নৃত্য পরিবেশনে উদয়, অমলা ও সিমকি
উদয়শঙ্করের কাছে দীর্ঘদিন নাচ শিখেছি। তাই বৌদিকেও কাছ থেকে দেখেছি। দাদার নাচের কোনও তুলনা নেই, সে তো সর্বজনবিদিত। বৌদি ছিলেন তাঁর যোগ্য স্ত্রী, একজন সৃজনশীল নৃত্যশিল্পী। নৃত্যনাট্য ‘সামান্য ক্ষতি’-তে বৌদির যে মুভমেন্ট দেখেছি, তা ভোলার নয়। উনি রানির ভূমিকায় ছিলেন। মঞ্চে নাচের মধ্য দিয়ে যখন উনি আগুন জ্বালাচ্ছেন, তখন তার যে কী শরীরী অভিব্যক্তি!
উদয়শঙ্করের হিন্দি ছবি ‘কল্পনা’য় নাচের সময়ে বৌদির গ্রেস আজও চোখে ভাসে। আঙুল, হাতের বেসটা নাড়াচ্ছেন আর শরীরটা যেন একটা বৃত্তের মধ্যে ঘুরে চলেছে। অদ্ভুত! ১৯৬৩-৬৪ সাল নাগাদ যখন দাদার কাছে নাচ শিখতাম, তখন দেখতাম রিহার্সাল শুরু হওয়ার আগেই দাদার খাবার, সময় মতো ওষুধ পাঠিয়ে দিতেন বৌদি। ওঁদের মধ্যে একটা খুব শিক্ষণীয় দিক বরাবর লক্ষ করেছি, তা হল ডিসিপ্লিন। নাচ করছি বলে, শুধু তা করেই চলে এলাম তা নয়। প্রোগ্রামের সময়ও গ্রিনরুমে কোনও চেঁচামেচি নয়, খুব নিয়ম মেনে সব কিছু হত। এ সবের সঙ্গে বৌদির একটা অদ্ভুত গুণ ছিল। উনি আঙুলে রং লাগিয়ে দিয়ে খুব সুন্দর ছবি আঁকতে পারতেন। ‘সামান্য ক্ষতি’-তে পিছনে যে স্লাইডগুলো ব্যবহার হত, তা সব ওঁর আঁকা।
গত বছর ওঁর একশো বছরের জন্মদিনে আমরা গিয়েছিলাম। তখন বৌদি যেন মমর সন্তান। মম (মমতাশঙ্কর) বলল, ‘‘একটা ছোট্ট ফিডিং বটলে জল রাখি, রাতে তেষ্টা পেলে ওটায় করে খাওয়াই।’’ সব সময় ওঁর সঙ্গে থাকত মম। মনে পড়ছিল পুরনো সময়ের কথা। দাদার স্কুল থেকে অমলাশঙ্করের পরিচালনায় ‘সীতার স্বয়ংবর’ নামে একটা শো হয়েছিল। সেখানে রামের ভূমিকায় ছিল মম। বৌদি নিজের হাতে মেয়েকে সুন্দর সাজিয়ে দিতেন। রামের ছোট থেকে বড় হওয়া, কী ভাবে সে সীতার স্বয়ংবরে গেল, এ সব কিছু উনি দেখিয়েছিলেন স্টেজে। অডিয়েন্সের ভিতর থেকে রাম এসে স্টেজে উঠছে। মাঝেমাঝে একটু কমিক রিলিফ রেখেছিলেন। ওঁর এই কম্পোজ়িশন বহু বার মঞ্চস্থ হয়েছে।
কল্পনা ছবির দৃশ্য
বৌদির সাজও ছিল ভীষণ স্নিগ্ধ। নিজেকে কী ভাবে সাজালে সুন্দর লাগবে, তা ভাল জানতেন। চুলে পার্টিং করে একটু উঁচু করে খোপা বাঁধতেন। চেহারায় অসম্ভব ডিগনিটি ছিল। তবে দাদা মারা যাওয়ার পর থেকে ওঁকে তসর রং ছাড়া অন্য কোনও রং পরতে দেখিনি।
আসলে এত বড় মানুষের স্ত্রী উনি, তাঁর ছায়া তো পড়বেই। তবে অমলাশঙ্করের নিজস্ব ক্ষমতাও কিছু কম ছিল না। তাই উদয়শঙ্করের পাশে নিজের স্থান করে নিতে পেরেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy