Alok Nath's Image and Career Have Been Damaged by Me Too Allegation dgtl
bollywood
নীনা গুপ্তর সঙ্গে প্রেম, বি গ্রেড ফিল্মের নায়ক... শ্লীলতাহানির অভিযোগে বলিউডে একঘরে হন আলোক নাথ
১৯৮৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কামাগ্নি’ ছিল সেই সময়ের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু বক্স অফিসে এই ছবিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। সেইসঙ্গে আলোক নাথের নায়ক হওয়ার স্বপ্নও। এর পর তাঁর কাছে ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ ছবির অফার আসে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ১৮:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৭
পর্দায় তিনি নিপাট ভালমানুষ। সংস্কারের জয়ধ্বজা থাকে তাঁর হাতেই। অথচ সেই আলোক নাথের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে শোরগোল তীব্র। শোনা যায়, সাড়ে তিন দশকের বেশি সময় ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় করা এই বর্ষীয়ান অভিনেতার রিল এবং রিয়েল লাইফের মধ্যে নাকি আকাশপাতাল পার্থক্য।
০২২৭
পাঁচশোর বেশি সিনেমা এবং প্রায় সত্তরটি টিভি সিরিয়ালে কাজ করেছেন আলোক নাথ। সব চিত্রনাট্যেই তাঁকে দেখা গিয়েছে প্রায় একই ভূমিকায়। সংসারের ‘সংস্কারী বাবা’। যেখানে বেশির ভাগ কুশীলব টাইপকাস্ট হতে ভয় পান, সেখানে আলোক নাথ দ্বিধা করেননি একই ভূমিকায় অভিনয় করতে।
০৩২৭
তাঁর পুরো নাম আলোক নাথ ঝা। বিহারের খাগারিয়ায় আলোক নাথের জন্ম ১৯৫৬-র ১০ জুলাই। তবে তাঁর বড় হওয়া দিল্লিতে। সেখানে মডার্ন স্কুলের পরে পড়াশোনা হিন্দু কলেজে। কলেজ পড়ার সময় থেকেই তাঁর আগ্রহ থিয়েটারে।
০৪২৭
এর পর তিনি ভর্তি হন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায়। সেখানে তাঁর সহপাঠী ছিলেন নীনা গুপ্ত এবং অনু কপূর। সতীশ কৌশিক, অনুপম খের এবং পঙ্কজ কপূরের মতো অভিনেতা তাঁর সিনিয়র ছিলেন।
০৫২৭
ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে সদ্য উত্তীর্ণ আলোক নাথ মুম্বইয়ে এসেছিলেন ১৯৮০ তে। সে সময় পৃথ্বী থিয়েটার-এ অনেক নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেখানেই ইন্ডাস্ট্রির নজরে পড়েন তিনি। ছবিতে প্রথম অভিনয় ১৯৮২ সালে, ‘গাঁধী’-তে।
০৬২৭
কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে আলোক নাথ কিন্তু বাবা-র চরিত্রে অভিনয় করেননি। তাঁর অভিনীত চরিত্র তয়েব মহম্মদের বৈশিষ্ট্য ছিল কথায় কথায় রেগে যাওয়া। সেই ছবিতে ছিলেন নীনা গুপ্তও। কলেজজীবন থেকেই তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
০৭২৭
এর পর আরও কিছু ছবিতে ছোটখাটো ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। তবে পরিচিতি পান ছোট পর্দা থেকে। সে সময় রমেশ সিপ্পি একটি ধারাবাহিক তৈরি করছিলেন। নাম, ‘বুনিয়াদ’। ভারতীয় দূরদর্শনের ইতিহাসে মাইলফলক ধারাবাহিক। সেখানে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আলোক নাথ।
০৮২৭
আশির দশকে আলোক নাথ যখন ৩৪ বছর বয়সি যুবক, তিনি ‘বুনিয়াদ’-এ অভিনয় করেছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধের ভূমিকায়। ধারাবাহিকে আলোক নাথের অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল ‘হাভেলিরাম’। তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলেন অনিতা কনওয়ার। পরবর্তী সময়ে পর্দার বাইরেও তাঁর স্ত্রী হন অনিতা। নীনা গুপ্তর সঙ্গে প্রেম ভেঙে যাওয়ার পরে অনিতাকেই বিয়ে করেন আলোক নাথ।
০৯২৭
‘বুনিয়াদ’-এর দৌলতে আলোক নাথের ‘বৃদ্ধ’ চেহারা দর্শকদের খুব পছন্দ হয়। কিন্তু আলোক নাথ তো বাবার ভূমিকায় অভিনয় করতে আসেননি। তাঁর ইচ্ছে ছিল নায়ক হওয়ার। নায়ক হয়েওছিলেন। ‘কামাগ্নি’ ছবিতে টিনা মুনিমের বিপরীতে। কার্যত ‘বি গ্রেড’-এর তকমা পাওয়া এই ছবিতে বহু সাহসী, খোলামেলা দৃশ্য ছিল।
১০২৭
১৯৮৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কামাগ্নি’ ছিল সেই সময়ের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু বক্স অফিসে এই ছবি মুখ থুবড়ে পড়ে। সেইসঙ্গে আলোক নাথের নায়ক হওয়ার স্বপ্নও। এর পর তাঁর কাছে ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ ছবির অফার আসে।
১১২৭
বক্স অফিসে ছবিটি সুপারডুপার হিট হয়। এই ছবির সুবাদে বলিউডে আলোক নাথ পরিচিত হয়ে যান নায়ক বা নায়িকার বাবা হিসেবেই। এর পর তিনি অভিনয় করেন ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবিতে।
১২২৭
নায়ক নায়িকার পাশাপাশি চিত্রনাট্যে দর্শকদের কুর্নিশ আদায় করে নিতেন আলোক নাথও। স্বাদ বদলানোর জন্য তিনি অভিনয় করেছেন খলনায়কের চরিত্রেও। ‘বোল রাধা বোল’ এবং ‘বিনাশক’ ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে নেগেটিভ ভূমিকাতে। কিন্তু নায়ক নায়িকার বাবা হিসেবে যে সুনাম তিনি পেয়েছেন, তা খলনায়ক হিসেবে পাননি।
১৩২৭
ফলে একটা সময়ে অলোক নাথ স্থায়ী হয়ে যান স্নেহময় বাবা-র চরিত্রেই। কোনওরকম পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়াই এগোতে থাকে কেরিয়ার। তবে ভাটা পড়েনি জনপ্রিয়তা এবং ছবির অফারে।
১৪২৭
তারকা আলোক নাথের কাছেই আসে ‘তারা’ সিরিয়ালে অভিনয়ের প্রস্তাব। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত টানা চার বছর এই ধারাবাহিক ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। শীর্ষ চরিত্র ‘তারা’-র ভূমিকায় ছিলেন নভনীত নিশান। আলোক নাথের চরিত্রের নাম ছিল দীপক শেঠ। নভনীত সে সময় আলোক নাথের বিরুদ্ধে অশালীনতার অভিযোগ এনেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, মত্ত অবস্থায় আলোক নাথ অশ্লীল আচরণ করেন।
১৫২৭
নভনীতের অভিযোগের ভিত্তিতে আলোক নাথকে সিরিয়াল থেকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু এর ফলে ধারাবাহিকের টিআরপি দ্রুত হারে পড়তে থাকে। শেষে সিরিয়ালের চিত্রনাট্যে পরিবর্তন আনা হয়। সেইসঙ্গে ফিরিয়ে আনা হয় আলোক নাথকেও। এর জেরে ক্ষুব্ধ নভনীত-ই সিরিয়াল ছেড়ে বেরিয়ে যান।
১৬২৭
‘তারা’-র অন্যতম কাহিনিকার ছিলেন বিনতা নন্দা। তিনি ছিলেন আলোক নাথের স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। তাঁর সঙ্গেও আলোক নাথের সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আলোক নাথের স্ত্রী অনিতার সঙ্গে বিনতার সম্পর্ক অটুট ছিল। বান্ধবীর আমন্ত্রণে এক বার তাঁদের বাড়ির পার্টিতে গিয়েছিলেন বিনতা।
১৭২৭
বিনতার অভিযোগ, পার্টি থেকে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। নির্জন রাস্তায় হেঁটে একাই ফিরছিলেন বিনতা। সে সময় নাকি আলোক নাথ গাড়ি নিয়ে এসে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিতে চান। গাড়িতে তাঁর পাশে বসার পরে বিনতাকে নাকি আরও মদ্যপান করান আলোক নাথ।
১৮২৭
কাহিনিকারের অভিযোগ, ওই অবস্থায় বাড়িতে পৌঁছনোর পরে তাঁর আর কিছুই মনে নেই। তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। পরের দিন বিকেলে যখন ঘুম ভাঙে তাঁর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। বিনতার অভিযোগ, মাদক মেশানো মদ পান করানোর ফলে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন। সেই সুযোগে আলোক নাথ তাঁর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ বিনতার।
১৯২৭
সে সময় আলোক নাথের বিরুদ্ধে অনেকের কাছে অভিযোগ করেন বিনতা। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। আলোক নাথের মতো তারকার বিরুদ্ধে যেতে কেউ রাজি হননি। বরং, এর জেরে বিনতা-ই কাজ কম পেতে থাকেন। কিন্তু আলোক নাথের কেরিয়ারে কোনও ক্ষতি হয়নি।
২০২৭
রাজশ্রী প্রোডাকশনের প্রায় সব ছবিতে আলোক নাথের ভূমিকা ছিল বাঁধা। কিন্তু এই প্রযোজক সংস্থার এক কস্টিউম ডিজাইনারও অভিনেতার বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগ আনেন। তার পরেও আলোক নাথের সুনাম কালিমালিপ্ত হয়নি। বরং, তিনি সিনেমা ও সিরিয়াল, দু’টি মাধ্যমেই দাপটের সঙ্গে অভিনয় করতে থাকেন।
২১২৭
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও আলোক নাথ ছিলেন চরম জনপ্রিয়। তাঁকে নিয়ে তৈরি মিম-ও উপভোগ করতেন তিনি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া-ই এক সময় ভরাডুবি ডেকে আনল তাঁর কেরিয়ারে। সে সময় শুরু হল ‘মি টু’ মুভমেন্ট। একের পর এক বলিউড অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজকের বিরুদ্ধে উঠতে লাগল অভিযোগ। ভাবমূর্তি হারিয়ে তাঁদের কাজও কমতে লাগল।
২২২৭
সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল আলোক নাথকেও। তাঁর বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগ নতুন করে আনলেন বিনতা নন্দা। আগে যতটাই উপেক্ষিত ছিলেন, মি-টু স্রোতে ততটাই গুরুত্ব পেলেন তিনি।
২৩২৭
সেই প্রসঙ্গে এল নভনীত নিশানের পুরনো অভিযোগও। সন্ধ্যা মৃদুলও অভিযোগ করলেন, একটি শর্ট ফিল্মে কাজ করার সময় তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছিলেন আলোক নাথ। অভিনেত্রী হিমানী শিবপুরী এবং দীপিকা আমিন-ও মুখ খোলেন আলোক নাথের বিরুদ্ধে।
২৪২৭
পর্দায় আলোক নাথের মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করা ভাগ্যশ্রী বলেন, তাঁর সঙ্গে অভিনেতা কোনওদিন অশালীন ব্যবহার করেননি। কিন্তু তিনি লক্ষ করেছিলেন, মদ্যপান করার পরে আলোক নাথের আচরণের আমূল পরিবর্তন হয়।
২৫২৭
তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন আলোক নাথ। আলোক নাথের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন বিনতা নন্দা। এই মর্মে আলোক নাথ যা বলেন, তাতে সব অভিযোগই ঘুরে যায় বিনতার দিকেই।
২৬২৭
আলোক নাথের বক্তব্য ছিল, ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-য় সহপাঠী বিনতার দুর্বলতা ছিল তাঁর উপর। কিন্তু তিনি তাঁকে বিয়ে না করায় বিনতার অনুভূতি থেকে যায় একতরফা প্রেম হয়েই। কিন্তু এই সাফাই দেওয়ার পরেও শেষরক্ষা হয়নি। ইন্ডাস্ট্রিতে আলোক নাথ একঘরে হয়ে যান।
২৭২৭
সে সময় ‘মি টু’ বিষয় নিয়েই একটি ছবিতে অভিনয় করছিলেন আলোক নাথ। সেই ছবি মাঝপথেই আটকে যায়। ওই একই সময়ে অজয় দেবগণের ছবি ‘দে দে প্যায়ার দে’ ছবিতেও অভিনয় করেন আলোক নাথ। দর্শকরা এই ছবি থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেন। এর পর থেকে আলোক নাথ নিজের হারানো জনপ্রিয়তা আর ফিরে পাননি।