ইয়াং ম্যান অমিতাভ। সত্তরের দশকে এমন কেতাদুরস্ত গ্যাংস্টার চোখ টেনেছিল সাধারণ দর্শকের। সেই থেকে শুরু। তার প্রায় তিন দশক পরে জেন-ওয়াইয়ের প্রজন্মের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ‘ডন’ পরিবেশন করেছিলেন ফারহান আখতার। নামভূমিকায় ছিলেন বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান। অমিতাভের পাস বাড়ানো বলেই গোল দিয়েছিল শাহরুখ-ফারহান জুটি। ‘ডন’-এর আধুনিকীকরণ নজর টেনেছিল অনুরাগীদের। দিন হোক বা রাত, শাহরুখের আদলে রোদচশমা পরা শুরু করেছিলেন তরুণ অনুরাগীরা। ছবির জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে ঠিক পাঁচ বছর পরে ২০১১ সালে ‘ডন ২’ ছবির অবতারণা। ‘ডন’রূপী শাহরুখের লম্বা চুলের লুক ও তীক্ষ্ণ নজর থেকে চোখ সরাতে পারেননি দর্শক। স্বাভাবিক ভাবেই, ‘ডন ৩’-এর জন্য গত ১২ বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন অনুরাগীরা। অবশেষে ২০২৩ সালে এসে ইতি পড়েছে সেই অপেক্ষার ইতি ঘটেছে। ফিরছে ‘ডন’। তবে এ বার তা শাহরুখ-শূন্য। ‘ডন ৩’ ছবিতে ‘ডন’-এর ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ করছেন রণবীর সিংহ।
গত কয়েক মাস ধরে বলিপাড়ার অন্দরে কানাঘুষো চলছিল ‘ডন ৩’ নিয়ে। শাহরুখ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে তাঁর জুতোয় পা গলাবেন কে, তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা চলছিল। অবশেষে উত্তর মিলেছে সেই প্রশ্নের। ‘ডন’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন রণবীর সিংহ। প্রথম ঝলকও মুক্তি পেয়েছে ইতিমধ্যেই। শাহরুখের জুতো কি আদৌ খাপে খাপে বসেছে রণবীরের পায়ে? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে এখনও বছর দুয়েক অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ‘ডন ৩’-এর শুটিং শুরু হতে হতেই আগামী বছর। তার পরে সেই ছবি মুক্তি পাবে ২০২৫ সালে। তবে প্রথম ঝলকে ‘ডন’ হিসাবে রণবীর কেমন? এক কথায়, ‘আনইম্প্রেসিভ’।
শাহরুখের ‘ডন’-কে দেখে যে উত্তেজনা তৈরি হত মনের মধ্যে, তার ধারেকাছে যেতে পারেননি রণবীর। চোখে রোদচশমা, হাতে রিভলভার ও ঠোঁটের কোণে সিগারেট নিয়েও প্রথম ঝলকে রণবীর বেশ ফ্যাকাসে। ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমের পাতায় ‘নোএসআরকেনোডন’ হ্যাশট্যাগ লিখে নিজেদের ক্ষোভ ও হতাশাও জানিয়েছেন শাহরুখের অনুরাগীরা। তাঁদের দাবি, ছবিতে শাহরুখের অন্তত একটি ক্যামিয়ো না থাকলে ছবিই দেখবেন না তাঁরা। শোনা যাচ্ছে, নেটাগরিকদের এই প্রতিক্রিয়ায় খুব একটা অবাক হননি পরিচালক ফারহান। তবে তাঁর আশা, পরম্পরার হস্তান্তরের কথা মাথায় রেখে রণবীরের ‘ডন ৩’-কে একটা সুযোগ দেবেন দর্শক। আর আমাদের আশা? ‘ডন’ ও ‘ডন ২’-এর ধারা বজায় রেখে হতাশ করবেন না পরিচালক ফারহান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy