Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Bikram Chatterjee

মানুষের কাছে সময় মতো অক্সিজেন পৌঁছতে না পারলে অভিনেতা হয়ে কী করলাম: বিক্রম

গভীর রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবি, কী করতে পারছে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়?

অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

বিক্রম চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২১ ১১:২৯
Share: Save:

খুব ভয় করছে আমার। জানি না এ বছর করোনা যে ভাবে আছড়ে পড়েছে আমাদের দেশে, এই ভয়াবহতা তো আগে দেখিনি। না, আগের বছরও কাজ ছিল না। লকডাউন ছিল। মানুষের ক্ষতি হয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে শব ভেসে যাওয়া ভারতবর্ষে আগে দেখিনি।

কত মানুষ রাত জেগে আছেন। জেগে জেগে হন্যে হয়ে হাসপাতালে শয্যা আর অক্সিজেন সিলিন্ডার খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রাণ বাঁচানোর প্রতিজ্ঞায়। মানুষ আজ মানুষের পাশে। রাত গুলো বড্ড ভয়াবহ। এই বুঝি কোনও খবর আসবে।

সে দিন রাতের ওই ফোনটা...

অক্সিজেন দরকার। নয়তো সেই রোগীকে বাঁচানো যাবে না। অক্সিজেন এখনই দরকার। এই মুহূর্তে দরকার। আমার যেখানে যা যোগাযোগ সব জায়গায় অক্সিজেনের জন্য খুঁজতে থাকি। এই কাজের জন্য আমাদের বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে, সেখানে বলি। আমার ইন্ডাস্ট্রির চেনা জানা সকলের কাছে খোঁজ নিতে থাকি। এই খোঁজ নিতে নিতে ওই ব্যক্তির বেঁচে থাকার সময় ফুরোতে থাকে। ৩ ঘন্টা পরে যখন অক্সিজেন সিলিন্ডার পাই তখন তিনি শেষ!

মনে হয়েছিল এটুকুও পারলাম না? কী করছি আমরা? আমাদের ব্র্যান্ডেড গাড়ি, বাড়ি, কিছু হয়ে ওঠার লড়াই, সব এই মৃত্যুর সামনে নস্যাৎ। মনে হয়েছিল, একটা মানুষকে ঠিক সময় পরিষেবা দিয়ে যদি বাঁচাতেই না পারলাম অভিনেতা হয়েই বা কী হবে? খুব ভেঙে পড়েছিলাম।

কিন্তু পরের দিন সকাল হল। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বললাম। ভাবলাম এ তো শুধু এক জনের সিলিন্ডার জোগান দেওয়ার বিষয় নয়। সকাল থেকে আমার ইনস্টাগ্রামে যে মেসেজগুলো জমা হয়েছে সেগুলোর জন্য তো আবার চেষ্টা করতে হবে। ফের শুরু। এ সময় ভেঙে পড়ার নয়। মনের চাপ এলেও তাকে সরিয়ে রাখতে হবে। কারও ওষুধ, কারও জন্য আবার আইসিইউ বেড... এ তো অন্তহীন মৃত্যু আর প্রাণের লড়াই।

এই কাজ একা করা যায় না। আমার ছোটবেলার বন্ধু অঙ্কন আর অভিনব আমার সঙ্গে আছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বহু মানুষ এখন রাস্তায়। সৃজিতদা, অনিন্দিতা সারাক্ষণ কোভিড যুদ্ধে জেতার তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমি কোথাও আটকে গেলে ওদের কাছ থেকে সাহায্য নিচ্ছি।

শ্যুটিংয়ের সময় অবশ্য আমি আটকে পড়ছি। ভয়ে ভয়ে কাজে যাচ্ছি। ‘ডান্স বাংলা ডান্স’-এর শ্যুটিং চলছে। কাজ তো করতেই হবে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে মনে হয় কেন যাচ্ছি? শ্যুটিং বন্ধ রাখা উচিত। কিন্ত কাজ করতে গিয়ে যখন ইন্ডাস্ট্রির সবার সঙ্গে মিশছি, কথা বলছি, দেখছি তাঁদের সংসার চলে রোজের টাকায়। তখন মনে হয় শ্যুটিং বন্ধ করাটা কোনও ভাবেই যাবে না। সব সময় একটা দোটানা কাজ করে। এ ভাবেই দিন চলছে। চিনতে পারি না আমার দেশকে, চারদিক ধূসর।

মায়ের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল। এখন মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে পারি। আগে যা একেবারেই হতো না। মা বলছিল, এই যে কাজের পিছনে আমাদের ছুটে চলা... এক জীবনে অনেক কিছু করে দেখানোর সাধ! আজ কত অর্থহীন মনে হয়। খুব জুতোর শখ ছিল আমার। গত দেড় বছরে জুতো তো দূরে থাক কিচ্ছু কিনিনি আমি। সকলে বেঁচে থাকি, সুস্থ থাকি, এর বেশি আর কিছু চাওয়ার নেই আমাদের। আমার এত পোশাকের দিকে এখন তাকিয়ে থাকি, ভাবি কী হবে এ সবের? এই তো সে দিন মুম্বইয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হল, ওর কোভিড হয়েছে। তবে বাড়িতেই আছে। ঠিক আছে। ওমা! তার দিন কয়েক পরেই শুনলাম, সে হাসপাতালে। হাসপাতালেই নয়, একেবারে ভেন্টিলেশনে। চিকিৎসক কিছু বলতে পারছেন না। এমন কত হচ্ছে! কাছের মানুষের চলে যাওয়ার খবর পেতে পেতে ক্লান্ত আমি।

শক্ত থেকে লড়াই করতে হবে। কত মানুষ যুদ্ধ জয় করে ফিরছেন। সেগুলো দেখে মনের জোর বাড়াতে হবে।

তবুও গভীর রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবি, কী করতে পারছে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE