Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Diwali Release 2024

ভয়ের চোটে অভিনেতার স্ত্রী ও মেয়ে এখনও দেখেননি! ‘নিকষ ছায়া’র ভয়ঙ্কর পিশাচ ‘গেনু’ আসলে কে?

হাসলে নাকি পিশাচের মতোই শ্বদন্ত ঝিলিক দেয়! রূপটান নিয়ে দাঁড়াতেই তাঁকে দেখে পড়ে গিয়েছিলেন চিত্রগ্রাহক! নিকষ ছায়ার ‘গেনু’ আসলে কেমন?

পল্লব মুখোপাধ্যায় যখন ‘নিকষ ছায়া’র পিশাচ ‘গেনু’।

পল্লব মুখোপাধ্যায় যখন ‘নিকষ ছায়া’র পিশাচ ‘গেনু’। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৮
Share: Save:

নিষ্পলক চোখ। ভ্রু-র বালাই নেই। রূপটানে দু’কান কাটা! সারা শরীরের চামড়া গলে পড়ছে। দাঁত দেখে বোধ করি করাত (কাঠ চেরার যন্ত্র) লজ্জা পাবে! চেহারার বর্ণনাতেই স্পষ্ট, এ-ই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সদ্য মুক্তি পাওয়া সিরিজ় ‘নিকষ ছায়া’র হাড়হিম পিশাচ ‘গেনু’। যাকে সিরিজ়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখে আতঙ্কিত দর্শক। যখন তখন ‘ছায়া’র মতো লাফ দিয়ে সে হাজির হয়েছে। কামড়ে খেয়েছে মানব দেহ।

বাস্তবে কে এই ‘গেনু’? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নে পরিচালক জানান, তিনি মঞ্চাভিনেতা পল্লব মুখোপাধ্যায়।

পল্লব এর আগে আরও দুটো সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন। ‘নিকষ ছায়া’ তাঁর তৃতীয় কাজ। সিরিজ় জুড়ে তিনি পিশাচ। শুনে খুব খুশি না কি বেজায় খারাপ লেগেছিল? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে রসিকতা জুড়লেন অভিনেতা, “কী বলছেন! দারুণ খুশি। হোক পিশাচের চরিত্রে অভিনয়, পরমব্রত আমাকে প্ল্যাটফর্ম দিয়েছেন, পরিচিতি দিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ।” তার পরেই সবিস্তারে জানালেন, মানুষ থেকে পিশাচ হয়ে ওঠার সফর।

মঞ্চাভিনেতা ছাড়াও ‘গেনু’ ওরফে পল্লবের আরও একটি পরিচয় রয়েছে। ২৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন তিনি। “৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে খুব দুঃখ ছিল। ক্লাসে ঢুকলে কে শিক্ষক আর কে ছাত্র— না জানলে অনেকেই গুলিয়ে ফেলবেন। আবার এই উচ্চতার জন্যই আমি ওদের বন্ধু,” বললেন অভিনেতা। আর এই উচ্চতাই তাঁকে দর্শকের দরবারে পৌঁছে দিয়েছে। পরমব্রতের প্রযোজনা অফিস থেকে যে দিন প্রথম অডিশনের জন্য ডাক আসে, বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে ‘গেনু’র রূপটান নিয়ে অভিনয় করেন। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তায় বসে থাকতে হবে। গাড়ি এসে থামলেই লাফ দিয়ে প্রথমে বনেট তার পর গাড়ির ছাদে উঠে পড়তে হবে। নিজের মতো অভিনয় করে ফিরে গিয়েছিলেন পল্লব।

অডিশনের বেশ কিছু দিন পরে অবশেষে অভিনয়ের ডাক। তার পর?

“রোজ তিন ঘণ্টা ধরে রূপটান। নকল দাঁত পরা। চোখে লেন্স। একটা সময়ের পরে কড়কড় করত। রূপটানের আগে ভরপেট খাওয়ানো হত, জানেন। কারণ, পরে তো আর খেতে পারব না,” বক্তব্য তাঁর। লেন্সের কারণে ভাল করে চোখ খুলতে পারতেন না। কাঞ্চন মল্লিক রোজ তাঁর হাত ধরে সেটে নিয়ে যেতেন। “কাঞ্চনদা প্রতি মুহূর্তে সহযোগিতা করেছেন। আর পরমব্রতকে মাঝেমধ্যেই বলতেন, ‘পরম, আমাদের দু’জনকে এক বার রাস্তায় ছেড়ে দিবি? একটু ঘুরে আসি আমরা।’ বলেই হো হো করে হাসতেন”, বলতে বলতে নিজেই হেসে সারা।

রূপটানের পর আপনাকে দেখে কেউ ভয় পাননি? প্রশ্ন শুনে দুটো ঘটনা জানালেন পল্লব। বললেন, “প্রথম দিনের শুটিং। রূপটান নিয়ে মর্গে শট দিতে গিয়েছি। চিত্রগ্রাহকের গা ঘেঁষে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলাম। পিছনে ফিরে হঠাৎ আমায় দেখে ভয়ের চোটে পড়েই গিয়েছিলেন!” অভিনেতাকে দেখে তিনি এত ভয় পেয়েছেন যে, তাঁর স্ত্রী আর মেয়ে এখনও সিরিজ়টাই দেখেননি। অভিনেতার দুঃখ, “বলেছি, এখন তো দেখছিস না। যখন থাকব না তখন হয়তো দেখবি।” নিজে এক দিন রূপটান ভ্যানে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আচমকা ডাক পড়তে ধড়মড়িয়ে উঠে উল্টো দিকে রাখা আয়নায় চোখ। ঘুম চোখে নিজেকে দেখে নিজেই ভয়ের চোটে চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলেন।

বড় সাধ নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল ‘গেনু’!

বড় সাধ নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল ‘গেনু’! ছবি: সংগৃহীত।

দর্শকের আফসোস, তরুণীর সঙ্গে পিশাচের বিয়ে হতে হতেও হল না! ভাদুড়িমশাই ভেস্তে দিলেন। এই দুঃখে পরের পর্বে ‘গেনু’ তাঁর প্রভু তান্ত্রিক ভানুকে (কাঞ্চন মল্লিক) দিয়ে নির্ঘাত ভাদুড়িমশাইয়ের উপর শোধ তুলবে? মুচকি হেসে জবাব দিলেন, “ভাগ্যিস বিয়ে হয়নি! একে স্বামী পর্দায় ‘পিশাচ’। তার উপরে বিয়ে হলে স্ত্রী মনের দুঃখে গৃহত্যাগী হত।”

পল্লবের শুটিংয়ের সময় ছিল গভীর রাত, প্রায় দেড়টা-দুটো। নলবন-সহ বিভিন্ন জায়গায় শুটিং হত। ভয় পেতেন অথবা কোনও অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী?

ফের অট্টহাসি, “আমি নিজেই অন্ধকার ভালবাসি! আবার ভূতের মতো বড় বড় শ্বদন্ত। হাসলে ঝিলিক দেয়। আমাকে সাজাতে গিয়ে রূপসজ্জা শিল্পী বলেই ফেলেছিলেন, ‘আপনিই তো জ্যান্ত ভূত!’” একটু থেমে যোগ করলেন, “সবাই গেনুকে ভয় পায়। গেনুর ভীষণ ভয় মানুষে। ভূত ক্ষতি করবে, এ কথা সকলের জানা। বন্ধুবেশী মানুষ কখন হাসতে হাসতে পিছন থেকে ছুরি মারবে, কে বলতে পারে? ”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE