‘দ্য হোয়াইট টাইগার’-এর দৃশ্য
‘দ্য হোয়াইট টাইগার’-এর পরে জীবন পাল্টে গিয়েছে আদর্শ গৌরবের।
প্র: বাফটা মনোনয়নে অ্যান্থনি হপকিনস, চ্যাডউইক বোসম্যানদের সঙ্গে আপনার নাম...
উ: প্রথমে তো বিশ্বাসই হয়নি। ভেবেছিলাম, নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হয়েছে ওঁদের (হাসি)। প্রাথমিক তালিকায় যখন নাম ছিল, তখনও বেশ অবাক হয়েছিলাম। শর্ট লিস্টে থাকার কথা আশাই করিনি। ওই মাপের নামেদের পাশে আমার নাম থাকায় অসম্ভব কৃতজ্ঞ আমি।
প্র: ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’-এর পরে জীবন কতটা বদলেছে?
উ: পেশাগত জীবনে তো অনেক পরিবর্তন হয়েছেই। অডিশন কল আসা বেড়ে গিয়েছে, প্রচুর স্ক্রিপ্ট পড়ছি, অনেক ইন্টারভিউ দিচ্ছি (হাসি)। সোজা কথায়, কাজের পরিধি ও সুযোগ বেড়ে গিয়েছে ছবিটার সাফল্যের পরে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে নিজেকে তৈরি করার পিছনে অনেকটা সময় দিই আমি প্রত্যেক দিন। সেই সময়টা একটু হলেও কমে গিয়েছে। চেষ্টা করছি, সেটা ব্যালান্স করার।
প্র: অস্কারের মঞ্চেও পৌঁছে গিয়েছে আপনার ছবি। কী আশা করছেন?
উ: আলাদা করে কিছু আশা করছি না। মনোনয়ন পাওয়াটাই আমাদের কাছে জিতে যাওয়ার সমতুল্য।
প্র: বলরাম হালওয়াইয়ের চরিত্রটি আপনার কাছে এল কী করে?
উ: ২০১৯ সালে একটা অডিশনের ডাক পাই টেস জোসেফের অফিস থেকে। এ দেশ থেকে আন্তর্জাতিক ছবির জন্য যাঁরা কাস্ট করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কাস্টিং ডিরেক্টর টেস। অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম ওঁর কাছে পৌঁছতে। উনি আমাকে কিছু দৃশ্য দিয়েছিলেন, কিন্তু কোন ছবির জন্য তা বলেননি। ১৩-১৪ বছর বয়সে অরবিন্দ আদিগার ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’ উপন্যাসটা আমার পড়া ছিল। তাই স্ক্রিপ্টটা পড়েই বুঝতে পারি, কোন গল্প থেকে ছবি হতে চলেছে। অডিশনে কোনও ফাঁক রাখতে চাইনি। একমাস পরে ডাক এল। ওয়ার্কশপ শুরু হল, ৬-৭ রাউন্ড ধরে। পরিচালক রামিন বাহরানি তৃতীয় রাউন্ডের পর থেকে এলেন। বেঙ্গালুরুর বলরাম আর বিহারের বলরামকে আলাদা করে রপ্ত করতে শেখালেন উনি।
প্র: চরিত্রের প্রস্তুতির জন্য নাকি আপনি এক সময়ে চায়ের দোকানে কাজ করতেন?
উ: হ্যাঁ। বলরাম হালওয়াই হয়ে ওঠার প্রস্তুতির জন্য আমার হাতে অনেকটাই সময় ছিল। কারও জন্য ড্রাইভারি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার জন্য ড্রাইভিং করতে চায়, এমন কাউকে কাজে রাখতে চাইছিল না কেউ। তখন ভাবলাম, গ্রামে গিয়ে থাকব। বিহারের প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে আসা বলরামকে চিনতে-বুঝতে। আমার এক পড়শি তাঁর গ্রামে নিয়ে যান, দু’সপ্তাহের জন্য ছিলাম বিহারের সেই গ্রামে। তার পরে দিল্লিতে যাই, একটা রাস্তার ধারের হোটেলে কাজ নিই। একমাত্র ওখানেই কাজ পাওয়ার জন্য আই-কার্ড দেখাতে হয়নি। ভাত/রুটি আর সবজি প্লেটপিছু ৪০টাকা করে ছিল। ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করে ১০০ টাকা করে পেতাম দিনে। বলরামের প্যারালাল আইডেন্টিটি আমার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।
প্র: আসল পরিচয় জানতে পারেনি কেউ?
উ: নাহ... কেউ জানত না আমি কে। তার জন্য একটা গল্পও বানাতে হয়েছিল আমায়। সকলে জানত, আমি আমার কাকার সঙ্গে দিল্লিতে এসে রয়েছি, অনেকের সঙ্গে ঘর শেয়ার করে। কাকা ছবি আঁকেন। প্রত্যেক দিন সন্ধে ৭.৩০টায় আমাকে কাজ থেকে ছুটি দিতে হত, কল সেন্টারের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেব বলে— সকলে এটাই জানত। আসলে সেই সময়ে স্ক্রিপ্ট নিয়ে পড়ে থাকতাম। ওখানেই আমার নেট প্র্যাকটিস হয়ে গিয়েছিল।
প্র: ‘রুখ’-এ মনোজ বাজপেয়ীর ছেলে হিসেবে এবং তার পরে শ্রীদেবীর ‘মম’-এ খলচরিত্রে আপনার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। মেনস্ট্রিমের পরিবর্তে কি বাছাই করা চরিত্রেই কাজ করবেন এর পর?
উ: এক্সপেরিমেন্টাল ছবি করতে চাই। অকারণ পরপর ছবি করে যেতে চাই না। একটা ছবির পিছনে যদি চার-পাঁচ মাস সময় দিই, তা হলে সেই ছবি থেকে যেন কিছু নিয়ে যেতে পারি। অভিনেতা হিসেবে আমি খুব স্বার্থপর।
প্র: এর পরে কী কী রয়েছে হাতে?
উ: বেশ কয়েকটি ভাল ভাল ছবি ও ওয়েব সিরিজ়ের প্রস্তাব রয়েছে। নভেম্বর থেকে শুটিং শুরু করছি একটি ছবির, যার জন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে নিজেকে অনেকটা পাল্টাতে হবে আমায়। ফিজ়িক্যাল ট্রেনিং ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছি।
প্র: আপনি তো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন। গানবাজনার সময় পান?
উ: লকডাউনে ইউটিউব দেখে গিটার শিখেছি। এখনও রোজ সকালে উঠে রেওয়াজ করি। প্লেব্যাক করতে চাই। আগে নিজের ব্যান্ডের জন্য গান লিখতাম, সেই অভ্যেসটাও ফিরিয়ে এনে অরিজিন্যালস বার করতে চাই।
সায়নী ঘটক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy