দুই প্রতিদ্বন্দ্বী: অনুরাগ কশ্যপ এবং অনিল কপূর।
হাতে মাত্র ১০ ঘণ্টা। তারপরেই সূর্য উঠবে। আর খুন হয়ে যাবে আদরের মেয়ে। তার আগেই খুঁজে বের করতে দুশমনের ডেরা। নো ক্লু! পুলিশকে জানানো যাবে না কিচ্ছু, পরিজনকে করা যাবে না ফোন। গভীর রাতের মুম্বই। নিশিজাগা বাণিজ্যনগরী বড়দিনের উৎসবে আরও উচ্ছ্বল। নিজের জন্মদিন ভুলে, হতভাগ্য পিতা একজনকে তাড়া করে চলেছেন। তিনি মরিয়া।
আচমকা গাড়ির ধাক্কা! রক্তাক্ত মানুষটা অসহায়ের মতো কাঁদছেন।
এই সিনেমায় পিতা অনিল কপূর। কন্যা সোনম। নিষ্ঠুর কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন অনুরাগ কশ্যপ।
বিক্রমাদিত্য মোত ওয়ানের ‘একে ভার্সেস একে’ সিনেমা একটা চমক। অনিল কপূরের ভূমিকায় অনিল নিজেই অভিনয় করেছেন। অনুরাগ কশ্যপের ভূমিকায় অনুরাগই। ছবির বাকিরাও নিজের নিজের চরিত্রে। কল্পনা আর বাস্তব নিয়ে পরিকল্পিত খেলা খেলতে চেয়েছেন পরিচালক। যা কখনও অতি-পরিকল্পিতও মনে হতে পারে কোনও কোনও দর্শকের।
অবিনাশ সম্পথের এই কাহিনিরেখা নিয়ে পরিচালক কয়েক বছর আগেই ছবি করতে চেয়েছিলেন। তার পর থেকে এত দিন সিনেমাটা নিয়ে ভেবে গিয়েছেন, এমনই বক্তব্য পরিচালকের। অবশ্য তখন খবর ছিল— শাহিদ কপূর এবং তাঁর স্ত্রী অভিনয় করবেন অনুরাগ কশ্যপের সঙ্গে। সেই মতো ছবির নাম ভাবা হয়েছিল ‘একে ভার্সেস এসকে’। অপহরণ হবে শাহিদের স্ত্রীর। যা হোক, শেষ পর্যন্ত অনিলের পরিবার নিয়ে সিনেমাটি তৈরি হয়েছে।
গল্পের শুরুতে একটি অনুষ্ঠানে অনুরাগ কশ্যপ এবং অনিল কপূরের মধ্যে জোর তর্ক বাধে। একজন প্রশ্ন করেছিলেন সিনেমায় পরিচালক বড়, না হিরো বড়? বাণিজ্যিক সিনেমার ক্ষেত্রে হিরোই জনতার বেশি পছন্দের। হিরোকে নিয়েই উল্লাস বেশি হয়। কোটি কোটি ‘ফ্যান’ আর টাকা পেয়ে গল্পের নায়ক-অভিনেতা অনিলও নিজেকে বড় ভেবে ফেলেন। ভাবতে শুরু করে, বাস্তবেও তিনি তেমনই শক্তিশালী।
আর তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চরিত্রটা কী? মৌলিক সিনেমা সৃষ্টির স্বপ্নে মশগুল বহু পরিচালক ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন। ‘আপস করে ছবি বানাব না’! এমন গোঁ থেকে নিজের অজান্তেই ক্রমে যেন সরে যান তাঁরা। অন্যের কেনারাম-বেচারাম চিন্তার নির্মাতা হয়ে আয় করেন যশ-প্রতিপত্তি। যাঁরা এমন পারেন না, ইন্ডাস্ট্রি ছেড়েও যান না, দ্বিধায় ভোগেন, তাঁদের পরিণতি কী? ক্রোধ, হতাশা, আক্রমণ, বিকৃতি ক্রমশ ঘিরে ধরে কি তাঁদের? অনুরাগ কশ্যপ চরিত্রটি কি এ রকম? গোড়ায় মনে হয়েছিল, সুপারস্টার বনাম ভাল-কিন্তু-ব্যর্থ পরিচালকের এই ঝগড়া আসলে নিজেকে বিকিয়ে দেওয়া শিল্পীর এক বিশেষ লড়াই। যে লড়াইয়ে তিনি বাঁচতে চাওয়া অন্য শিল্পীর লড়াই তুলে ধরতে চান।
কিন্তু ছবি সেই গতি নিল না। ঝগড়ার পরিণতি হিসেবে ক্রমে সবাই ত্যাগ করতে থাকে অনুরাগকে।ছবিতে তাঁর ঘনিষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। হতাশায় ডুবে যান অনুরাগ।
আমরা দেখি, সিনেমার ভিতরে সিনেমার আদলে একটি থ্রিলার। অনিলের জন্মদিনে মরিয়া অনুরাগ তাঁকে জানান, সোনমকে অপহরণ করা হয়েছে। মেয়েকে উদ্ধার করে সুপারস্টার তাঁর ক্ষমতার প্রমাণ দিন! তবে সবই ক্যামেরাবন্দি হবে। এটাই তাঁর নতুন সিনেমার চিত্রনাট্য। প্রথমে ক্রুদ্ধ, পরে বাধ্য অনিল সারা রাত অনেক কিছু করেন। সাদামাঠা থ্রিলার ছবিতে যেমন হয়। এর মাঝেই ভেসে আসে সুপারস্টারের হাহাকার।
দর্শকের সামনে আসে ছবির শেষে চূড়ান্ত চমক! গল্প পৌঁছে যায় অন্য মাত্রায়। কিন্তু বিশ্বাস হয় কি এই গল্প? বোধহয় না। গল্পকার, চিত্রনাট্যকারকে বরং গায়ের জোর দেখানো ‘সিনেমা-দেবতা’ মনে হয়। ঝকঝকে ক্যামেরা এবং বুদ্ধিদীপ্ত এডিটিং-ও ছবিকে যুক্তিযুক্ত করে তুলতে পারে না। বৈশিষ্ট্যহীন হিরো অনিল কপূর এবং চিন্তাশীলতায় প্রকট অনুরাগ কশ্যপ যে দ্বৈরথ রচনা করেছেন, তা কোনও গভীর বার্তা দেয় না, যা মনে থেকে যাবে বহু দিন।
পড়ে থাকে শুধু চমকের ছাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy