ঋতুপর্না সেনগুপ্তের ২৫ বছরের সফরসঙ্গী সঞ্জয় চক্রবর্তী। নিজস্ব ছবি।
শুরুতেই বলি, নায়িকা জীবন খুব কঠিন। সেই জীবনের সঙ্গে অন্য পেশার কোনও মানুষের জীবন মেলানো আরও কঠিন। কোনও ভাবে দুটো জীবন মিলে গেলে তার থেকে ভাল আর কিছুই হতে পারে না। ২৫ বছর ধরে সঞ্জয় চক্রবর্তী, আমার স্বামীর সঙ্গে এক ছাদের নীচে কাটানোর পর আমাদের দাম্পত্য নিয়ে এটাই আমার উপলব্ধি।
সঞ্জয়কে সেই কত ছোট থেকে চিনি! তখন আমি সপ্তম শ্রেণির। ও ক্লাস টেনে পড়ে। তখন থেকে আমাদের বাড়িতে যাওয়াআসা। বরাবরের গুরুগম্ভীর। পড়াশোনায় ভাল। পরে বিদেশে পড়তে গেল। আমার বাবার একটাই চাওয়া, ছেলেকে শিক্ষিত হতে হবে। মায়ের দাবি, সেই সঙ্গে ভাল পরিবারেরও হওয়া যাই। সঞ্জয় তাই যখন বাড়িতে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল মা-বাবা দ্বিতীয় বার ভাবেনি। আরও কাণ্ড শুনবেন, যে দিন ও আমাদের বাড়িতে বিয়ের কথা বলতে এসেছিল সে দিন আমি বাড়ি নেই! শুটিংয়ে ব্যস্ত।
এই জায়গা থেকেই বলব, নায়িকার সঙ্গে ঘর কথা খুব সহজ কথা নয়। সঞ্জয়ও একই ভাবে প্রচণ্ড ব্যস্ত। তবু সে একা হাতে নিজের বাড়ি, আমার বাড়ি সামলে গিয়েছে। তা বলে কি মনোমালিন্য হয়নি? কথা কাটাকাটি হয়নি? রাগে-অভিমানে আমরা সাময়িক বিপরীত মেরুর বাসিন্দা হইনি? সব হয়েছে। আবার সব মিটেও গিয়েছে। আমার মায়ের সঙ্গে সঞ্জয়ের কী যে ভাল সম্পর্ক! মাকে মান্য করে। আবার বন্ধুর মতো ভালওবাসে। আজ তাই আমাদের খুব মনখারাপ। মা নেই, ২৫ বছরের উদ্যাপনও নেই। কলকাতাতেই আছি। কাছের কয়েক জন বলেছেন, দেখা করতে আসবেন, ব্যস, ওই পর্যন্ত।
আমার মা চোখে হারাত সঞ্জয়কে। আমার সঙ্গে যখনই ঝগড়া হয়েছে মা-বাবা দু’জনেই সঞ্জয়ের পক্ষে। উল্টে আমায় ধমক, “সঞ্জয় ভুল হতেই পারে না। শিক্ষিত, তোর থেকে বয়সে বড়। অভিজ্ঞতাও বেশি। ওর কথা শুনে চলবি। একদম ওর বিরুদ্ধে কিছু বলতে আসবি না।” সঞ্জয়ও তেমনি। রাগারাগি হলে মাকে সালিশি মানত। আরও একটা ব্যাপার ছিল। জামাইষষ্ঠীতে মা জামাইকে খাওয়াতে খুব ভালবাসত। সঞ্জয় ফিশফ্রাই খেতে ভালবাসে। কলকাতায় থাকলে নিজের হাতে ফ্রাই বেঁধে, ভেজে খাওয়াত। আমরা সিঙ্গাপুরে। মা বাঁধা ফিশফ্রাই বাক্সে ভরে পাঠিয়ে দিত। আমি যেন ভেজে ওকে খাওয়াই। ও আমেরিকায় অনেকটা সময় কাটিয়ে ফিরেছে। খাওয়াদাওয়া সে দেশের মতো হয়ে গিয়েছে। এ দিকে মা তো জামাইয়ের জন্য রকমারি রান্না করেছে। সঞ্জয়ের খাওয়ার অভ্যাস বদলে গিয়েছে জেনে আবার নিজে পাতলা করে স্ট্যু রেঁধে দিয়েছে। শুরুতে তাই জামাই শাশুড়িকে প্রায়ই অনুরোধ জানাত, “যেন আসামীকে শাস্তি দেওয়া! এত খাবার খাওয়া যায়? আমি এত খেতে পারি না।”
কত বার এমন হয়েছে, মা সিঙ্গাপুরে মেয়ের কাছে গিয়েছে। এ দিকে মেয়ে অন্য কোথাও শুটিংয়ে ব্যস্ত। মায়ের মুখ ভার, “তোমার তো আমার জন্য সময়ই নেই! সারা ক্ষণ শুটিং।” সঙ্গে সঙ্গে সঞ্জয় বলে উঠত, “চিন্তা করবেন না ‘মিল’ (মাদার ইন ল)। আমি আছি। সঙ্গ দেব।” দিতও তাই। এক বার হঠাৎ মায়ের দাঁতে ব্যথা। সঞ্জয় দায়িত্ব নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে সব করে দিল। শেষের দিকে আমরা মাকে ড্রেস পরাতাম। মা আর শাড়ি সামলাতে পারত না বলে। সঞ্জয় বলত, “ঝট করে ড্রেস পরে আমার সঙ্গে ঘুরতে চলুন।”
এত গুলো বছর পেরিয়ে মাঝেমধ্যে পিছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে। বিনোদন দুনিয়ায় অনেকেই দম্পতি। তাঁরা খুবই ভাল আছেন। ওঁদের দেখতে দেখতে তবু মনে হয়, আমি বোধ হয়, এক ইঞ্চি হলেও বেশি সুখী। কারণ, একই পেশায় থেকে হাতের উপরে হাত রাখা সহজ কথা নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy