কেকে-র মৃত্যুতে মুকেশের প্রসঙ্গে ফিরলেন অভিজিৎ।
বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক কেকে-র অকালমৃত্যু ঘিরে এখনও তোলপাড় কলকাতা। আঙুল উঠেছে উদ্যোক্তাদের দিকে, মঞ্চের রক্ষণাবেক্ষণে। দোষারোপে মুখ ঢেকেছে বাংলা। পঁচিশ বছর ধরে কলকাতায় অনুষ্ঠান করছেন অভিজিৎ। একাধিক বার অনুষ্ঠান করেছেন নজরুল মঞ্চেও। তিনি কী বলছেন?
প্রশ্ন: কেকে-র মৃত্যু নিয়ে এত বিতর্ক, সত্যিই কি কলকাতা দায়ী?
অভিজিৎ: আসলে এটা একটা চক্রান্ত, বাংলাকে বদনাম করার। কেকে-র মৃত্যু নিয়ে নোংরামো হচ্ছে, রাজনীতি হচ্ছে। এটা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: কেন এ কথা বলছেন?
একটা পুরনো ঘটনার কথা বলি তা হলে। মুকেশজি আর লতাজির অনুষ্ঠান ছিল সে দিন। মুকেশজি অনুষ্ঠান শেষ করে হোটেলে গেলেন আর সেখানেই লুটিয়ে পড়লেন। কই সে দিন তো কেউ স্টেজ নিয়ে কথা বলেনি, উদ্যোক্তাদের দিকে আঙুল তোলেনি!
প্রশ্ন: কলকাতায় তো এত দিন মুম্বইয়ের অনেক শিল্পীই এসেছেন..
অভিজিৎ: মুম্বইয়ের শিল্পীদের কাছে বাংলায় অনুষ্ঠান করতে যাওয়া, বাঙালি দর্শকদের গান শোনানো একটা লোভনীয় ব্যাপার। আমরা অপেক্ষা করে থাকি কবে বাংলায় অনুষ্ঠান করতে যাব। কারণ শিল্পীরা বাংলায় অনুষ্ঠান করে যেমন টাকা পায়, তেমনই সুখ পায়।
প্রশ্ন: নজরুল মঞ্চে তো আপনি অনেক অনুষ্ঠান করেছেন। আপনার অভিজ্ঞতা কী?
অভিজিৎ: আমি ২৫ বছর ধরে নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করছি। তখন তো এত ভাল অবস্থাও ছিল না। বৃষ্টি হলে ভিতরে জল আসত। এসিও ছিল না। তার মধ্যেই অনুষ্ঠান করতাম। আমরা পাওয়ার প্যাক অনুষ্ঠান করি, মাথার উপর চড়া আলো, আওয়াজ, ভিড়, গরম এই সব কিছুর সঙ্গেই আমরা অভ্যস্ত। এতে আমাদের শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না।
প্রশ্ন: কেকে-র মৃত্যুতে নজরুল মঞ্চের ভিড়, ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হচ্ছে। আপনি সহমত?
অতিরিক্ত ভিড় নিয়ে কথা হচ্ছে এখন। আমরা তো চাই আমাদের অনুষ্ঠানে ভিড় উপচে পড়ুক আমাদের গান শুনে লোকে নাচানাচি করুক। ‘ওভার ক্রাউডেড’ নয়, একে ক্রেজ বলে। এটাই তো শিল্পীরা চায়। গান, নাচ, আলোর মধ্যে দরদর করে ঘামি। এটাই আমাদের তৃপ্তি দেয়। এখানে এসি কাজ করছে কী করছে না, সেটা গ্রাহ্য হয় না।
প্রশ্ন: নজরুল মঞ্চ নিয়েও আঙুল উঠছে, তা নিয়ে কিছু বলবেন?
অভিজিৎ: নজরুল মঞ্চ এখন অনেক ভাল হয়েছে। সারা ভারতে অনুষ্ঠানের জন্য সবথেকে ভাল জায়গা বাংলা। এত প্রেক্ষাগৃহ আর কোথাও নেই। নজরুল মঞ্চ তো ওয়ার্ল্ড ক্লাস অডিটোরিয়াম। মুম্বইতে এত জায়গা নেই। মঞ্চে যে ফাইভ স্টার সুযোগ থাকে না, যাঁরা অনুষ্ঠান করেন তারা জানেন।
প্রশ্ন: সবাই তা হলে বাংলাকে, কলকাতাকে এত দোষারোপ করছে কেন?
অভিজিৎ: যারা বাংলায় অনুষ্ঠান করতে যাওয়া নিয়ে কথা বলছে, তারা তো বিয়ে বাড়িতে গাওয়া শিল্পী। ওরা কী বুঝবে মঞ্চ কী! মুম্বইয়ের শিল্পীরা তাদের রোজগারের অর্ধেকটাই কলকাতা থেকে করে।এখন তো কলকাতার রিয়্যালিটি শোতেও মুম্বইয়ের কোন কক্কর, মিকা সিংহদের বিচারক করেছে। সেখানে বাঙালি বিচারক ক'জন থাকে? এরা তো বাঙালি সংস্কৃতিকেই নষ্ট করে দিচ্ছে। আর এখন কেকের মৃত্যুর জন্য বাংলাকে দোষ দিচ্ছে।
প্রশ্ন: বলছেন, গাফিলতি নয়। তবে কি অসুস্থতাই কেকে-র এই পরিণতি ডেকে আনল?
অভিজিৎ: কেকে আর আমার ম্যানেজার এক, ডাক্তারও এক। আমরা দু'জনেই হোমিওপ্যাথিতে বিশ্বাস করি। ওঁর কোনও অসুখ ছিল না। থাকতে পারে না। কারণ শরীর সম্পর্কে কেকে খুব সচেতন ছিল। নিয়মিত ব্যায়াম করত। কোনও নেশা ছিল না ওর। কেকে নিজেও কিছু বুঝতে পারেন নি। যা হয়েছে, তাকে নিয়তি ছাড়া কিছুই বলা যায় না।
প্রশ্ন: পছন্দের নজরুল মঞ্চে কি এ বার নির্ভয়ে আসতে পারবেন? তাড়া করবে না সহকর্মীর মৃত্যু?
অভিজিৎ: আমাকে কালকে ডাকলে কালই যাব অনুষ্ঠান করতে। উদ্যোক্তারা কত কষ্ট করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আবারও বলছি, তাদের এভাবে দায়ী করা ঠিক হচ্ছে না।
প্রশ্ন: অনেকের মতো কি আপনারও দাবি থাকবে জরুরি পরিষেবার?
অভিজিৎ: জরুরি পরিষেবা শুধু শিল্পীদের জন্য নয়, দর্শকদের জন্যও থাকা দরকার। কোনও দর্শকও যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাকে যেন সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মুম্বইয়ের শিল্পীরা তো কলকাতায় অনুষ্ঠান করে অনেক রোজগার করেন, এ বার থেকে সঙ্গে এক জন ব্যক্তিগত চিকিৎসক রাখতে পারেন তো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy