বলতে পারেন, আমার জীবনে এ যেন এক বিশেষ সময়। ১৫ বছর পর আমার প্রযোজিত ছবি ‘পুরাতন’ দিয়ে বাংলা ছবিতে ফিরছেন শর্মিলা ঠাকুর। পর্দায় তিনি মা, আমি মেয়ে। কাজের সুবাদে তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য, জানার সুযোগ ঘটল। এটাই জীবনের থেকে অনেক বড় প্রাপ্তি। এ রকমই আরও এক প্রাপ্তি, সুচিত্রা সেনের জন্মদিনে ওঁর নাতনি রাইমা সেনের আমন্ত্রণ। মুনমুন সেন, রিয়া সেন আর রাইমার হাত ধরে এই প্রথম ম্যাডাম সেনের ‘উত্তর ফাল্গুনী’ ছবির পুরনো, আসল পোস্টার দেখার সৌভাগ্য ঘটল। জানতে পারলাম অনেক অজানা কথা।
ছেলে অঙ্কন আজ আমার সঙ্গী। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করাব বলেই নিয়ে গিয়েছিলাম ওকে। সেন বাড়িতে পা রাখা মানেই অজানা রোমাঞ্চ ঘিরে ধরে আমায়, আজও! এখনও সুচিত্রা সেন মানে আমার কাছে একরাশ মুগ্ধতা, স্বপ্ন। কেউ ওঁর চোখের প্রেমে পাগল, কেউ ওঁর হাসির। আমার সত্তা জুড়ে ওঁর সামগ্রিক উপস্থিতি। আমি তাই ‘উত্তর ফাল্গুনী’ ছবির শেষ দৃশ্যে ওঁর হাজতের গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে অনন্য সৌন্দর্য খুঁজে পাই। কিংবা ‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবিতে যখন কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়ে বলছেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, আমি অভিনয় করিনি। আমি অভিনয় করতে পারি না...’’ ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়।

ছেলে অঙ্কনকে নিয়ে সেন বাড়িতে ঋতুপর্ণা। ছবি: সংগৃহীত।
তখনই মনে হয়, দ্বিতীয় সুচিত্রা সেন আর হবে না। তাঁর রেখে যাওয়া ঐতিহ্যের উত্তরসূরি মুনদি, রাইমা, রিয়া— বোঝাচ্ছিলাম ছেলেকে। নিজেও ভাবছিলাম, আমিও তো কাজের মধ্যে দিয়ে ওঁকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। যেমন, প্রতি দিন নিজেকে নির্মাণ করি, সেই নির্মাণের কিছু অংশ আমার নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মধ্যে ভাগ করে দিই। এই দেওয়া-নেওয়াই আমার জীবন। আমি তো কিছুই নিয়ে যেতে পারব না!
সুচিত্রা সেন সত্যিই তারকা, যেন দূর আকাশের তারা। যার জ্যোতিতে আলোকিত হওয়া যায়। কিন্তু তাকে ছোঁয়া যায় না! সকলের মধ্যে থেকেও যেন সকলের থেকে দূরে, অন্তরালে। ঠিক যেমন, রাতের তারা লুকিয়ে থাকে দিনের আকাশে। তাই তো একান্তে দিনযাপন তাঁর। আর তাই ঠিক সময়ে নিজেকে সকলের থেকে সরিয়ে নিতে পেরেছেন! আমারও কোনও কোনও সময় সুচিত্রা সেনের মতো মনে হয়, হঠাৎ একদিন হারিয়ে যাই। ইচ্ছে থাকলেও পারি না। আমার যে পিছুটান অনেক। অনেকে আমার উপরে নির্ভরশীল। তাঁদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে রেখে যাই কী করে?
আরও পড়ুন:
আমার সান্ত্বনা তাই এটুকুই। মুনদি বলছে, আমার ছবি ম্যাডাম সেন দেখেছেন। শুধু দেখেননি, প্রশংসাও করেছেন। বলেছেন, ‘‘মেয়েটি কেবল সুন্দরী নয়, অভিনয়ও পারে। এই জোরেই ও অনেক দূর যাবে।’’ আমিও ওঁর বলা কথা আঁকড়ে লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছি। আমার যে এখনও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি...!