সুপারহিট ছিল ঋতুপর্ণা-অভিষেক জুটি। আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।
রাত্রিবেলা। একটা ঘরে মিঠু জোর করে আমার হাত দুটো চেপে গলার কাছে মুখ নামিয়ে আদর করতে চাইছে। আমি প্রতিবাদ করছি। চিৎকার করছি। কেঁপে উঠছি। বাইরে মণ্ডপ থেকে ভেসে আসছে গান। মিঠুর সেই বিখ্যাত সংলাপ। " আমি তোমার পুরনো আশিক নই..." এমনই সংলাপ ছিল। পুরো ঠিক লিখলাম কিনা জানি না। ঋতুদা থাকলে বলে দিতে পারতো।
এই দৃশ্য বহু পরিচিত। আজও দেখি নেটমাধ্যমে চলে আসে।ঋতুপর্ণ ঘোষের 'দহন' ছবি। আমি আর মিঠু।
সেই কবে থেকে আমাদের সম্পর্ক।সেই মিঠু কী করে এ ভাবে চলে যেতে পারে? টেলিভিশনে আজকাল দেখে বুঝতাম ও শরীরের যত্ন নিচ্ছে না।ঘুম খাওয়া কিছুই ঠিক সময়ে করত না। বরাবর খুব জেদ। নিজে যা ভাল বুঝবে তাই-ই করবে। ওর মনে হয়তো অনেক ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। অনেক না পাওয়ার ক্ষোভ। হয়তো নিজের বিষণ্ণতায় নিজের ক্ষতি করেছে সকলের অগোচরে। জানি না...আজ অনেক দূরে আমি। কিছুই বুঝতে পারছি না।
প্রসেনজিতের পরে সবচেয়ে বেশি ওর সঙ্গে কাজ করেছি। আমাদের জুটি তো সুপার ডুপার হিট! তখন যেখানেই যেতাম লোকে আমাদের কথা বলত। একসঙ্গে দেখতে চাইত।
আমাদের শেষ ছবি ছিল 'নীলাচলে কিরিটী'। ওর চলে যাওয়াটা বাংলা সিনেমায় শূন্যতা সৃষ্টি করবে। মিঠুর মতো অভিনেতারা বাংলা সিনেমার খরার সময় এসে ধরে রেখেছিল এই ইন্ডাস্ট্রিকে। স্বপন সাহার 'সুজন সখী' তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল এই ইন্ডাস্ট্রি।আমার দ্বিতীয় সুপারহিট সিনেমাই কিন্তু 'সুজন সখী'। আমরা দুজনেই ওই ছবি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিলাম।এই ছবি করে গ্রামে গঞ্জে আমাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ওই সিনেমার গান এখনও খোলা মাঠের অনুষ্ঠানে আমায় গাইতে হয়।
অনেকেই বলে কেন আমাদের জুটি জনপ্রিয় ছিল? আসলে ওই সময় মিঠু তখন খুব সুপুরুষ! আজও সেই চেহারাটা মনে আসে আমার। সব মেয়েদের কাছে ক্রমশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল ও। আমাদের রসায়ন পর্দায় দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। কী যে ভাল নাচ করত ও। কিন্তু ওর শেষের সময়ে আমাদের সম্পর্ক রইল না। অনেকদিন কোনও যোগাযোগ নেই আর।
আমার জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত ছবি 'দহন'ও মিঠুর সঙ্গেই করা। মিঠুই ঋতুপর্ণ ঘোষের কাছে আমার নামে খুব প্রশংসা করেছিল। এ কথা আগে কোথাও বলিনি। চলে যাওয়ার পরেই বা কেন বললাম? জানি না। ও আমার ভাল চাইতো। এত ভাল বন্ধুত্ব আমাদের, তবে হঠাৎ ভুল বোঝাবুঝি হল। আমি কিন্তু সবসময়ই ওর সম্পর্কে ভাল কথাই বলেছি। কিন্তু তাও...
কী যে হল! ও আমায় বুঝল না। প্রকাশ্যে এমন কথা বলেছিল আমার সম্পর্কে যা সত্যি নয়। আমি ওর ক্ষতি চাইনি কোনও দিন। ও বুঝতে পারেনি সেটা। সেই না বোঝা নিয়েই কি চলে গেল?
মনে পড়ছে প্রসেনজিৎ-এর পরিচালনাতেও কাজ করেছি আমরা। আমরাই নায়ক-নায়িকা। সেই সিনেমাও হিট।
লিখতে লিখতে খুব মনখারাপ লাগছে। ওর জীবনে মৃত্যু এভাবে চলে আসবে বুঝিনি। এই বয়সে কেন চলে গেল? নিজের দিকে তাকালো না?
মিঠু কিন্তু সব সময় দুঃখ নিয়ে থাকতো, এমনটাও নয়।
বরং ও খুব হাসিখুশি ছিল। সেটে সবার সঙ্গে খুব মজা করত। ওর ব্যবহার খুব বন্ধুসুলভ ছিল। সবাই ওকে খুব ভালবাসত। খুব প্রাণবন্ত ছিল। পরিচালকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতো মিঠু।
মনটা খচখচ করছে আমার। আর তো কথা হবে না মিঠুর সঙ্গে!
আমাদের ভুল বোঝাটা কী রয়ে গেল মিঠু? ও কী সত্যি আর বুঝল না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy