শ্রীলেখা মিত্র।
একটি ভিডিয়ো, আর তাতেই টলিপাড়ায় ঝড় তুলেছেন শ্রীলেখা মিত্র। টলিউডের একাধিক তারকার নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।সেই ভিডিয়ো ঘিরে আপাতত তর্ক-বিতর্ক, লাইক-শেয়ারের বন্যা চলছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। এ সবের মধ্যেই শুক্রবার শ্রীলেখা বলছেন, তাঁর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, হারানোর কিছু নেই তাঁর।
বৃহস্পতিবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে টলিপাড়ার স্বজনপোষণের ইতিহাস নিয়ে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন অভিনেত্রী নেটাগরিকরা বলছেন, ভিডিয়ো নয়, বোমা ফাটিয়েছেন শ্রীলেখা। তাঁর সেই ভিডিয়ো প্রসঙ্গে এ দিন শ্রীলেখা বলেন, ‘‘জীবনে কোনওদিন কোনও রাজনৈতিক দল করিনি।কোনও দাদাকে মঞ্চে উঠে রাখিও পরাইনি।প্রযোজক-পরিচালকের সঙ্গে বেড শেয়ারও করিনি। আমি ভয় পাব কাকে? কী হারানোর আছে আমার?”
সুশান্তের অবসাদ, কাজ হারানোর যন্ত্রণা, বহিরাগত হয়েও নিজেকে প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা এবং নিজের কেরিয়ায়ের প্রথম দিকের কিছু ঘটনাকে একই পঙ্ক্তিতে বসিয়ে শ্রীলেখা ওই ভিডিয়োতে বলেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কোনও গডফাদার ছিল না। কিছুর বিনিময়ে ছবি পাইয়ে দেওয়ারও কেউ ছিল না। সিরিয়াল থেকে ওড়িয়া ছবি। সেখান থেকে বাংলা ছবি... নায়িকার চরিত্র পেতাম না প্রথম দিকে। তখন ইন্ডাস্ট্রি মানেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। আমি তাঁর বোনের চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি জানি আমার নায়িকা হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু ওই যে আমার কোনও গডফাদার নেই। আমার কোনও অভিনেতার সঙ্গে প্রেমও নেই। তখন ঋতুপর্ণার সঙ্গে প্রসেনজিৎ-এর প্রেম।” এখানেই থামেননি তিনি, বলতে থাকেন, “বুম্বাদাই চালাত টলিউডকে। পরিচালকরা ওঁর পায়ের কাছে বসে থাকত। ঋতু দেরি করে শুটিং ফ্লোরে আসত। সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করত। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওকে পরের পর ছবিতে নেওয়া হত। অন্য দিকে আমাদের প্রমাণ করতে হত আমরা টাইমে আসি।”
ইন্ডাস্ট্রির বেশিরভাগ অভিনেতাই মুখে কুলুপ এঁটেছেন এ প্রসঙ্গে। শ্রীলেখার পাশে দাঁড়াননি কেউই। সে প্রসঙ্গে অভিনেত্রী এ দিন বলেন, “আরে আমার হয়ে কথা বললে তো অন্য লোকজন চটে যাবে। তাঁরা কেন চটাবে? আড়ালে-আবডালে বলছে ঠিক। ওঁদেরও কাজ চলে যাওয়ার ভয় রয়েছে। শাশ্বত বলছিলেন, ইন্ডাস্ট্রি নাকি একটা পরিবার। আমার বাপের জন্মেও এসব মনে হয়নি। কিসের পরিবার? কার পরিবার? আমার কিচ্ছু হারানোর নেই। কোনওদিনও গায়ে ঢলতে পারলাম না কারও। যাকে পছন্দ না সে আমার গায়ে হাত দিয়ে কথা বলবে, আমি তাঁর দিকে হেসে হেসে কথা বলব... এ সব হল না জীবনে।”
শুধু প্রসেনজিৎ বা ঋতুপর্ণাই নন, শ্রীলেখার ওই ভিডিয়োতে এসেছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় -সহ অনেক নামীদামি অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজকদের প্রসঙ্গ।তাঁর কথায়, “সাগর বন্যা ছবির শুটিংয়ে আমরা দিঘা যাচ্ছিলাম। ওই ছবিতে ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রানী হালদার। আমাদের একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়। আমি দিঘা হাসপাতালে ভর্তি হই। পরিচালক দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় দেখতে আসার সময় পাননি।”
ঠিক ওই সময়ই অশোক ধানুকার প্রযোজনা এবং বাংলাদেশের এক প্রযোজক সংস্থার সহ-প্রযোজনায় শ্রীলেখার আরও একটি ছবি করার কথা ছিল কিন্তু তিনি আহত হওয়ায় সে ছবি তাঁর আর করা হয়ে ওঠেনি। হরলিক্সের শিশি নিয়ে হাসপাতালে শ্রীলেখাকে দেখতে গিয়েছিলেন অশোক ধানুকা। ছবিটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেত্রী। ধানুকা কথা দিয়েছিলেন, একার প্রযোজনায় ছবি করলে শ্রীলেখাকেই নায়িকার চরিত্রে নেবেন। পরবর্তীকালে অশোক ধানুকার ‘অন্নদাতা’ ছবিতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্রীলেখা। সে ছবি হিটও হয়েছিল। তবে সেখানেও নাকি বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল তাঁকে। শ্রীলেখার অভিযোগ, ‘‘শুটিং শুরুর কয়েক দিন আগে অশোক ধানুকা ফোন করে জানান, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আমার সঙ্গে ছবি করতে চান না। যেহেতু সেই সময় চুটিয়ে ধারাববাহিকে কাজ করছি, তাই বুম্বাদা মনে করেছিলেন শ্রীলেখা বড় পর্দার নায়িকা হলে কেউ টাকা দিয়ে সিনেমা হলে যাবেন না।’’ শ্রীলেখা এ-ও বলেন,‘‘পরে যদিও অশোক ধানুকা এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নিজেই ফোন করে জানান, অন্নদাতা ছবিতে শ্রীলেখাই কাজ করছেন।’’ শ্রীলেখার এই অভিযোগ প্রসঙ্গে অশোক ধানুকা বলেছেন, এ সব তাঁর মনে নেই, অনেকদিন আগের ব্যাপার।
আরও পড়ুন- ‘আজ সুশান্ত, কাল সঙ্গীত জগৎ থেকেও এরকম খবর আসতে পারে’, বিস্ফোরক সোনু নিগম
এত দিন পর হঠাৎ আবার এ সব নিয়ে মুখ খুললেন কেন? শ্রীলেখা বললেন, “আমার সঙ্গে যাঁদের কথা হয়, তাঁরা জানেন, এ আমি আগেও বলেছি। আর সুশান্তের মৃত্যুও আর একটা কারণ। অবসাদের মধ্যে দিয়ে আমিও গিয়েছি। দিনের পর দিন ভাল কাজ পাইনি। যোগ্য হওয়া স্বত্বেও। নামী দামি প্রযোজনা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঢলাঢলি আর প্রভাবশালী নায়কদের গায়ে গা ঠেকিয়ে নাবসতে পারার জন্য। তা নিয়ে যদিও আমার কোনও আপসোস নেই। আমি জানি আমি কতটা যোগ্য ছিলাম।’’
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে শ্রীলেখা বলছেন, “ওঁর ছবিতে তো শুধু চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় কাজ করবেন তা নিজেই কৌশিকদা আমায় বলেছিলেন। জয়া আহসান বোধহয় খুব ভাল অভিনেত্রী। তাই জয়া আহসান তাঁর ছবিতে কাজ পান। আমি পাইনি।’’
সৃজিত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, “সৃজিত একসময় আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল। কিন্তু যখন ছবি করল, তখন আর আমাকে ডাকেনি। হয়তো আমার মতো কোনও চরিত্র ছিল না। স্বস্তিকার মতনই চরিত্রগুলো ছিল। আসলে স্বস্তিকার সঙ্গে সৃজিতের তখন একটা প্রেম চলছিল।” শ্রীলেখার ভিডিয়োতে উঠে এসেছে অঞ্জনা বসু এবং গার্গী রায়চৌধুরীর নামও। তিনি বলেন, "ধারাবাহিক চলার সময় ওঁদের সঙ্গে প্রযোজকের প্রেম হয়েছিল বলে আমার সিরিয়ালের অংশ অনেক কমে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন- লকডাউনে একসঙ্গে ছিলেন, ঝগড়া হতে বেরিয়ে আসেন, পুলিশকে জানালেন রিয়া
নামীদামিদের বিরুদ্ধে মুখ খুলে তিনি যে ভুল কিছু করেননি, সে কথা এ দিন জোর দিয়ে বলছেন শ্রীলেখা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি জানি এ বার থেকে আমি আরও কোণঠাসা হয়ে যাব। জানি না আর কাজ পাব কি না!বা পেলেও কতটা পাব। তবে হ্যাঁ, একটা কথা আমি বলতে চাই, আমি শ্রীলেখা মিত্র নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে এই ভিডিয়ো আপলোড করেছি, কারও কাছে কাঁদুনি গাইনি। যা করেছি বেশ করেছি। যা বলেছি, ভাল করেছি। সত্যিটা প্রকাশ পাওয়ার দরকার ছিল। এই গ্ল্যামার জগতে আউটসাইডারহয়ে একই সঙ্গে কম্প্রোমাইজ না করে কাজ করা যে কতটা কঠিন তা জানুক সবাই, দেখুক লোকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy