সাংসদের মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিনোদন দুনিয়ার তারকারা।
সাংবাদিকদের সম্পর্কে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের কটাক্ষ নিয়ে ক্ষোভ ক্রমশ দানা বাঁধছে। মহুয়া পরে তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেও নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একচুলও সরেননি। সাংসদের এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিনোদন দুনিয়ার তারকারাও, যাঁদের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের নিত্য ওঠাবসা। মুখ খুলেছেন মহুয়া মৈত্রেরই দলের দুই সাংসদ তথা অভিনেতা নুসরত জাহান ও মিমি চক্রবর্তীরা। এই মন্তব্যের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন শ্রীলেখা মিত্র, কৌশিক সেন, ঊষসী চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ, দেবলীনা দত্তরাও।
রবিবার নদিয়ার গয়েশপুরে দলীয় কর্মীদের বৈঠকে উপস্থিত সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে সাংসদ মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় ওঠে। মহুয়াকে একটি ভিডিয়োয় বলতে শোনা যায়, ‘দু’পয়সার প্রেস’। আনন্দবাজার ডিজিটাল অবশ্য ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি।
মহুয়া মৈত্রের এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান। মহুয়ার মন্তব্যকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের শক্ত স্তম্ভ। ঝড়, বৃষ্টি, কোভিড, সমস্ত মাথায় নিয়ে আমাদের বাংলার সাংবাদিক বন্ধুরা সব ধরনের খবর পৌঁছে দিয়েছেন। এখনও দিচ্ছেন। কাউকে কোনও ভাবে ছোট করা একদমই উচিত নয়।’’
সাংসদ নুসরত জাহানের সুর যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তীর গলাতেও। তাঁর কথায়: ‘‘প্রেস বা সংবাদমাধ্যম শুধুই খবর আদানপ্রদান করে না। এমন অনেক খবর পরিবেশন করে যা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।’’ মিমির বক্তব্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে প্রকৃত খবর জানানোর দায়িত্ব পালন করে আসছে সংবাদমাধ্যম। যে সব জায়গায় সাধারণ মানুষ পৌঁছতে পারেন না, সেখানেও পৌঁছে যান সাংবাদিকেরা। একই সঙ্গে মিমি বলেন, তাঁর কেরিয়ার গড়ার নেপথ্য কারিগর হিসেবে প্রেসের ভূমিকা এবং অবদান অনেকখানি।
সাংসদ মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন
বামমনস্ক হিসেবে পরিচিত, মঞ্চ এবং পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা কৌশিক সেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাঁর দাবি, ‘‘নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে বহু সমস্যা। নানা ক্ষোভ-বিক্ষোভ, জোট ভেঙে যাওয়া। ভোটের আগের চেনা ছবি। এ সব নিয়েই সম্ভবত মহুয়া মৈত্র বিব্রত, চিন্তিত। যার চাপে সাময়িক মেজাজ হারিয়ে সাংগঠনিক সভায় ওই ধরনের মন্তব্য করে ফেলেছেন।’’
একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, সেলিব্রিটি মাত্রেই জনপ্রতিনিধি। ফলে, যা মুখে আসবে সেটাই বলা উচিত নয়। কারণ, তাঁরা যা বলেন, যে ভাবে বলেন সেটাই সাধারণ মানুষ শোনেন। ফলে, সব সময়েই তাঁদের পরিশীলিত থাকা উচিত। উদাহরণ হিসেবে কৌশিক নিজের কথাও বলেন, ‘‘আমাদেরও অনেক সময়েই ইচ্ছে করে না সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে। তার মানে এই নয় যে সরাসরি তাঁদের আঘাত করতে হবে!’’ তবে কৃষ্ণনগরের সাংসদের ধারালো বক্তৃতারও প্রশংসা করে কৌশিক বলেন, ‘‘যিনি অকাট্য যুক্তিতে বিরোধী পক্ষকে বিঁধতে পারেন তাঁর থেকে আরও দায়িত্বপূর্ণ আচরণ আশা করি।’’
আবার শ্রীলেখা মিত্র মনে করেন, মহুয়া ‘বিলো দ্য বেল্ট’ আঘাত করলেন। সাংসদ মহুয়া মৈত্র সাংবাদিকদের সম্পর্কে কটূক্তির পরে শ্রীলেখা ‘দু’পয়সার সাংবাদিক’দের পাশে। ওই বিশেষ তকমা নিয়ে আপত্তি তাঁরও, ‘‘এ ভাবে দু’পয়সা শব্দটা উচ্চারণ বেশ অসম্মানেরই। সাংসদ যেন অযথা ‘বিলো দ্য বেল্ট’ আঘাত করলেন সংবাদমাধ্যমকে। এটা ওঁর থেকে আশা করিনি।’’ অভিনেত্রীর আরও বক্তব্য, ওঁর কাউকে অপছন্দ হতেই পারে। কিছু প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকেরা হয়তো বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। মহুয়ার যাঁকে অপছন্দ তাঁকে ডেকে সরাসরি বলতেই পারেন। এক পেশার সবাইকে এ ভাবে আঘাত করলেন কেন! নিজের বক্তব্যে অনড় থাকাটাও ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘ভুল না করলে ‘সরি’ বলার প্রশ্নই নেই। ‘সরি’ বলতে গেলে মেনে নিতে হবে আমি ভুল বলেছি বা করেছি।’’ একই সঙ্গে শ্রীলেখা এ-ও মনে করিয়ে দেন, সব সাংবাদিক কিন্তু বিক্রি হয়ে যাননি। এখনও বহু জন নিরপেক্ষ সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী। এ ভাবে কোনও পেশাকে তকমা দিয়ে দেওয়া মানে সবাইকে ‘ঝাঁকের কই’ বানিয়ে ফেলা!
একটি পেশার সবাইকে এ ভাবে দেগে দেওয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন অভিনেতা ঊষসী চক্রবর্তীও। তাঁর আরও একটি পরিচয়, এক সময় তিনিও সাংবাদিক ছিলেন। সামনে থেকে দেখেছেন জীবনের ওঠা-পড়া। বহু চরাই-উৎরাই পেরিয়ে আসা অভিনেত্রীর কী মত?
সাংবাদিকদের সম্পর্কে মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যকে মেনে নিতে পারছেন না ঊষসী, দেবলীনা এবং শ্রীলেখাও
এক কথায় ঊষসী সমর্থন জানিয়েছেন সাংবাদিকদের, ‘‘আমাদের পেশায় মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যম ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তা ছাড়া, আমি নিজেও সাংবাদিক ছিলাম। সব পেশাতেই ভাল-খারাপ লোক থাকে। অনেকেরই অনেককে পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে একটা পেশার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে এই ভাবে দেগে দেওয়াটা ঠিক নয়।’’
‘সরি’ বললে মানুষ ছোট হয় না...
এমনটাই মত অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের। অতি সম্প্রতি তিনি পর পর দুটো পোস্ট করেছেন। প্রথমটিতে অন্যদের মতোই আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। নিজের সামাজিক পাতায় লিখেছেন, ‘‘সরি’ বললে মানুষ ছোট হয় না... বড় হয়।’’ মহুয়া যদিও পরে তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একচুলও না সরে। এখানেই আপত্তি অভিনেতার। তার বহিঃপ্রকাশ রুদ্রনীলের পোস্টে।
দ্বিতীয় পোস্টে কী বলেছেন রুদ্রনীল? কাব্যিক ছন্দে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন, ‘অহঙ্কারের রোদচশমায় আঁধার হলেও দেশ, সবার কাছে ভরসা আজও দু’পয়সার প্রেস।’
রুদ্রনীল ঘোষ এবং কৌশিক সেন সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন
দু’পয়সার রিকশাওয়ালা, এটাও কিন্তু বলতে পারি না...
মত প্রকাশ করতে গিয়ে সবার প্রথমে দেবলীনা দত্ত বললেন রুচিবোধের কথা, ‘‘দু’পয়সায় কোনও কিছুকে দাগিয়ে দেওয়া মানে নিজের রুচিবোধকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া। আমি কথাটা শুনেই মহুয়ার রুচিবোধ নিয়ে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছি। রিকশাওয়ালা, ঠ্যালাওয়ালা, যৌনকর্মীকেও আমি ‘দু’পয়সা’র বলতে পারি না। তা হলে আমার ‘দু’পয়সার মানসিকতা’ই সামনে চলে আসে।’’
আরও পড়ুন: মার্কিন মুলুক থেকে কৃষক আন্দোলন নিয়ে টুইটের জন্য ট্রোলের মুখে প্রিয়ঙ্কা
এর পরেই দেবলীনা অকপটে স্বীকার করেন, সাংবাদিক এবং বিনোদন দুনিয়া এক মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ। একে অন্যের পরিপূরক। অভিনেতাদের কাজ, জীবনের নানা দিক ছাড়া যেমন সাংবাদিকেরা অচল, তেমনই অভিনেতারা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে। সাংবাদিকদের ‘খাটো’ করলে তাই বিনোদন দুনিয়ারও গায়ে লাগে। একই ভাবে তাঁর যুক্তি, ‘‘কোনও সাংবাদিক আমাদের সম্বন্ধে এই ধরনের মন্তব্য করলে একই আলোড়ন উঠবে সামাজিক পাতায়। কারণ, এটি সভ্য মানুষের রুচি-সংস্কৃতির পরিপন্থী।’’
আরও পড়ুন: দিব্যাকে শারীরিক নির্যাতন করত গগন, অভিনেত্রীর স্বামীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক তাঁর ভাই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy