Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
RG Kar Protest

প্রতিবাদে বিশ্বাসী তাই মিছিলে, কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডে আশাবাদী নন! সুপ্রিম-শুনানির পর অঞ্জন

অঞ্জন রাজনীতিমনস্ক, অস্বীকারের উপায় নেই। একটা সময় শোনা যেত তিনি বামপন্থীও। সেই ভাবনা থেকেই কি তিনি সমাজমাধ্যমে কলম ধরেছেন?

Image Of Anjan Dutt

অঞ্জন দত্তের প্রতিবাদী ইস্তেহার। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৪ ১৭:৪৫
Share: Save:

১৪ অগস্ট মধ্যরাতে প্রথম ‘রাত দখল’-এ তিনি ছিলেন অ্যাকাডেমিতে। রবিবার যখন টলিউড পথে নেমেছিল তখনও ছিলেন তিনি। নীরবে সকলের সঙ্গে পা মিলিয়েছেন। নীরব প্রতিবাদে প্রতি মুহূর্তে মুখর হয়েছেন। এ বার তিনি লিখলেন সমাজমাধ্যমে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রথম শুনানির পর তিনি নিজের মত লিখলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে হেঁটে, সোচ্চারে এবং নীরবে প্রতিবাদ করলেও এখনও খুব আশাবাদী নই।” পরিচালক মৃণাল সেনের ‘মানসপুত্র’ কি এ ভাবেই বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সন্দিহান? নিজের বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন তিনি। দাবি, তাঁর ৭০ বছরের জীবনে দেখা অনেক কিছু আজ তাঁকে এই ভাবনা ভাবতে বাধ্য করেছে।

নিজের ৭০ বছরের অতীতের কথা উল্লেখের পাশাপাশি অঞ্জন ফিরে দেখেছেন ১০ দিনের বেশি আগে ঘটে যাওয়া এক নারকীয় ঘটনাকে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ, খুন এবং তাকে কেন্দ্র করে প্রতি দিন উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। নাগরিকেরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিবাদে শামিল। নারী ন্যায়বিচার চেয়ে মধ্যরাতে পথে। সমর্থন জানিয়ে পুরুষেরাও উপস্থিত। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি লিখেছেন, “শহর থেকে জেলা স্তর হয়ে গ্রাম এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এই জনসমাগম অনিবার্য এবং ন্যায়সঙ্গত।” তিনি রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে জানান, ক্ষমতায় থাকা রাজ্য সরকারের সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনতা এবং অবহেলাকে অস্বীকার করা যায় না। উপেক্ষা করারও উপায় নেই। ফলে, আরজি কর-মামলার হস্তান্তর সিবিআইয়ের হাতে, সুপ্রিম কোর্টে।

প্রথম শুনানিতে ২২ অগস্ট পর্যন্ত সময় চেয়েছে শীর্ষ আদালত। অঞ্জন লিখেছেন, “আমাদের সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে এবং ন্যায়বিচারের আশা করতে হবে। তার মধ্যেই পথসভা, প্রতিবাদী মিছিল চলতে থাকবে। এটাই এখন একমাত্র পদক্ষেপ। কারণ, মানবতা আবারও আহত, রক্তাক্ত।” কিন্তু যাঁরা ‘রাতারাতি পরিবর্তন’-এর পক্ষে তাঁদের সমর্থন জানাতে পারেননি ‘চলো লেটস গো’-র পরিচালক। তাঁর মতে, উচ্ছ্বাসের প্রাবল্যে তাঁরা কেবল ভুলই করছেন না, অনেককে বিভ্রান্তও করছেন। কারণ, বদলাতে সময় লাগে। মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বিভাজন আনে।

অঞ্জন রাজনীতিমনস্ক, অস্বীকারের উপায় নেই। একটা সময় শোনা যেত তিনি বামপন্থীও। সেই ভাবনা থেকেই কি তিনি সমাজমাধ্যমে কলম ধরেছেন?

তারও উত্তর দিয়েছেন তিনি নিজেই। লিখেছেন, “আমি কখনও সমাজকর্মী ছিলাম না, এখনও নই। আমি কোনও রাজনৈতিক দলের মতাদর্শেও বিশ্বাসী নই।” অঞ্জনের বিশ্বাস, যাঁরা সাড়া দিয়েছেন, সমাবেশ করেছেন, প্রতিবাদ জানিয়েছেন— তাঁরা প্রত্যেকে নিজস্ব রাজনীতি বা মূল্যবোধ থেকে মানবিকতাকে সমর্থন জানিয়েই পথে। প্রতি দিন অজস্র মানুষ ‘নিরপেক্ষ’ বিচার চেয়ে ধ্বনি তুলছেন। এর নিজস্ব মূল্য আছে। যা সময় বিচার করবে। এই কণ্ঠস্বর যাতে কোনও ভাবেই কোনও রাজনৈতিক রঙে রঙিন না হয়ে ওঠে, আন্তরিক অনুরোধ তাঁর। বর্ষীয়ান অভিনেতার ডাক, “সময় এসেছে দুর্নীতি ও যে কোনও ধরনের ধর্মান্ধ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।” আর যাঁরা এলোমেলো মন্তব্য করছেন তাঁদেরকে পৃথক পঙ্‌ক্তিতে ফেলেছেন তিনি। অঞ্জনের উপলব্ধি, এঁরা ‘অরাজনৈতিক’। এঁরা আসলে সমাজমাধ্যমের ফয়দা তোলার হুজুগে রয়েছেন। যাতে সারা ক্ষণ চর্চায় থাকেন।

লম্বা বার্তার একেবারে শেষে অঞ্জনের লেখা পড়তে পড়তে এমন হয়, তিনি যেন আর রুপোলি পর্দার খ্যাতনামী কেউ নন। এক স্নেহময় বাবা, স্বামীর কণ্ঠস্বর তাঁর লেখনীতে। তিনি লজ্জায় মাথা নত করেছেন সেই তরুণী চিকিৎসকের কাছে, যিনি অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে, চূড়ান্ত অপমানিত হয়ে অসময়ে ঝরে যেতে বাধ্য হলেন। তাঁর ৭০ বছরের অভিজ্ঞতা তাঁকে বিচার ব্যবস্থার উপরে আশা না রাখার পরামর্শ দিলেও দিনের শেষে তিনিও রক্তমাংসের মানুষ। সেই জায়গা থেকে অঞ্জনের প্রার্থনা, মৃতা যেন সুবিচার পান। তাঁর পরিবারের সঙ্গে যেন ন্যায় হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE