আনন্দবাজার অনলাইনে অকপট প্রিয়াঙ্কা মিত্র।
ধারাবাহিকের নায়িকা আচমকা উধাও। দু’বছর পরে ফের দেখা গেল অন্য ধারাবাহিকে, নায়কের বোনের চরিত্রে। মাঝের সময়টায় কোথায় ছিলেন প্রিয়াঙ্কা মিত্র? কেনই বা হারিয়ে গিয়েছিলেন? অকপটে ভাগ করে নিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: লোকে বলে বাস্তবের ‘চিনি’ও নাকি চিনির মতোই মিষ্টি! সত্যিই?
হ্যাঁ, আমি খুবই ভাল আর মিষ্টি (হিহি করে হেসে)। আসলে ‘খড়কুটো’র চিনি যেমন, বাস্তবে আমিও ঠিক তেমনই। নরম মনের, একটুতেই আবেগে ভাসি, হাসিখুশি থাকি, সবার সঙ্গে মজা করি। চিনির মতোই বাড়ির আদুরেও বটে। তাই বোধহয় এ রকম বলে লোকে।
প্রশ্ন: আর ‘মোহর’-এর দিয়া? তার সঙ্গেও কি মিল আছে?
(আবার হাসি) একেবারেই না! ‘দিয়া’ যেমন সারা ক্ষণ জটিল, কুটিল হয়ে থাকছে, অন্যের ক্ষতি চাইছে, তেমনটা আমার দ্বারা হয়ে ওঠে না একেবারেই।
প্রশ্ন: চিনি ইতিবাচক, দিয়া নেতিবাচক। একসঙ্গে দু’রকম চরিত্র সামলান কী করে?
‘চিনি’ হতে আমায় অভিনয় করতে হয় না। নিজের মতো থাকলেই আমি ‘চিনি’ হয়ে যাই। কিন্তু বাস্তবে আমি ‘দিয়া’র মতো নই। তাই ওই চরিত্রটায় অভিনয়ই করি। প্রথম প্রথম এক শ্যুট থেকে অন্য শ্যুটে দু’রকম অভিনয়ে বেশ অসুবিধেই হতো। কিন্তু আমার পরিচালক, ম্যাজিক মোমেন্টস-এর ইউনিটের বাকিরা এবং সহ-অভিনেতাদের থেকে সাহায্য পেয়েছি অনেকটাই। এখন দিব্যি নিজেকে জায়গা মতো বদলে অভিনয় করে ফেলতে পারি।
প্রশ্ন: ‘ছদ্মবেশী’তে আপনি মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন। এখন পার্শ্ব চরিত্রে। খারাপ লাগে না?
খারাপ লাগবে কেন? চরিত্রগুলো তো গুরুত্বপূর্ণ! আগামীতে আবার নিশ্চয়ই মুখ্য চরিত্র পাব। এমনিতেও আমি নাচ নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম। অভিনয়ে আসাও তো হুট করেই। আমার দাদা-র তোলা ছবি দেখে অডিশনে ডেকেছিল। তা ছাড়া, ‘ছদ্মবেশী’ করতে করতে আমি নিজেই ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে গিয়েছিলাম। দু’বছর পরে ফিরে এসে বোনের চরিত্র খারাপ কী?
প্রশ্ন: সে কী ‘ছদ্মবেশী’ তো আপনার প্রথম ধারাবাহিক! বেরিয়ে গেলেন কেন?
কী আর বলি! জীবনের প্রথম ধারাবাহিকে কাজ করতে এসেই যা অভিজ্ঞতা হল! সহ-অভিনেতাদের কারও সঙ্গে কোনও সমস্যা হয়নি। বরং আমায় উত্ত্যক্ত করে ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিচালক-প্রযোজকরা। সমানে ফোনে খারাপ খারাপ মেসেজ আসত। সে সব প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সেটে সাংঘাতিক হেনস্থা করা হচ্ছিল আমাকে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কাটাতাম। বাড়ি ফিরে এসে কাঁদতাম। এ সবের জন্যই সরে যেতে হয়েছিল ওই ধারাবাহিক থেকে। টানা দুটো বছর আর ইন্ডাস্ট্রিতে ফেরার সাহস দেখাইনি।
প্রশ্ন: তার মানে বলছেন, টলিউডে কাস্টিং কাউচ আছে?
আছে তো! নিজের চোখেই তো দেখলাম। আমার একটাই স্বস্তির জায়গা, ‘ছদ্মবেশী’র দলের সেই খারাপ মানুষগুলো নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আমাকে নিজেরাই মেসেজে সে কথা জানিয়েছেন। আমার বদলে অন্য অভিনেত্রীকে দিয়ে ওঁরা আমার চরিত্রটা করিয়েছিলেন। কিন্তু ধারাবাহিক সফল হয়নি।
প্রশ্ন: আর এখন?
এখন সবটা পাল্টে গিয়েছে। এই অভিজ্ঞতাটা মানসিক ভাবে আমায় অনেকটা শক্ত করেছে। এখন আর কাউকে ভয় পাই না, কাঁদিও না। স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করে বলি। তবে হ্যাঁ, এখন যে প্রযোজনা সংস্থায় যাঁদের সঙ্গে কাজ করি, তাঁরা সবাই একেবারে অন্য রকম। এখানে প্রত্যেককে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়। একটা সুস্থ পরিবেশে কাজ করি।
প্রশ্ন: ‘ছদ্মবেশী’র পরে ‘খড়কুটো’। রাজা গোস্বামীই কি আপনার পর্দার বর হয়ে গেলেন?
(হা হা হাসি) তা বটে! ‘ছদ্মবেশী’র সময়ে কিন্তু আমি রাজাদাকে দারুণ ভয় পেতাম। কী গম্ভীর হয়ে কথা বলত, বাপরে বাপ! ‘ভালবাসা ডটকম’ দেখে আমি রাজাদার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে নিজে অভিনয় করছি ভেবেই ভয় লাগত! তার পরে আবার ‘খড়কুটো’র সেটে দেখা। দেখি মানুষটাই পাল্টে গিয়েছে! মজা করছে সারা ক্ষণ, এর-ওর পিছনে লাগছে! আমার সঙ্গেও এখন একদম সহজ হয়ে গিয়েছে। ওই যেমন পর্দায় দেখেন, এক্কেবারে ও রকম।
প্রশ্ন: আপনারা নাকি ‘খড়কুটো’র সেটে ভীষণ মজা করেন?
করি তো! সবাই মিলে কত আড্ডা, হইচই! আর সেটে আমি, তৃণা, সোনাল একসঙ্গে মানেই চলো, রিল বানাও আর পোস্ট করো! সাজগোজ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু শটের দেরি? ব্যস! রিল শ্যুট শুরু! এখন তো নাচের স্টেপ বা অন্য কিছুর জন্য রিহার্সালও দিতে হয় না। কী করে যেন এক্কেবারে এক হয়ে যায়! আমাদের এই ‘উঠল বাই তো রিল বানাই’-এ তিন জনকে দেখে দেখে সবার এমন অভ্যাসও হয়ে গিয়েছে! এক জন না থাকলেই লোকে জিজ্ঞেস করে, ওকে দেখছি না? ‘গুনগুন-চিনি-সাজি’র রিল কিন্তু এখন ইনস্টাগ্রামেও বেশ জনপ্রিয়।
প্রশ্ন: আপনি তো একা একাও অনেক রিল বানান। শ্যুট করে কে?
বেশির ভাগই আমার মা! আমার এই রিলের নেশার কল্যাণে মা ভিডিয়োগ্রাফিতে হাত পাকিয়ে ফেলছে রীতিমতো! সত্যি বলতে কি এই রিল আর ছবি পোস্ট করেই আমার ইনস্টাগ্রামে থাকা হয় খুব। বরং ফেসবুকে থাকা হয় না। ওই মাঝে-সাঝে এক-আধটা ছবি দিই। আর হোয়্যাটসঅ্যাপটাও কেন যেন দেখা হয় না বেশি!
প্রশ্ন: আর টুইটার? সেখানে আপনি নেই?
নাঃ, এখনও নেই। তবে ভাবছি টুইটারে একটা অ্যাকাউন্ট শিগগিরই খুলতে হবে। সবাই সব কিছুতে মতামত জানায় আজকাল, আমিও দেব। এমনিতেই বাড়িতে মা-বাবা-দাদা বলে, আমার নাকি সব ব্যাপারে কিছু না কিছু মতামত থাকেই! (হাসি)
প্রশ্ন: বাড়িতে সবাই এ রকম পিছনে লাগে বুঝি?
ও বাবা, লাগে না আবার! মা তো বাড়িতে থাকলে সারা ক্ষণ জিজ্ঞেস করে, “কীরে তোর শ্যুটিং নেই? সারা দিন জ্বালাবি?” বাবা-দাদাও ও রকমই। এমনকি আমার কুকুরটাও! বাড়ি ফিরলে আমার পায়ে পায়ে ঘুরে সোজা এসি-র কাছে নিয়ে যায়। ভাবটা এমন, যে এ বার ঘরের এসিটা চালাও, ধন্য হই! সবাই যাকে বলে শত্রু! ঘোর শত্রু! (হাসি)
প্রশ্ন: আর আপনি নিজে ‘মোহর’-এর সেটে সোনামনির শত্রু?
মোটেই না! পর্দায় দিয়া-ময়ূরী মোহরের চরম শত্রু। বাস্তবে কিন্তু আমি আর সোনা খুব বন্ধু। ‘বিরিয়ানি-বাডি’! আর যে যা-ই খাক, আমরা বিরিয়ানি খাবই, যখন-তখন! এখন অবশ্য স-অ-ব বারণ! বিরিয়ানি খেতে হলে শুধু রবিবার। কী যে কষ্ট! বিরিয়ানি ছাড়া যায়? বলুন?
প্রশ্ন: বিরিয়ানি-প্রেম তো বুঝলাম, মানুষী-প্রেম?
আছে তো! বলব কেন? আমি ভীষণ প্রেমময় একটা মানুষ। আমার জীবনে সব সময়েই ভালবাসা থাকে। এখনও আছে কিন্তু। ঠিক সময়ে আমি নিজেই ঘোষণা করে জানাব।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিরই কেউ? সেটা বলা যাবে?
এইটুকু বলতে পারি, আমি বিশ্বাস করি, যে যে পেশায় আছেন, প্রেমটাও সেখানেই হওয়া ভাল। বাকিটা ক্রমশ প্রকাশ্য! (হাসি)
প্রশ্ন: আগামীর কোনও পরিকল্পনা আছে? ধরুন পাঁচ বছর পরের?
ধারাবাহিক, ছবি, ওটিটি মিলিয়ে একটা জমজমাট কেরিয়ার। বিয়ে করে একটা সুখী সংসার। মানুষ হিসেবে ভাল হয়ে কাটাতে পারা। ব্যস!
প্রশ্ন: টলিউডের অনেকেই রাজনীতিতে যান। সে রকম ভাবনা নেই?
আমি তো সোজা কথা সোজা করে বলার মানুষ। পারব কি না কে জানে! তবে রাজনীতি জিনিসটায় আমার আগ্রহ আছে খুব। ভাল লাগে খবর রাখতে।
প্রশ্ন: আর বলিউডে যাবেন না?
ওমা, ডাকলে যাব না কেন? ঐশ্বর্যা রাইয়ের আমি ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ ভক্ত! আগে ডাকুক কেউ। তার আগে এখানে ছবি বা ওটিটিতে অভিনয়ের ডাক আসুক। জমিয়ে কাজ করি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy