Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

হাসি ভুলে কোন বিষণ্ণতায় ‘আত্মঘাতী’ রবিন উইলিয়ামস

প্রথমে হাসিয়েছিলেন নিজের দেশকে। তার পর অক্লেশে ছুঁয়ে গিয়েছিলেন গোটা পৃথিবীর ছোট থেকে আরও ছোট প্রান্ত। আর হাসাবেন না তিনি। আর কাঁদাবেন না তিনি। সদাহাস্যমুখ হলিউড অভিনেতাকে কুরে কুরে খেয়েছিল এমন তীব্র অবসাদ যে অনেক কাজ বাকি রেখে, সবাইকে চমকে, হতাশ করে ৬৩ বছর বয়সে চলে গেলেন আদরের ‘মিসেস ডাউটফায়ার’।

সংবাদ সংস্থা
সান ফ্রান্সিসকো শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

প্রথমে হাসিয়েছিলেন নিজের দেশকে। তার পর অক্লেশে ছুঁয়ে গিয়েছিলেন গোটা পৃথিবীর ছোট থেকে আরও ছোট প্রান্ত।

আর হাসাবেন না তিনি। আর কাঁদাবেন না তিনি। সদাহাস্যমুখ হলিউড অভিনেতাকে কুরে কুরে খেয়েছিল এমন তীব্র অবসাদ যে অনেক কাজ বাকি রেখে, সবাইকে চমকে, হতাশ করে ৬৩ বছর বয়সে চলে গেলেন আদরের ‘মিসেস ডাউটফায়ার’।

সোমবার সান ফ্রান্সিসকোর উত্তরে ছোট্ট শহর টাইবুরনে নিজের বাড়িতে অচেতন অবস্থায় চিকিৎসকরা উদ্ধার করেন মার্কিন কৌতুকাভিনেতা রবিন উইলিয়ামসকে। পুলিশের দাবি, দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। আপাত ভাবে মনে করা হচ্ছে আত্মঘাতী হয়েছেন রবিন। প্রাথমিক ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে, গলায় ফাঁস লেগে শ্বাসরোধ হয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে মাত্র দু’সপ্তাহ আগে মেয়ের সঙ্গে ছবি পোস্ট করেছিলেন রবিন। সদ্য ২৫ ছোঁয়া মেয়ে জেল্ডা রায়ে উইলিয়ামসকে বলেছিলেন, ‘হ্যাপি বার্থডে টু মিস জেল্ডা রায়ে উইলিয়ামস! ২৫-এ পা দিয়েও তুই আমার ছোট্ট মেয়ে!” খুব দুঃখ পেয়ে সেই মেয়ে আজ টুইটারে পোস্ট করেছেন এক ফরাসি কবির উদ্ধৃতি “তোমার কাছে... শুধু তোমার কাছেই তারাগুলো থাকবে। আর কারও কাছে নয়। আর সেই তারাদের মধ্যে একটিতে থাকব আমি। একটিতে হাসব আমি। আর রাতে যখন তুমি আকাশের দিকে তাকাবে, মনে হবে সব তারা যেন হাসছে... তোমার কাছে... শুধু তোমার কাছে থাকবে সেই তারারা, যারা হাসতে জানে।” জেল্ডার সংযোজন, “তোমায় খুব ভালবাসি। তোমায় মিস করব। চেষ্টা করব উপরের দিকে চেয়ে থাকতে।”

রবিনের প্রচার-মুখপাত্র মারা বাক্সবাউম জানিয়েছেন, ভয়ঙ্কর অবসাদে ভুগছিলেন উইলিয়ামস। একের পর একের পর সফল ছবি যাঁর ঝুলিতে, যাঁর কথায় প্রাণ খুঁজে পেত হাজার মানুষ, তাঁর কেন এত বিষাদ? যে সময় থেকে মার্কিন টেলিসিরিয়াল ‘মর্ক অ্যান্ড মাইন্ডি’-র (১৯৭৮) ভিন গ্রহের জীব সেজে চড়চড়িয়ে জনপ্রিয়তার শিখর ছুঁচ্ছেন রবিন, ঠিক তখন থেকেই কোকেনের সঙ্গে সহবাস শুরু হয়েছিল তাঁর। সে কথা প্রকাশ্যে বলতে দ্বিধা ছিল না। কোকেনকে বলতেন, ‘পেরুভিয়ান মার্চিং পাউডার।’ কখনও বলতেন, ‘ডেভিলস ড্যানড্রাফ।’ ’৭০-’৮০-র দশকে কৌতুক করতে করতে সগর্বে ঘোষণা করেন ‘কোকেন অসাধারণ মাদক! আমায় শান্ত করে।’ শুধু মাদক নয়, মদের নেশা ছাড়তেও পুনর্বাসন কেন্দ্রের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি। এ বছরের গোড়াতেও তেমনই একটি কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। কিন্তু মাদক তাঁকে ছাড়েনি।

’৯০-এর দশকে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মৃত্যু এবং ছেলের জন্মের পরে মাদক ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রবিন। কিন্তু ২০০৬ থেকে আবার ফিরে গিয়েছিলেন মারণ নেশায়। মিনেসোটার একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে গত মাসেও কয়েক সপ্তাহ কাটাতে হয় তাঁকে। সাফল্যের সঙ্গেই নেশাতুর হওয়ার সরল সমীকরণে কি আটকে গিয়েছিলেন এই প্রতিভাও? এক সাক্ষাৎকারে রবিন বলেছিলেন, কোনও বিশেষ কারণে তিনি মাদক গ্রহণ করেন না। নেশা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, “সে যেন অপেক্ষা করে। তুমি আবার কবে ওকে নিয়ে ভাববে সেই সময়টার জন্য ওত পেতে অপেক্ষা করে সে।”

‘ডেড পোয়েটস সোসাইটি’-তে ছাত্রদের ক্রমাগত অনুপ্রেরণা দিয়ে গেলেও পৃষ্ঠপোষক রবিন নিজেকে কেন বারবার শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবতেন? তিনি বলতেন, “আমার মনে হতো একা একা জীবন শেষ হয়ে যাওয়া সব চেয়ে খারাপ। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। তোমার পাশে থাকা মানুষজন যখন তোমায় একা করে দেয়, তার চেয়ে খারাপ কিছু হয় না।”

তেমন শূন্যতাই কি গ্রাস করেছিল কৌতুকাভিনেতাকে? মিসেস ডাউটফায়ার-এর দ্বিতীয় পর্ব হওয়ার কথা ছিল এ বছরেই। ন্যানি সেজে বিবাহবিচ্ছিন্ন বাবার সন্তানদের কাছে ছুটে যাওয়ার আরও একটা গল্পে রবিনকে দেখার সুযোগ দেখে বঞ্চিত হলেন দর্শকরা। যে ছবির অনুপ্রেরণায় বলিউডেও তৈরি হয়েছিল ‘চাচি ৪২০।’ যে ছবির অভিনেতা কমল হাসনের প্রতিক্রিয়া, পুরুষও কাঁদে। তাতে তাঁর পৌরুষের হানি হয় না। রবিন অভিনয়ে তা-ই প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন।

যাঁর সাফল্যের শুরু ১৯৮৭ সালের ‘গুড মর্নিং ভিয়েতনাম’ দিয়ে। তার পর এক একে ডেড পোয়েটস সোসাইটি, অ্যাওকেনিংস, দ্য ফিশার কিঙ্গ, হুক, মিসেস ডাউটফায়ার, গুড উইল হান্টিং, প্যাচ অ্যাডামস, ফ্লাবার, বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান, জুমানজি তালিকাটা অনেক দীর্ঘ। তাঁর গলায় প্রাণ পেয়েছে হ্যাপি ফিটের মতো অনেক চরিত্র। অস্কারজয়ী অভিনেতার আকস্মিক বিদায়ে বিবৃতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা “রবিন উইলিয়াম ছিলেন ডাক্তার, ভালমানুষ দৈত্য, ন্যানি, প্রেসিডেন্ট, অধ্যাপক, পিটার প্যান আর এর মাঝে যা আছে সব। কিন্তু উনি ছিলেন ওঁর মতো। ভিন গ্রহের জীবের মতো আমাদের জীবনে উদয় হলেন, ছুঁয়ে গেলেন গোটা জীবনকে। আমাদের হাসালেন, কাঁদালেন। তাঁকে যাঁদের সব চেয়ে দরকার, নিজের অসাধারণ প্রতিভা অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্য তা সে বিদেশে পড়ে থাকা আমাদের সেনা হোক বা রাস্তায় থাকা প্রান্তিক মানুষ।”

১৯৫১ সালের ২১ জুলাই শিকাগোয় জন্ম। জুইলিয়ার্ড স্কুলে অভিনয় শিক্ষা। ‘গুড উইল হান্টিং’-এর জন্য অস্কার জয়ের পরে হাসতে হাসতে বলেছিলেন বাবার কথা। রবিন জানান, “অভিনয় করব শুনে যিনি বলেছিলেন, খুব ভাল। তবে অন্য কোনও পেশাও হাতে রেখো, যেমন ওয়েলন্ডিং!”

রবিনকে হারিয়ে তৃতীয় স্ত্রী সুজান স্নাইডার বলেছেন, “আজ সকালে আমি আমার স্বামী এবং পরম বন্ধুকে হারিয়েছি। আর একজন অসম্ভব ভাল মানুষ এবং জনপ্রিয় শিল্পীকে হারাল গোটা বিশ্ব। ওঁর চলে যাওয়ার পরে একটাই অনুরোধ: রবিনের মৃত্যু নিয়ে নয়, এত মানুষকে হাসি-আনন্দের যে অগণিত মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন তিনি, আলোচনা হোক তা-ই নিয়ে।”

‘হুক’ ছবিতে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। রবিন নেই শুনে যাঁর প্রতিক্রিয়া, “হাস্যকৌতুকে তাঁর প্রতিভা যেন প্রবল ঝড়ের মাঝে বিদ্যুতের ঝলক। আর আমাদের হাসি বজ্রপাতের মতো। যা ওঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। আমার এমন বন্ধু নেই বিশ্বাস করতে পারছি না।”

“তোমার জীবনে খারাপ সময় আসবে। কিন্তু তা আসলে তোমায় ভাল কিছুরই সন্ধান দেবে, যা তুমি এত দিন খেয়ালই করোনি” ‘গুড উইল হান্টিং’-এর সংলাপ কেন ভুলে গেলেন রবিন? কেন ভাল কিছুর জন্য অপেক্ষা করলেন না? প্রশ্নটা তাড়া করছে বিষাদমগ্ন ভক্তকুলকে।

অন্য বিষয়গুলি:

robin williams suicide actor hollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy